শুভ বড় দিন ।।মেহেরপুরে শুভ বড়দিন উদ্যাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন ।। বড়দিন বা খ্রিস্টমাস বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব কেন
আলাপচারিতা
মেহেরপুরে শুভ বড়দিন উদ্যাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে ২৫ ডিসেম্বর পালিত হবে বড়দিন। ডিসেম্বর শুরু থেকেই মুজিবনগর উপজেলার সবচেয়ে বড় খ্রিষ্টান পল্লী বল্লভপুর গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আলোকসজ্জার মাধ্যমে তৈরি ধর্মীয় প্রতীক স্টার শোভা পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উৎসব পালন করতে গ্রামের বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই।
মেহেরপুরের মুজিবনগরে মোট ১৭টি গির্জা সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বর্ণিল আলোকসজ্জায়, পাশাপাশি রয়েছে ক্রিসমাস ট্রি আর মোমবাতি প্রজ্বালনের আয়োজন। বড়দিনের উৎসব সামনে রেখে গির্জা ও এর আশপাশের খ্রিষ্টান পল্লীগুলোতে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। বড়দিন উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে ইংরেজি নতুন বর্ষবরণের প্রস্তুতিও নিচ্ছে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা। নতুন বছর সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
খ্রিষ্ট ধর্মভীরু মানুষ বিশ্বাস করে যিশুখ্রিষ্ট ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করতে এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর তাই উপাসনালয়ে প্রার্থনায় থাকবে নতুন বছরে সুখ আর সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক আগামীর একটি বছর।
খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই দিনে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করার জন্য যিশুখ্রিষ্ট জন্ম নিয়েছিলেন।
আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’। মেহেরপুর জেলার খ্রিষ্টধর্মের মানুষেরাও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা,ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে দিনটি উদ্যাপন করবেন। ভবেরপাড়া,নিত্যান্দনপুর,চৌগাছা সহ জেলার সকল গির্জায় রোববার সকাল সাতটা ও নয়টায় বড়দিনের প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়।
বড়দিনের প্রার্থনায় শরিক হয়েছিলেন নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ। তারা অভিন্ন কণ্ঠে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে সকল গীর্জা আলোকসজ্জা করা হয়। বাড়িতে বাড়িতে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো, গো-শালা তৈরী, পিঠা তৈরীসহ নানা আয়োজনে খ্রিষ্টান বাড়িগুলো হয়ে উঠবে উৎসবমুখর।
বড়দিন বা খ্রিস্টমাস বা ক্রিসমাস একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব কেন
২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা জানা যায় নি। আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের ঠিক নয় মাস পূর্বে মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। সম্ভবত, এই হিসাব অনুসারেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ ধরা হয়।অন্যমতে একটি ঐতিহাসিক রোমান উৎসব অথবা উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণ অয়নান্ত দিবসের অনুষঙ্গেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশুর জন্মজয়ন্তী পালনের প্রথাটির সূত্রপাত হয়। বড়দিন বড়দিনের ছুটির কেন্দ্রীয় দিন এবং খ্রিষ্টধর্মে বারো দিনব্যাপী খ্রিষ্টমাসটাইড অনুষ্ঠানের সূচনাদিবস।

প্রকৃতিগতভাবে একটি খ্রিষ্টীয় ধর্মানুষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও, একাধিক অ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও মহাসমারোহে বড়দিন উৎসব পালন করে।এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎসবের আয়োজনে প্রাক-খ্রিষ্টীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়ভাবনার সমাবেশও দেখা যায়। উপহার প্রদান, সংগীত, বড়দিনের কার্ড বিনিময়, গির্জায় ধর্মোপাসনা, ভোজ, এবং বড়দিনের বৃক্ষ, আলোকসজ্জা, মালা, মিসলটো, যিশুর জন্মদৃশ্য, এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে বড়দিন উৎসব উদ্যাপনের অঙ্গ। কোনো কোনো দেশে ফাদার খ্রিষ্টমাস (উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আয়ারল্যান্ডে সান্টাক্লজ) কর্তৃক ছোটোদের জন্য বড়দিনে উপহার আনার উপকথাটি বেশ জনপ্রিয়।
উপহার প্রদানের রীতিটিসহ বড়দিন উৎসবের নানা অনুষঙ্গ খ্রিষ্টান ও অ-খ্রিষ্টানদের অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই উৎসব উপলক্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয়ের একটি বিশেষ মরসুম চলে। বিগত কয়েকটি শতাব্দীতে বিশ্বে বিভিন্ন অঞ্চলে বড়দিনের অর্থনৈতিক প্রভাবটি ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে দেখে গেছে। ভারত ও বাংলাদেশে বড়দিন একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।
খ্রিস্টমাস বাংলায় “বড়দিন” ব্যুৎপত্তি
ইংরেজি খ্রিস্টমাস (Christmas) শব্দটি “খ্রিস্টের মাস (উৎসব)” শব্দবন্ধটির যুগ্ম অর্থ থেকে উৎসারিত। শব্দটির ব্যুৎপত্তি ঘটে মধ্য ইংরেজি Christemasse ও আদি ইংরেজি Cristes mæsse শব্দ থেকে। শেষোক্ত শব্দটির প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় ১০৩৮ সালের একটি রচনায়। “Cristes” শব্দটি আবার গ্রিক Christos এবং “mæsse” শব্দটি লাতিন missa (পবিত্র উৎসব) শব্দ থেকে উদগত। প্রাচীন গ্রিক ভাষায় Χ (চি) হল Christ বা খ্রিষ্ট শব্দের প্রথম অক্ষর। এই অক্ষরটি লাতিন অক্ষর X-এর সমরূপ। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে তাই এই অক্ষরটি খ্রিষ্ট শব্দের নামসংক্ষেপ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু হয়।এই কারণে খ্রিষ্টমাসের নামসংক্ষেপ হিসেবে এক্সমাস কথাটি চালু হয়।
আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধানে যিশু খ্রিষ্টের জন্মোৎসব উৎসবটিকে বাংলায় বড়দিন আখ্যা দেওয়ার কারণটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে: “২৩ ডিসেম্বর থেকে দিন ক্রমশ বড়ো এবং রাত ছোটো হতে আরম্ভ করে”।
এটিকে বাংলায় “বড়দিন” নামকরণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন,
“মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন।” “যিশু যেহেতু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন, বিশ্বব্যাপী বিশাল অংশের মানুষ তার দেয়া ধর্ম ও দর্শনের অনুসারী। যিনি এতো বড় ধর্ম ও দর্শন দিলেন ২৫শে ডিসেম্বর তার জন্মদিন। সে কারণেই এটিকে বড়দিন হিসেবে বিবেচনা করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ।”
তিনি আরো বলেন,
“আঠারো ও উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা এসে এ অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করে। যারা ধর্মটি গ্রহণ করেছেন তাদের কাছে এটি আরও মহিমান্বিত বিষয়।” “বাঙালি যারা খ্রিস্টান তাদের অধিকাংশই এই ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছেন। তারা ভাবেন যিশু এমন একজন যিনি তাকে ধর্ম দিয়েছেন। তাই তার জন্মদিনটাই তারা সব আবেগ দিয়ে পালন করেন। এ কারণেই দিনটি তাদের কাছে বড়দিন হিসেবে বিবেচিত।”
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া