হামাস: যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা জিম্মিদের নিয়ে আলোচনা করব না
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ বলেছেন, যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা জিম্মিদের নিয়ে ইসরায়েলের সাথে কোন আলোচনা করবে না।
“যারা শত্রুপক্ষের বন্দীদের বিষয়ে জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে তাদেরসহ সব পক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে আলোচনা হবে না,” তিনি বলেন।
তারা শুধুমাত্র এই শর্তে আলোচনায় যাওয়ার কথা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল ধারণা করছে যে শনিবার দক্ষিণ ইসরায়েল থেকে অপহৃত হওয়া ১০০ থেকে ১৫০ জনকে হামাস বন্দি করে রেখেছে।
অপরদিকে হামাসের গণহত্যার চালানোর পেছনে ইসরায়েল দায়ী বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি। তিনি বলেছেন: “যারা ইহুদিবাদী শাসকদের উপর হামলার পরিকল্পনা করেছে আমরা তাদের হাতে চুম্বন করি।” তবে তিনি হামাস যোদ্ধাদের হামলার পেছন ইরানের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
- সৌদি আরবের অঘোষিত শাসক – যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান – ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে ফোনে কথা বলেছেন।
- ·ইসরায়েলকে মার্কিন সমর্থন দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ব্লিঙ্কেন বলেছেন “সব জিম্মিদের মুক্তি অবিলম্বে নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।”
- ·ফিলিস্তিনি মৃতের সংখ্যা ৭৫০ ছাড়িয়েছে, আহত চার হাজারের বেশি, জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পশ্চিম তীরে সংঘর্ষে ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত।
- ·ইসরায়েলি মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলি দূতাবাস এই তথ্য জানিয়েছে।
- ·ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ বলছে, ইসরায়েলে এবং গাজা উপত্যকার আশপাশে দেড় হাজার হামাস যোদ্ধার লাশ পাওয়া গেছে।
- ·জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেছেন, ইসরায়েল থেকে অপহরণের পর গাজায় “১০০ থেকে দেড়শ জনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে।”
- ·সোমবার সন্ধ্যায়, হামাস হুঁশিয়ারি দেয় যে যদি ইসরায়েল কোন সতর্কতা ছাড়া বিমান হামলা চালিয়ে যায় তাহলে তারা ইসরায়েল থেকে আটক করা জিম্মিদের হত্যা করবে। তাদের এই হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমা নেতারা।
- ·যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জিম্মিদের নিয়ে আলোচনায় যাবে না বলে জানিয়েছে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ।
- ·রাতভর হামাসের অন্তত ২০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৩৫টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে।
- ·গাজা উপত্যকা জুড়ে এক লাখ ৮৭ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে – এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের ৮৩টি স্কুলে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫শ মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
- · ইউনিসেফ গাজার ভেতরে এবং বাইরে একটি মানবিক করিডোর স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে, কারণ ইসরায়েল জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে গাজার হাসপাতালগুলো।
- ·গাজার জ্বালানি কয়েক দিনের মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে, এতে বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে গাজা উপত্যকা – জাতিসংঘ
- ·ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে মিশরের রাফাহ ক্রসিং বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এটাই অবরুদ্ধ গাজা থেকে মানুষের বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ। এছাড়া ইসরায়েলও গাজার সঙ্গে তাদের সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে।
- ·ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেলের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে এমন উদ্বেগের কারণে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে।
হামাসের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ইসরাইলের হামলা
ইসরায়েলি বিমান বাহিনী জানিয়েছে যে, তারা রাতভর হামাসের অন্তত ২০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। তারা মঙ্গলবারও তারা এই হামলা অব্যহত রেখেছে।
