নূরে আলম সিদ্দিকী
নূরে আলম সিদ্দিকী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০-১৯৭২ মেয়াদে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হয়েছিলেন। তাকে শেখ মুজিবর রহমানের চার খলিফার জেষ্ঠজন বলা হতো।
(২৬ মে ১৯৪০ – ২৯ মার্চ ২০২৩)বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালীন যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
নূরে আলম সিদ্দিকীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৬শে মে। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়। তাঁর পিতার নাম নূরুন্নবী সিদ্দিকী এবং মাতার নাম নূরুন্নাহার সিদ্দিকী। তাঁর পিতা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তাঁদের পরিবার যশোর জেলার ঝিনাইদহে চলে আসে এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে।
নূরে আলম সিদ্দিকীর প্রাথমিক শিক্ষা মুর্শিদাবাদ জেলার কবন্দি গ্রামের স্কুলে। তিনি ঝিনাইদহ মডেল হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং কেশবচন্দ্র পাল (কে.সি পাল) কলেজ খেকে ১৯৬২ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে বি.এ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন।
পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মধ্যে নূরে আলম সিদ্দিকী রেড়ে ওঠেন। স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু। তিনি ১৯৬২ সালে শরীফ শিক্ষা কমিশন ও ১৯৬৪ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টবিরোধী আন্দোল, ৬ দফা ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এ আইয়ুববিরোধী গণঅভূত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ থেকে ২৫ শে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আহবানে পূর্ব বাংলার সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। ৬-দফা আন্দোলনকালে তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য কারাবরণ করেন। ১৯৭০-৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭১ সালের মার্চের শুরুতে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’-এর তিনি আহবায়ক ছিলেন। তিনি ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ঐ সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার তার বক্তৃতা প্রচারিত হয়।
নূরে আলম সিদ্দিকী উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং বামপন্থী রাজনীতির ঘোর বিরোধী ছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত পাল্টা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মূল আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। উল্লেখ স্বাধীনতা-উত্তর ক্রমশ তিনি ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েন।
নূরে আলম সিদ্দিকী ২৯ মার্চ ২০২৩ রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃৃত্যুবরণ করেন।তাঁরই নির্মিত সাভারের একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর মৃতদেহ সমাহিত করা হয়।