শেখ হাসিনার পতনের পিছনে ।। কোটা আন্দোলন নিছক ছাত্র আন্দোলন হিসেবে মানতে নারাজ কূটনৈতিক মহল
কোটা বাতিলের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল হঠাৎ তা মোড় ঘুরে পতন ঘটালো বাংলাদেশ সরকারের। শেখ হাসিনাকে বাধ্য করা হলো দেশ ছাড়তে। তবে এই ঘটনাকে নিছক ছাত্র আন্দোলন হিসেবে মানতে নারাজ কূটনৈতিক মহল। গোয়েন্দা সূত্রেও জানা যাচ্ছে, পদ্মা পাড়ের দেশে যে নিখুঁত ষড়যন্ত্রের জাল রচিত হয়েছিল তার পিছনে মূল মাথা চিন ও পাকিস্তানের আইএসআই। উদ্দেশ্য, বাংলাদেশে ভারত বিরোধী সরকার গড়া।
বাংলাদেশজুড়ে যে ব্যাপক হিংসাত্মক কার্যকলাপ চলছে তার নেপথ্যে রয়েছে জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবির (ICS)। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মতে, যে কোনও মূল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ সরকারকে হঠাতে চেয়েছিল পাকিস্তান। ভারতকে বিপাকে ফেলতে বেজিংয়ের সঙ্গে হাত মেলায় ইসলামাবাদ। চলতি বছরের শুরুতেই ব্যাপক আর্থিক সাহায্য পেয়েছিল আইএসআই সমর্থিত জামাত-ই-ইসলামি। এই টাকার একটি বড় অংশ এসেছিল পাকিস্তানে পরিচালিত চিনা সংস্থাগুলির থেকে বা সরাসরি বেজিং থেকে।
কেন হাসিনা গদিচ্যুত করতে চেয়েছিল চিন?
চিনের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। চিনের বিনিয়োগেই তৈরি হয় পদ্মা সেতু। বাংলাদেশে পরিকাঠামো নির্মাণে একাধিক প্রকল্পে কাজ করছে চিনা সংস্থাগুলি। কিন্তু কূটনীতির নিয়ম মেনে প্রতিবেশী তথা বন্ধু ভারতকেই বরাবর অগ্রাধিকার দিয়েছেন মুজিবকন্যা। বেজিংয়ের চাপ থাকলেও ভারত বিরোধী শক্তিগুলিকে প্রশ্রয় দেননি তিনি। তাই ড্রাগনের রোষে পড়ে আওয়ামি সরকার। বেজিং চাইছে, ঢাকায় ভারত বিরোধী পুতুল সরকার বসিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করা। সেই লক্ষ্যে জামাতকে হাতিয়ার করে মাঠে নামে দুই দেশ। বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতে জেহাদি প্রচার-সহ ভারত বিরোধী কার্যকলাপের জেরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নজরদারিতে ছিল ইসলামি ছাত্র সংগঠন। তখনই প্রকাশ্যে আসে প্রতিবেশী দেশে বড়সড় ষড়যন্ত্রের জাল রচিত হচ্ছে।
গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবী করা হচ্ছে, বাংলাদেশের ইসলামি ছাত্র সংগঠন আইএসআই সমর্থিত হরকাত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামি (হুজি), ও পাকিস্তানের আরও এক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষ ও অশান্তি ছড়ানোর কাজ চালিয়ে গিয়েছে। এই কাজে ছিল চিনের প্রত্যক্ষ মদত। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে এই ইসলামি ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণও হয়েছে। তার প্রমাণও রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে।
জামাত ও ইসলামি ছাত্র সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে তালিবানের মত কোনও সরকার গঠন করা। বাংলাদেশের কট্টরপন্থী সংগঠনকে এই কাজে পূর্ণ মদত দেয় পাকিস্তান। আন্দোলনের শুরু থেকেই ইসলামী ছাত্র সংগঠন ‘গণতন্ত্র’ ও ‘মানবাধিকার রক্ষা’র দোহাই দিয়ে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির সহানুভূতি কুড়িয়ে নেয়। এর পর ধাপে ধাপে চলতে থাকে বাকি কাজ।
হাসিনা সরকারের পতনে ‘স্বাধীনতা’ বলে যে দাবি বাংলাদেশে করা হচ্ছে মাত্র কয়েক ঘণ্টাতেই তার ছবিটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার পর বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার খবর আসছে।
তথ্যসূত্র: সংবাদ প্রতিদিন