ইসরায়েলের বিমান বাহিনী-আইএএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, তাদের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান রিমাল এবং খান ইউনিস এলাকায় হামলা চালিয়ে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।
সেখানকার একটি মসজিদের ভিতরে অস্ত্রের গুদাম এবং কথিত হামাস কমান্ডারের বাড়ি ছিল বলে দাবি করেছে আইএএফ।
এদিকে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) বলেছে যে, ওই মসজিদটি ছিল জাবালিয়া অঞ্চলে। এই মসজিদকে “অপারেশনাল অ্যাসেট” হিসেবে ব্যবহার করত হামাস।
হামাসের নৌবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তা মুহাম্মদ কাশতার সাথে যুক্ত একটি ভবনও লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল বলে আইডিএফ জানিয়েছে।
ইসরায়েলে গত শনিবার এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এ হামলায় ছোট ও তুলনামূলক সস্তা ড্রোন ব্যবহার করে তারা। এর মধ্য দিয়ে লাখ লাখ কোটি ডলার ব্যয়ে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে হামাস।
হামাসের ড্রোন থেকে বিস্ফোরক ফেলার পর বিস্ফোরণ ঘটে গাজা সীমান্তে ইসরায়েলের একটি প্রতিরক্ষা নজরদারি টাওয়ারে
হামাস যোদ্ধারা প্যারাসুটে মোটর লাগিয়ে বিশেষ কৌশলে সীমানা বেড়া টপকে যান। এই কৌশলে ইসরায়েলের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে চমকে দিয়েছে হামাস।
হামাসের প্রকাশ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গাজা সীমান্তে নজরদারির জন্য ইসরায়েলের তৈরি একটি প্রতিরক্ষা টাওয়ারের ওপর ড্রোন থেকে বিস্ফোরক ফেলা হচ্ছে। ড্রোন থেকে বিস্ফোরকফেলার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের এ নজরদারির ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে।
Gaza |
A successful Hamas drone attack on an Israeli military position (auto-machine gun post) near Nir Am pic.twitter.com/aGMA9KVXMT
— Younis Tirawi | يونس (@ytirawi) October 7, 2023
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ড্রোন কাছাকাছি দূরত্ব থেকে ইসরায়েলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে কিছু একটা ফেলছে। এটা হতে পারে হাতবোমা অথবা বিস্ফোরক। আরও কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, গাজা সীমান্তে ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একই কায়দায় হামলা করা হচ্ছে।
হামাসের ছোট ছোট এই ড্রোন ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সাফল্য বলা যেতে পারে কমপক্ষে একটি মারকাভা মার্ক–৪ ট্যাংক ধ্বংস করা। মারকাভাকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ট্যাংক। ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার সময় এই যুদ্ধযানের স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কাজ করেনি। এই রহস্যের কারণ হলো, এই যুদ্ধযানটির স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা ঠেকানোর জন্য, ড্রোন দিয়ে নিক্ষেপ করা বিস্ফোরকের জন্য নয়।
Hamas drone dropping a bomb on an Israeli Merkava 4 tank
Militaries across the world will have to adapt to the new type of drone warfare that has been demonstrated over the past 18 months in Ukraine
War has yet again changed pic.twitter.com/dY8riSwihD
— Visegrád 24 (@visegrad24) October 7, 2023
Hamas released the footage of their motorized hang glider attack in Gaza. pic.twitter.com/OGj3EHTVK0
— Insider Corner (@insiderscorner) October 7, 2023
‘এটা কীভাবে ঘটল, আমরা ভাবতেও পারছি না’—এত খ্যাতি, নিরাপত্তা ও নজরদারি সরঞ্জাম থাকার পরও ইসরায়েল কেন হামাসের হামলার বিষয়ে আগাম আঁচ করতে পারল না, সেই প্রশ্নে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বললেন, এ নিয়ে আগাম তথ্য পাননি তাঁরা।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, শিন বেত ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর গোয়েন্দাদের কেউই জানত না, হামাস এ ধরনের একটি হামলা করতে যাচ্ছে। ইসরায়েলিদের কাছে এটা খুবই অবাক করার মতো বিষয়। আবার হতে পারে, গোয়েন্দাদের কেউ কেউ হামলার বিষয়ে আগাম তথ্য পেলেও সেই অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তথ্য সূত্র: বিবিসি বংলা, প্রথমআলো, টুইটার