সিরিয়া ও ইরাকে ৮৫ এর বেশি ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী
ড্রোন হামলায় নিহত মার্কিন সেনার শেষকৃত্যে জো বাইডেন
সিরিয়া ও ইরাকে ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পরিকল্পনার অনুমোদনের একদিন পরেই তার কার্যকর করল যুক্তরাষ্ট্র। আজ শনিবার বিবিসির লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়া ও ইরাকে ৮৫ এর বেশি ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী।
এই হামলায় বিভিন্ন ধরনের মার্কিন যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। যার মধ্যে দীর্ঘ পাল্লার বোমারু বিমানও ছিল। বিবিসি বলছে, সাতটি জায়গায় এসব হামলা চালানো হয়েছে। এরমধ্যে সিরিয়ায় চারটি জায়গায় এবং ইরাকে তিনটি জায়গায়। দেশ দুইটিতে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) এলিট বাহিনী কুদস ফোর্স এবং তাদের সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর স্থাপনায় লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
এই হামলায় বিভিন্ন ধরনের মার্কিন যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। যার মধ্যে দীর্ঘ পাল্লার বোমারু বিমানও ছিল। বিবিসি বলছে, সাতটি জায়গায় এসব হামলা চালানো হয়েছে। এরমধ্যে সিরিয়ায় চারটি জায়গায় এবং ইরাকে তিনটি জায়গায়। দেশ দুইটিতে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) এলিট বাহিনী কুদস ফোর্স এবং তাদের সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর স্থাপনায় লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
যেসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হয়েছে তার মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, সামরিক রসদভান্ডার এবং ড্রোন স্টোরেজ ইউনিট মার্কিনও ছিল। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব হামলাকে সফল হিসেবে দাবি করা হয়েছে। এই হামলায় ৩০ মিনিট সময় লেগেছে বলে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আজ থেকে আমাদের জবাব দেওয়া শুরু হয়েছে। এটি এখন আমাদের পছন্দমতো বিভিন্ন সময় ও স্থানে অব্যাহত থাকবে।
তবে মার্কিন বাহিনীর এসব হামলা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে- তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার পরিমাণও অনেক বেড়েছে। ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথি লোহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজের হামলা চালানো শুরু করে। তারা মার্কিন জাহাজ ও ব্রিটিশ জাহাজে হামলা চালানোরও দাবি করেছে।
এর জবাবে ইয়েমেনে যৌথ হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এর মধ্যে গত ২৮ জানুয়ারি জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলায় তিনজন মার্কিন সেনা নিহত ও ৪০ জন আহত হয়।
এই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ইরান তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর গত বৃহস্পতিবার ইরাক ও সিরিয়া ইরানি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনার অনুমোদন দেয় বাইডেন প্রশাসন, শেষমেশ গতকাল শুক্রবার তা কার্যকর করে দেশটি।
অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি শুক্রবার বলেছেন, ইরান যুদ্ধ শুরু করতে চায় না তবে কেউ আঘাত করতে এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে। তাই ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানি স্থাপনায় মার্কিন এ হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঝনঝনানি আরও বাড়ল।
রোববারের হামলার পর থেকে ধারণা করা হচ্ছিল যে কোন সময় যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা হামলায় যেতে পারে। তবে সরাসরি ইরানের মাটিতে বা লোহিত সাগরে থাকা ইরানের কোন যুদ্ধজাহাজে হামলা করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সিরিয়া ও ইরাক মিলিয়ে ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “মার্কিন বাহিনীর উপর হামলা আমি সহ্য করবো না। যুক্তরাষ্ট্র, আমাদের বাহিনী ও আমাদের স্বার্থ রক্ষায় যা যা করতে হয় সবই করবো।”
মোট সাতটি অঞ্চলে এই হামলাগুলো হয়েছে, যার চারটি সিরিয়ায় ও তিনটি ইরাকে।যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি জানিয়েছেন, “এটা কেবল তাদের পাল্টা হামলার প্রথম পর্ব।”তিনি আরও জানান গত ২৮শে জানুয়ারির পর থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোন ধরণের যোগাযোগ হয় নি।
গত কিছুদিন ধরেই এই পাল্টা হামলা হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তারবার্তা পাঠানো হচ্ছিল। যাতে করে আসলে ইরান ও তার সহযোগীদের বড় ধরণের হতাহতের ঘটনা এড়ানোর সুযোগ দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে এর তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসম্যান বায়রন ড্যানিয়েলস অনলাইনে লিখেছেন, “এই হামলা সেদিনই হওয়া উচিত ছিল যেদিন আমাদের কর্মী মারা যায়।”
অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞেরও মত যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা হামলা করতে অনেক দেরি করে ফেলেছে। যদিও পেন্টাগন বলছে আবহাওয়ার জন্য তাদের দেরি করতে হয়েছে।
“তবে এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আসলে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা ইরানে কোন হামলা করবে না,” বিবিসিকে বলেন অ্যারাবিয়ান গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউট অফ ওয়াশিংটনের ফেলো হুসেইন ইবিশ।
বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস বলছেন, হোয়াইট হাউজ এই হামলায় একটা বার্তা দিতে চেয়েছে – ইরান ও তার সহযোগিদের সতর্কবার্তা দিয়ে বলছে যুক্তরাষ্ট্রের কোন সামরিক ব্যক্তি মারা গেলে ছেড়ে দেয়া হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিবৃতিতে এই হামলায় সিরিয়া ও ইরাকের ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পাশাপাশি ১২৫টি যুদ্ধ সরঞ্জাম ও দূর পাল্লার বোমারু বিমান ব্যবহারের কথা জানিয়েছে।
ইরান আগেই জানিয়েছিল তাদের উপর বা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন কিছুর উপর হামলা হলে তার কড়া জবাব দেয়া হবে।
এখন সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মি. বাইডেন ইরানের মাটিতে হামলা না করে, ইরানের ব্যক্তি বা মিত্রদের উপর হামলা বাড়াতে চান কি না এবং তা সংঘাত আরও বাড়িয়ে দেবে কি-না সেটাই দেখার।
চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের কথা আছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের। ৪ থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি তিনি সৌদি আরব, মিশর, কাতার, ইসরায়েল ও পশ্চিত তীর সফর করবেন। গত ৭ই অক্টোবরের পর এই অঞ্চলে এটি তার পঞ্চম সফর।