মোবাইল হলো বর্তমান সময়ের মানুষের কাছে একটি অপরিহার্য ইলেকট্রিক যন্ত্র । এর মাধ্যমে বর্তমানে সব ধরনের যোগাযোগ করা সম্ভব এবং এটি পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া যায় এবং পৃথিবীর অপর প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা যায় ।
মোবাইল ফোন-এ কথা বলার জন্য বেতার তরঙ্গের সঙ্গে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ফলে কথা বলার অতিরিক্ত অন্যান্য সেবা প্রবর্তন করা সম্ভব হয়েছে, যেমন: খুদে বার্তা -এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ সেবা, এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সেবা, ই-মেইল সেবা, ইন্টারনেট সেবা, অবলোহিত আলো বা ইনফ্রা-রেড, ব্লু টুথ সেবা, ক্যামেরা, গেমিং, ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক ব্যবহারিক সফটওয়্যার ইত্যাদি। যেসব মোবাইল ফোন এইসব সেবা এবং কম্পিউটারের সাধারণ কিছু সুবিধা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্টফোন নামে ডাকা হয়।
বতর্মান বিশ্বকে সহজেই দুই ভাগে ভাগ করা করা যায়—একটি বাস্তব দুনিয়া, আরেকটি ভার্চ্যুয়াল বা অনলাইন জগৎ। মানুষের অগ্রগতিতে ইন্টারনেট এমনই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে যে প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে একক মানুষ, অনলাইন ছাড়া এক মুহূর্তও ভাবতে পারছে না, ডিজিটাল দুনিয়ায় পাঁচ মিনিটের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দিলে থমকে যাবে পুরো পৃথিবী।
প্রতি মিনিটে ইন্টারনেটে কোটি কোটি তথ্য বা ইউজার ডেটা আদান-প্রদান হচ্ছে। তাই সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি না জানলেই নয়।
দেশের সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক জেনিফার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যবহার করা নিত্যদিনের প্রয়োজন বা অভ্যাস হলেও মানুষ এখনো একে হালকাভাবেই নিয়ে থাকে। ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগ অসতর্কভাবে ইন্টারনেটে বিচরণ করে থাকে। ফলে সাইবার অপরাধীদের জন্য ব্যবহারকারীদের ক্ষতি করা সহজ।’
বর্তমানে সাইবার অপরাধীদের প্রধান লক্ষ্য হলো তারকা, উদ্যোক্তা ও মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষতি করা বা তাঁদের তথ্য চুরি করা। এতে করে হ্যাকাররা লাভবান হয়ে থাকে এবং তাদের উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে জানান জেনিফার আলম। তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ ও সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে বাঁচার প্রথম ও প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে সতর্ক থাকা ও সাইবার সচেতনতামূলক জ্ঞান বাড়ানো।
সাইবার নিরাপত্তা–গবেষক রাইয়ান মালিক বলেন, ‘সাইবার-জগতে নিরাপদে থাকার প্রথম ও প্রধান হাতিয়ার হলো সচেতন থাকা। পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই কিছু বিষয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। যেমন স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও ব্যবহৃত যন্ত্রের অপারেটিং সিস্টেম হালনাগাদ করে রাখা, অচেনা ও সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক না করা, জরুরি তথ্যের ব্যাকআপ রাখা, সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ছাড়া কোনো কিছু না নামানো ইত্যাদি।’
অনলাইনে নিরাপদ থাকতে জেনিফার আলমের কিছু পরামর্শ:
- অচেনা ও সন্দেহজনক ওয়েবসাইটে ক্লিক না করা।
- সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ছাড়া কোনো কিছু ডাউনলোড না করা।
- জরুরি ডেটার ব্যাকআপ রাখা।
- ব্যবহৃত যন্ত্রের অপারেটিং সিস্টেমস ও সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা।
- চোরাই সফটওয়্যার ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
- গণ বা পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সতর্ক থাকা। যদি জরুরি কাজে করতেই হয়, তবে ভিপিএন কানেক্ট করে অ্যাডাল্ট ও পর্নো সাইট ভিজিট করা যাবে না।
- ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা।
- সঠিক ঠিকানার বাইরে থেকে আসা স্প্যাম মেইল না খোলা, পাশাপাশি নতুন প্রাপ্ত মেইলগুলোর ই–মেইল ঠিকানা যাচাই করতে হবে।
- অ্যান্টিভাইরাসের রিয়েলটাইম, প্রোটেকশন ও অ্যাকসেস কন্ট্রোল সার্ভিসটি সব সময় সচল রাখা।
- নিয়মিত অ্যান্টিভাইরাস হালনাগাদ করা।
ব্যবহৃত কম্পিউটার ও ডিজিটাল ডিভাইসে পেনড্রাইভসহ যেকোনো ইউএসবি ডিভাইস সংযুক্তিতে সতর্ক থাকা।
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ও ব্যবহৃত অন্যান্য অ্যাকাউন্টসমূহে দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সচল রাখা।
- বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে রিকভারি ই-মেইল ও ফোন নম্বর যুক্ত রাখা।
- যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো বিজ্ঞাপনে ক্লিক না করা।
- ওয়েবসাইট নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের ত্রুটি যাচাই করা, সার্ভারের নিরাপত্তা সেবা ও ফায়ার ওয়াল সচল রাখা।
- সাইবার অপরাধের শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা।
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো