রাজত্ব, সম্মান, ক্ষমতা হলো মহান আল্লাহর নিয়ামত।। তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন, আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা ছিনিয়ে নেন।
রুহুল কুদ্দুস টিটো
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ, আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব প্রদান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন; যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মানিত করেন আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনারই হাতে।নিশ্চয়ই আপনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২৬)
সূরা আল মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন বিধান পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের জন্য আমার নিয়ামতও পূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের জন্য জীবন বিধান হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।’ সূরা আল ইমরানের ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার নিকট (মানুষের জন্য) ইসলামই একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা।’
মুসলমান শাসকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সূরা আল হজের ৪১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন, ‘আমি এ জনপদে যদি (মুসলমান দাবিদার) কাউকে (রাজনৈতিকভাবে) প্রতিষ্ঠা দান করি (বা কোনো মুসলমানকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করি) তাহলে তার (প্রথম) দায়িত্ব হলো সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, (দ্বিতীয়ত) জাকাত আদায় করবে, আর (তৃতীয়ত) জনগণকে সৎকাজের আদেশ দেবে ও অন্যায় আর অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে (অর্থাৎ ন্যায়বিচার, ইনসাফ ও ইহসান প্রতিষ্ঠা করবে), তবে সব কাজের চূড়ান্ত পরিণতি একান্তভাবে আল্লাহ তায়ালারই এখতিয়ারভুক্ত’।
রাসূল মুহাম্মদ সা: মদিনায় হিজরতের পর ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়। সেখানে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা পাওয়ার পর ন্যায়বিচার, ইনসাফ ও ইহসান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খোলাফায়ে রাশেদিনের শাসনামলকে পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণ যুগ বলে অবিহিত করা হয়েছে।
হত্যা ও সন্ত্রাসের বিচার সম্পর্কে সূরা আল মায়েদার ৩২ ও ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন, আমি বনি ইসরাঈলদের জন্য বিধান জারি করেছিলাম, কেউ যদি পৃথিবীতে কাউকে অনর্থক হত্যা করে বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে, সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করল, আবার যদি কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করে সে যেন গোটা মানব জাতিরই প্রাণ রক্ষা করল, এদের কাছে আমার রসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিল তারপরও তারা পৃথিবীতে সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবেই রয়ে গেল। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে (অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার আইন আর রাসূল সা:-এর বিচার ফয়সালা অমান্য করে) পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে তাদের জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি হচ্ছে, ‘হত্যার বিনিময়ে হত্যা’ বা তাদেরকে শূলবিদ্ধ করা অথবা উল্টোদিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা, কিংবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা, এই অপমানজনক শাস্তি তাদের দুনিয়ার জীবনের জন্য, তা ছাড়া আখেরাতে তাদের জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি।
বিচারব্যবস্থা ও বিচারক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা আন নিসার ৬৫ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করছেন, ‘না, (হে নবী!) আপনার মালিকের শপথ, এরা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারে না, যতক্ষণ না তারা তাদের যাবতীয় মতবিরোধের (বিচার) ফয়সালার ব্যাপারে আপনাকে (শর্তহীনভাবে) বিচারক মেনে নেবে, অতঃপর আপনি যে বিচার ফয়সালা দেবেন সে ব্যাপারে তাদের মনে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ থাকবে না, বরং আপনার সিদ্ধান্ত তারা সর্বান্তকরণে মেনে নেবে’।
রাষ্ট্র শাসকের দায়িত্ব হচ্ছে ন্যায়বিচার করা আর জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে শাসকের বিচার ফয়সালা মেনে নেয়া। বিচারের ক্ষেত্রে শাসক জুলুম করলে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, এ কথা শাসককে অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
ন্যায়পরায়ণতা
মহান আল্লাহ নিজেই একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে গোটা সৃষ্টিজগতের সামনে তিনি ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পেশ করবেন। যেমনিভাবে তিনি দুনিয়াতে কারো ওপর সামান্যতম জুলুম করেননি, তেমনি পরকালেও কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণ অবিচার করবেন না। এ ব্যপারে কোরআনে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ কারো ওপর অনুপরিমাণও জুুলুম করেন না।’(সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৪৪)
ন্যায়পরায়ণ শাসকের পুরস্কারযারা ন্যায় ও সততার সঙ্গে ক্ষমতা ও পদের ব্যবহার করেন, আখেরাতে তাদের মহা পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ন্যায়-নীতিবান বিচারক কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তার ডান পাশে দ্যুতিময় মিম্বারের ওপর অবস্থান করবে। অবশ্য আল্লাহ তায়ালার উভয় পাশই ডান। তারা হলো সেসব বিচারক বা শাসক, যারা নিজেদের বিচার-বিধানে, নিজেদের পরিবার-পরিজনে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে।’ (মুসলিম : ১৮২৭ )। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন লোকদের মাঝে ন্যায়নিষ্ঠ শাসকই আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে প্রিয় ও নিকটে উপবেশনকারী হবে।’ (তিরমিজি : ১৩২৯)
স্বৈরাচার শাসকের শাস্তিশাসন-ক্ষমতা গ্রহণের পর যারা স্বৈরাচারিতা করবে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, তাদের জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে। ইহকালেও নেমে আসতে পারে যেকোনো বিপদাপদ।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দাকে যদি আল্লাহ জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে যদি কল্যাণ কামনার সঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (বুখারি : ৭১৫০)।
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি মুসলিম জনসাধারণের দায়িত্ব লাভ করল আর তার মৃত্যু হলো এই অবস্থায় যে, সে ছিল খেয়ানতকারী, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি : ৭১৫১)। অধীনস্থের দুঃখ-কষ্টে সহানুভূতি প্রকাশ করা ও তাদের প্রতি ইনসাফ করা আবশ্যক। কারণ শাসক যখন জুলুম অত্যাচার আরম্ভ করে তখন তার ওপর থেকে আল্লাহর সাহায্যের হাত উঠে যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে পর্যন্ত বিচারক কোনো প্রকার জুলুম না করে সে পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা তার সহায়ক হন। সে যে মুহূর্তে কোনো প্রকার জুলুম করে ফেলে তখন তিনি তাকে পরিত্যাগ করেন এবং শয়তান তাকে জড়িয়ে ধরে।’ (তিরমিজি : ১৩৩০)
ইসলাম সাধারণ মানুষকে শাসকদের ন্যায্য সমালোচনার অধিকার দিয়েছে। শাসকদের নির্দেশ দিয়েছে সাধারণ মানুষের কথা শোনার। তবে রাজনৈতিক প্রতিবাদের নামে সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অবকাশ নেই। ইসলাম উভয় পক্ষকে সংযত ও সহনশীল হতে বলেছে।সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে দলনিরপেক্ষ মানুষেরও দায় আছে।
শাসকদের প্রতি নির্দেশনা
ইসলাম জনসাধারণের প্রতিবাদকে সংযম ও সহনশীলতার সঙ্গে দেখার নির্দেশ দেয়। তাঁরা বিষয়টিকে এভাবে দেখতে পারেন :
১. প্রতিবাদ মানুষের অধিকার : প্রত্যেক নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রের যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার রাখে, বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বৎস! নামাজ কায়েম কোরো, সৎকাজের নির্দেশ দাও আর অসৎকাজে নিষেধ কোরো এবং আপদে-বিপদে ধৈর্য ধারণ কোরো।এটাই তো দৃঢ়সংকল্পের কাজ।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৭)
