মিথ্যার ভয়াবহতা
রুহুল কুদ্দুস টিটো
সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, আর মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে। এ জন্য ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্যের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়। মিথ্যার অনুসরণ ও সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
‘মিথ্যা সব পাপের জননী’ (বুখারি)। স্বরচিত মিথ্যাকে ‘ইফতিরা’ বলা হয়। তথ্য যাচাই-বাছাই না করে অসত্য তথ্য বা ভুল সংবাদ প্রচার করাও মিথ্যার শামিল এবং প্রচারকারী ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হিসেবে পরিগণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মানুষ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শুনে (সত্যাসত্য যাচাই না করে) তাই বলতে বা প্রচার করতে থাকে’ (বুখারি)। কোনো মিথ্যাবাদী কখনো প্রকৃত মুমিন হতে পারে না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শপথ সেই মহান সত্তার! যার হাতে আমার প্রাণ। দুনিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংস হবে না (তার পূর্বে) মানুষের প্রতি এমন একসময় আসবে; হত্যাকারী জানবে না সে কেন হত্যা করছে আর নিহত ব্যক্তি জানবে না তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে। বলা হলো: সেটা কীভাবে হবে? বললেন: হারাজ (গুজব, হুজুগ, অলীকতা, বিবেকহীনতা, মূর্খতা, নির্বুদ্ধিতা, অন্যায় হত্যা, বিচারহীনতা ও সত্য মিথ্যার মিশ্রণ ইত্যাদি) এর কারণে’ (মুসলিম: ৩৯০৮)। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের আগে ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, ভূমিকম্প বেশি হবে, সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে, ফিতনা প্রকাশ হবে, হত্যাকাণ্ড-খুনখারাবি বেড়ে যাবে, সম্পদের আধিক্য হবে’ (বুখারি: ১০৩৬)।
সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! তখন কি মানুষের বুদ্ধি–বিবেক থাকবে না?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘না। সে সময় মানুষ বিবেকশূন্য হয়ে যাবে এবং মনে করবে সে-ই সঠিক, আসলে তা নয়’ (মুসনাদে আহমাদ: ৩২: ৪০৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের আলামত হলো ‘হারাজ’! বলা হলো ‘হারাজ’ কী? তিনি বললেন, ‘মিথ্যা ও হত্যা। এই হত্যা হবে অজ্ঞতাপ্রসূত, স্বার্থপরতায় এবং খামখেয়ালিপনায়’ (ফাতহুলবারি-১৩: ৩৪)।
নবিজির নবুয়তি যুগে আহলে কিতাবের অনুসারীরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মেশাতো, সত্য বিষয় গোপন করতো। এটি না করার জন্য আল্লাহ তাআলা কোরআনে পাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ স্বভাব ছিল ইয়াহুদি ও নাসারাদের। এ স্বভাবের লোক এখনও আছে; তাদের জন্য এ আয়াতটি
আহলে কিতাবের অনুসারীরা তাওরাতের কিছু নির্দেশ মেনে চলতো; আর কিছু নির্দেশ অস্বীকার করতো। তাওরাতে নবিজির যেসব গুণাগুণ এসেছে তা গোপন করতো। নবিজির ব্যাপারে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী এসেছে তা প্রকাশ করতো না। এ কারণে মহান আল্লাহ বিষয়টি তুলে ধরে ঘোষণা করেন-
وَ لَا تَلۡبِسُوا الۡحَقَّ بِالۡبَاطِلِ وَ تَکۡتُمُوا الۡحَقَّ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
‘তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪২)
‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যেসব গুণাগুণসহ অনুরূপ যা কিছু তারা গোপন করেছে এবং মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। এর বর্ণনায় পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তবে কি তোমরা কিতাবের কিছুর উপর ঈমান আন, আর কিছুর সঙ্গে কুফরি (অস্বীকার) করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৫)
ইসলাম সত্যের অনুসরণের আগে, তা অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যেন অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বসো এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ৬)
আল্লাহ সবাইকে সত্যের অনুসারী হওয়ার তাওফিক দিন।