সোমালিয়ার জলদস্যু ও সতর্কতা
ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ সালেহ
আমি আমার সী ক্যারিয়ারে অনেকবারই হাই রিস্ক এরিয়া রেড সী,গার্লফ অফ এডেন, এরাবিয়ান সী অতিক্রম করেছি। অত্র এলাকায় মাঝে মাঝে বাণিজ্যিক জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়। জলদস্যুরা জাহাজে উঠতে পারলে তারা জাহাজটিকে নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়ে নেয় এবং মুক্তিপণ আদায় করে পরবর্তীতে জাহাজ এবং নাবিকদের ছেড়ে দেয়। সোমালি জলদস্যুরা সাধারণত লোডেড জাহাজ এবং অপেক্ষাকৃত কম স্পিডের জাহাজ কে টার্গেট করে। এই হাই রিস্ক এরিয়াটি পার হওয়ার জন্য বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
আমরা এই হাই রিস্ক এরিয়া জাহাজ নিয়ে পার হওয়ার সময় আর্মড গার্ড নিয়ে পার হয়েছি। আর্মড গার্ড জাহাজে থাকলে অনেকটা নিরাপদেই এই বিপদজনক জায়গাটি পার হওয়া যায়। এছাড়াও কাঁটাতার বা রেজার ওয়ার দিয়ে জাহাজের চারিদিক ঘিরে ফেলতে হয়। জাহাজের চারিদিকে ফায়ার হোস রিগ করে পানি স্প্রে আকারে চালিয়ে রাখতে হয়। আমরা জাহাজের চারিদিকে মানুষের ডামিও লাগিয়েছি যাতে দূর থেকে মনে হয় জাহাজের নাবিক পেট্রোলিং এ আছে। এছাড়াও এই জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় মেক্সিমাম স্পিডে জাহাজটি পরিচালনা করা হয়। হাই রিস্ক এরিয়াতে ঢোকার আগেই ইউকেএমটিও এবং কোম্পানিকে রিপোর্টিং করতে হয়,সিকিউরিটি ড্রিল এবং ট্রেনিং করতে হয়। পুরাপুরি আই সি এস পাবলিকেশন BMP5 অনুসরণ করতে হয়।
এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নাবিকদের পাইরেসি ওয়াচ। এই হাই রিস্ক এরিয়া দিয়ে যাওয়ার সময় নাবিকরা পালাক্রমে পাইরেসি ওয়াচ করে যাতে অনেক আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যায়। এছাড়াও জাহাজে সিটাডেল ড্রিল করা হয়। সিটাডেল হলো এমন একটি গোপন জায়গা যেখানে জাহাজের নাবিকেরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লুকিয়ে থাকে যদি জলদস্যুরা জাহাজকে আক্রমণ করে। পরবর্তীতে রেসকিউ টিম নাবিকদের উদ্ধার করতে পারে। জাহাজের নাবিকদের ট্রেনিং দেওয়া হয় জাহাজে পাইরেট অ্যাটাক হলে কি করতে হবে এ বিষয়ের ওপর। এছাড়াও আরো বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
আমি এই হাই রিস্ক এরিয়া দিয়ে জাহাজ নিয়ে যাওয়ার সময় সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সব রকম সতর্কতা অবলম্বন করেছি এবং মহান আল্লাহর অসীম রহমতে তেমন কোনো সমস্যা হয় নাই। কোম্পানি থেকেও মনিটর করা হয় জাহাজের সিকিউরিটি ব্যবস্থা পর্যাপ্ত কিনা।
লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর, আরব সাগর এসব অঞ্চলে জাহাজ নিয়ে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সেই সাথে এই হাই রিস্ক এরিয়াতে চলাচলের জন্য জাহাজ এবং নাবিকদের নিরাপত্তার জন্য জাহাজে আর্মড গার্ড নেওয়ার প্রয়োজন। তাদের কাছে আত্মরক্ষার জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকে। জাহাজে আর্মড গার্ড থাকলে এবং সতর্কতা অবলম্বন করলে জলদস্যুরা সাধারণত আক্রমণ করার সাহস পায় না।
লেখক: ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ সালেহ (শুভ)মাস্টার মেরিনার,এক্স ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রাম।