২. সমালোচনায়ই কল্যাণ : রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমালোচনা ও প্রতিবাদ শাসকদের জন্য কল্যাণকর। কেননা এর মাধ্যমে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রনায়করা নিজেদের ভুল সংশোধনের সুযোগ পান। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ এবং শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অসৎকাজে নিষেধ করে এবং তারা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করে।তারাই সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১৪)
৪. কণ্ঠরোধকারী জালিম : যারা মানুষের ন্যায্যা দাবি শুনতে রাজি নয়, তারা জালিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষত যখন কণ্ঠরোধ করতে ভয়ভীতি দেখানো হয়। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর জাদুকররা সিজদাবনত হলো ও বলল, আমরা হারুন ও মুসার প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম। ফিরাউন বলল, কী, আমি তোমাদের অনুমতি দেওয়ার আগেই তোমরা মুসাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে।…সুতরাং আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেব এবং তোমাদেরকে খেজুরগাছের কাণ্ডে শূলবিদ্ধ করবই এবং তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ৭০-৭১)
৫. বিরোধীদের প্রতি নমনীয় হওয়া : ইসলাম সমালোচকের কঠোর আচরণ ও ভাষার বিপরীতে নম্র আচরণ করতে বলে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা উভয়ে নম্র ভাষায় কথা বোলো। হয়তো সে শিক্ষা গ্রহণ করবে অথবা ভয় পাবে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৪৪)
বিরোধীদের প্রতি নির্দেশনা
ইসলাম রাষ্ট্রকে যেমন সংযত আচরণ করার নির্দেশ দেয়, তেমনি প্রতিবাদকারীকেও নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকার নির্দেশ দেয়। যেমন :
১. সহিংসতা নয় : রাজনৈতিক প্রতিবাদের ক্ষেত্রে প্রতিবাদকারীকে অবশ্যই সহিংসতার পথ পরিহার করতে হবে। কেননা সহিংসতা কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনে না। আল্লাহও সহিংস ও ধ্বংসাত্মক কাজ পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়; আল্লাহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্তদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬৪)
২. জান-মালের ক্ষতি নয় : মুসলমানের জীবন ও সম্পদ অপর মুসলমানের কাছে আমানতস্বরূপ। তাই রাজনৈতিক প্রতিবাদের নামে জনগণের জান-মালের ক্ষতি করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের জীবন, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলমানের জন্য এ শহরে এ দিনের মতোই হারাম (মর্যাদাসম্পন্ন)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৫)
৩. দাবি ন্যায্য হওয়া : বিরোধীপক্ষের দাবি ন্যায্য হওয়া আবশ্যক। ঠিক যেমন কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু যা ঘটার ছিল আল্লাহ তা সম্পন্ন করলেন, যাতে যে কেউ ধ্বংস হওয়ার সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে সে যেন সত্যাসত্য স্পষ্ট প্রকাশের পর জীবিত থাকে। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৪২)
৪. সমঝোতাকে প্রাধান্য দেওয়া : মুসলমানরা পারস্পরিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে সমঝোতার পথকে প্রাধান্য দেবে। সমঝোতার দুয়ার খোলা থাকলে প্রতিবাদ ও বিবাদের পথ পরিহার করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকবে এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভর করবে। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৬১)
৫. মিথ্যাচার ও চরিত্রহরণ নয় : রাজনৈতিক নেতাদের ভেতরে প্রতিপক্ষের চরিত্রহরণের প্রবণতা দেখা যায়, এমনকি তাঁরা মিথ্যাচারেরও আশ্রয় নেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৩৫)
নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব
যখন রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলো পারস্পরিক বিরোধ মেটাতে ব্যর্থ হয়, তখন সমাজের নিরপেক্ষ ও মান্যবর ব্যক্তিরা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন। দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের প্রতি ইসলামের নির্দেশনা নিম্নরূপ :
১. কল্যাণের পথে আহ্বান করা : জাতি ও সমাজের বিবেক হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিরা সমাজ ও রাষ্ট্রকে কল্যাণের পথে আহ্বান করবে। যেমনটি ইরশাদ হয়েছে, ‘নগরীর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ছুটে এলো এবং সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসুলদের অনুসরণ কোরো। অনুসরণ কোরো তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চায় না এবং যারা সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ২১)
