সেনাবাহিনী মাঠে নামবে ২৯শে ডিসেম্বর থাকবে ১৩ দিন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৩ দিন মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনী। ২৯শে ডিসেম্বর মাঠে নেমে ১০ই জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ-র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও আনসার ব্যাটালিয়ন ওই ১৩ দিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন সামনে রেখে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এসব কথা জানানো হয়।
পরিপত্রে বলা হয়, প্রতি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর ১৫ থেকে ১৭ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবে। স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনী। ভোটের আগে-পরের ১৩ দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী ‘মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আনসার ব্যাটালিয়ন সহযোগী ফোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ দলে দায়িত্ব পালন করবে। আনসার-ভিডিপিসহ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সদস্যরা ভোটের আগের দুইদিন ও পরের দুইদিন মিলিয়ে পাঁচদিন নিয়োজিত থাকবেন।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় মহানগর এলাকা, মহানগর এলাকার বাইরে ও পার্বত্য এবং দুর্গম এলাকার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ১৭ জন পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা চাইলে সংখ্যা বাড়াতে বা কমাতে পারবেন।
আগামী ৬ই জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৭ই জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সি, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল করতে পারবে না বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়, সারা দেশে ৫ই জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে ৮ই জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
নির্বাচনে প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন ও অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচনী এজেন্টদের জন্য উপরে বর্ণিত নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না। তবে পর্যবেক্ষক ও পোলিং এজেন্টদের জন্য যানবাহনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত স্টিকার ব্যবহার করতে হবে। জাতীয় হাইওয়ে সমূহের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত কেউ বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করতে পারবেন না। কেবল জরুরি প্রয়োজনীয় বাহন ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমতি পাওয়া যান চলাচল করতে পারবে। ভোট গ্রহণ শুরুর আগের ৪৮ ঘণ্টা ও পরের ৪৮ ঘণ্টা মিছিল-মিটিং ও শোভাযাত্রা করা যাবে না।
নির্বাচনে যেসব দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী: নির্বাচন উপলক্ষ্যে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য ২৯শে ডিসেম্বর থেকে ১০ই জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
যেসব দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী: ১। ফৌজদারি কার্যবিধি ও অন্যান্য আইনের বিধান অনুসারে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ারের ৭ম ও ১০ম অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
২। রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা/থানায় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনী অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করবে।
৩। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা/উপজেলা/মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
৪। রিটার্নিং অফিসার বা প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদার প্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে।
৫। সশস্ত্র বাহিনীর টিমের সঙ্গে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করা হবে এবং আইন, বিধি ও পদ্ধতিগতভাবে কার্যক্রম গৃহীত হবে।
৬। উপকূলবর্তী এলাকায় নৌবাহিনী প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে।
৭। ঝুঁকির বিবেচনায় রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা কম/বেশি করা যাবে।
৮। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়কসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
৯। বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয়সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও বাহিনীসমূহের অনুরোধে উড্ডয়ন সহায়তা প্রদান করবে।
১০। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশনা অনুসারে এলাকাভিত্তিক মোতায়েন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে।
১১। বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার এর অনুরোধক্রমে চাহিদামতো আইনানুগ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন হচ্ছে কেন?
বিবিসি বলছে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এজন্য সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে তারা কাজ শুরু করতে পারবে।
সাধারণত নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য । অতীতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে কাজ করেছে।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন হচ্ছে কেন? এ প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষকরা।
“এই নির্বাচনটাকে তো মানুষ গ্রহণ করতে পারছে না। এটার প্রস্তুতিটাই এমন যে সাধারণ মানুষ থেকে বড্ড বিচ্ছিন্নভাবে জিনিসটা ঘটছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ।
“অতীতের নির্বাচনে আমরা সেনাবাহিনী চেয়েছি। কারণ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে রক্ষা করতে পারে,” একথা উল্লেখ করে শারমীন মুরশিদ বলেন, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
তিনি বলেন, পুলিশ এবং প্রশাসনসহ সহ সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রেণে। নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশ নিচ্ছেনা।
“সেনাবাহিনী কাকে দমন করবে সেটা আমি বুঝে উঠতে পারছিনা। ভায়োলেন্স কোথা থেকে আসবে, কে করবে কার ওপরে?” প্রশ্ন তোলেন শারমীন মুরশিদ।
কর্মকর্তারা মনে করেন, ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেন সেজন্য নিরাপদ পরিবেশ থাকা জরুরি।
“আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। কিন্তু কোন কারণে অবনতি হলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে ভয় পাবে,” বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারি রিটার্নি অফিসার।
নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ দেখাতে ক্ষমতাসীন দল চাইছে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে।
মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, নির্বাচনের আগের কয়েকদিন বেশ স্পর্শকাতর। কেন্দ্রে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া নির্বাচনের দিন তো রয়েছেই।
“সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়,” বলছিলেন ঢাকার কাছে কর্মরত একজন সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ক্ষমতাসীন দল সম্ভাব্য সহিংসতার জন্য বিরোধী দল বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করছে।
“তারা অধিকাংশ তো মাঠেই নেই। তারা কতখানি শক্তি সঞ্চয় করে এতোবড় সহিংসতা করবে যে সেখানে সেনাবাহিনী প্রয়োজন হবে? এটা আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট না, ” বলেন শারমীন মুরশিদ।