২. সংলাপের ব্যবস্থা করা : সংলাপ করা নবী-রাসুলদের বৈশিষ্ট্য। সংলাপের মাধ্যমে গুরুতর রাজনৈতিক সংকট নিরসনের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। কোরআনে ইবরাহিম, মুসা, নুহ (আ.)-সহ একাধিক নবীর সংলাপ বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে, এবং বলো, তোমার কি আগ্রহ আছে যে তুমি পবিত্র হও আর আমি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের দিকে পথপ্রদর্শন করি, যাতে তুমি তাঁকে ভয় করো। (সুরা : নাজিয়াত, আয়াত : ১৭-১৯)
৩. সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া : মুমিনের দায়িত্ব হলো পরস্পর বিবাদে লিপ্ত দুই মুমিনের ভেতর সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ৯)
রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নিষিদ্ধ
ইসলামী শরিয়ত দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভঙ্গ কোরো না।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২৭)
রাজনীতিকদের রাষ্ট্রবিরোধী কাজ গুরুতর অপরাধ
ইসলাম সাধারণভাবে সবাইকে ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তবে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক তাদের বিশ্বাসঘাতকতা বেশি গুরুতর।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী একটি করে পতাকা স্থাপন করা হবে। মুসলিম রাষ্ট্রনায়কের বিশ্বাসঘাতকতার চেয়ে ভীষণ কোনো বিশ্বাসঘাতকতা নেই। তার এই পতাকা তার নিতম্বের কাছে স্থাপন করা হবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২১৯১)
রাষ্ট্রবিরোধী কাজে সমর্থন নিষিদ্ধ
ইসলামে শুধু রাষ্ট্রবিরোধী কাজই নিষিদ্ধ নয়, বরং রাষ্ট্রবিরোধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের সমর্থন করাও নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করো এবং বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক কোরো না।…যারা নিজেদের প্রতারিত করে তাদের পক্ষে বাদ-বিসম্বাদ কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারী পাপীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৫ ও ১০৭)
রাষ্ট্রবিরোধীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নয়
যারা বন্ধুত্বের অঙ্গীকার ভেঙে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়, তাদের সঙ্গে অঙ্গীকার ও বন্ধুত্ব রক্ষা করা আবশ্যক নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তুমি কোনো সম্প্রদায়ের চুক্তি ভঙ্গের আশঙ্কা করো, তবে তোমার চুক্তিও তুমি যথাযথভাবে বাতিল করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ চুক্তি ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আনফাল : ৫৮)
রাষ্ট্রবিরোধীদের প্রতিহত করা আবশ্যক
যখন কেউ রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজে লিপ্ত হয়, তাকে প্রতিহত করা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করলে হাতেব ইবনে আবি বালতা (রা.) ব্যক্তিগত অপারগতার কারণে যুদ্ধের প্রস্তুতির খবর জানিয়ে কুরাইশদের চিঠি লেখেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে চিঠির বাহক নারীকে গ্রেপ্তার করতে আলী ও জুবায়ের (রা.)-কে পাঠান এবং তারা সে নারীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসেন। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ৩৩২)
প্রতিহত না করার ক্ষতি
রাষ্ট্রবিরোধী কাজ সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তা প্রতিহত করা আবশ্যক। কেননা ষড়যন্ত্র দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি করতে পারে। যেমন ইহুদি ষড়যন্ত্র মুসলমানদের আরবের সম্মিলিত আক্রমণের মুখোমুখি করেছিল। সে দিকে ইঙ্গিত দিয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল তোমাদের ওপর দিক থেকে এবং নিচের দিক থেকে, তোমাদের চোখ বিস্ফারিত হয়েছিল এবং ভয়ে তোমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছিল আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানাবিধ ধারণা পোষণ করছিলে, তখন মুমিনরা পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ১০-১১)
আল্লাহ সর্বপ্রকার রাজনৈতিক সংকট থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করুন। আমিন
তথ্য সূত্র: কালেরকন্ঠ