স্বাধীনতা ।। ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যগুলিসাম্রাজ্যগুলি থেকে ৭০টি নতুন রাষ্ট্র স্বাধীনতা পায়।। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ ভারত, পাকিস্তান- বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়
রুহুল কুদ্দুস টিটো
স্বাধীনতা হলো একটি এমন বিশেষণ, যা একটি জাতি, দেশ বা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অবস্থান বোঝায়; যেখান তাদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা ও আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব থাকবে। স্বাধীনতার বিপরীত হচ্ছে পরাধীনতা। তবে স্বাধীনতা কোনো অর্থেই যা খুশি তাই করা বোঝায় না। স্বাধীনতা সুদীর্ঘ বিপ্লব বা সহিংসতা যেভাবেই হোক, এর উদ্দেশ্য থাকে সার্বভৌমত্ব অর্জন করা। যদিও কিছু বিপ্লবের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকে জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন; তবে অধিকাংশই শুধুমাত্র ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়।
যেমন: রাশিয়ার অক্টোবর বিপ্লব জাতীয় স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়নি ( যদিও এতে রুশ সাম্রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদল হয় এবং এর ফলস্বরূপ পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাতভিয়া, ইস্তোনিয়া স্বাধীনতা লাভ করে)। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু থেকেই জাতীয় স্বাধীনতার উদ্দেশ্যেই ছিল।
স্বায়ত্তশাসনও এক ধরনের স্বাধীনতা, যেখানে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এবং নিজের কর্তৃত্বও বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
ঐতিহাসিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রধান তিনটি সময়কাল আছে:
- ১৭৭০ এর দশকে শুরু হয়ে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৮২০ এর দশক পর্যন্ত চলে। তখন রাজকীয় দুর্গের পতন ঘটে এবং আমেরিকা স্বাধীন হয়।
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফলস্বরূপ উসমানীয় সাম্রাজ্য ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং এর ফলে বলকান অঞ্চলে অনেক স্বাধীন দেশের জন্ম হয়।
- এরপর ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যগুলি থেকে ৭০টি নতুন রাষ্ট্র স্বাধীনতা পায়।
একটি দেশ বা রাজ্যের স্বাধীনতা লাভ করার অনেক উদ্দেশ্য থাকে। স্বাধীনতা লাভের উপায়গুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ (যেমন : ভারত স্বাধীনতা আন্দোলন) থেকে শুরু করে সহিংসতা পর্যন্ত হতে পারে (যেমন: বিভিন্ন দেশের গৃহযুদ্ধ)।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট (১৩৫৪ বঙ্গাব্দের ২৯ শ্রাবণ, শুক্রবার) ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১৫ আগস্ট তারিখটিকে ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন। অনেককে দুঃখ কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে । দেশ মাতৃকার শৃংখল-মোচনের জন্য অনেক বিপ্লবী হাসি মুখে ফাঁসির মঞ্চে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। অনেক বিপ্লবীকে আজীবন কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
স্বাধীনতার ঠিক পূর্ব-মুহুর্তে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয় এবং তার ফলে ভারত ও পাকিস্তান অধিরাজ্যের জন্ম ঘটে। দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। অনেক মানুষ প্রাণ হারান এবং ১ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুহারা হন। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর দিল্লির লাল কেল্লার লাহোরি গেটের উপর ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
১৪ ও ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় এবং ভারত স্বাধীন আইন ১৯৪৭ অনুসারে ১৫আগস্টকে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আইনে বলা হয়;
“As from the fifteenth day of August, nineteen hundred and forty-seven, two independent Dominions shall be set up in India, to be known respectively as India and Pakistan.”
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম সম্প্রচারে জিন্নাহ বলেন;
“August 15 is the birthday of the independent and sovereign state of Pakistan. It marks the fulfilment of the destiny of the Muslim nation which made great sacrifices in the past few years to have its homeland.”
১৯৪৮ সালের জুলাইতে দেশটির প্রথম স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করা হয়, সেখানেও ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয়।তবে পরবর্তী বছর হতে ১৪ আগস্ট তারিখটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ তারিখ রাতটি ছিলো ২৭ রমজান ১৩৬৬ হিজরি, এই রাতটিকে মুসলমানগন পবিত্র রজনী হিসেবে বিবেচনা করেন।
ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর ১৯৪৭ সালের এই দিনে পাকিস্তান একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গুলো নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করার জন্য পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আন্দোলনটি পরিচালনা করে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, যার নেতৃত্বে ছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
স্বাধীনতা দিবসের প্রধান অনুষ্ঠানটি হয় ইসলামাবাদে। সেখানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং সংসদ ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সাথে পতাকা উত্তোলিত হয় এবং নেতৃত্ববৃন্দের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়াও এদিনের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান, প্যারেড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দেশাত্মবোধক গান গাওয়া ইত্যাদি। এই দিনে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সাধারণ নাগরিকবৃন্দ এই দিনে তাদের বাসায় পতাকা উত্তোলন করেন, এছাড়াও যানবাহন এবং পোষাকে জাতীয় পতাকার প্রদর্শন পরিলক্ষিত হয়।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাজনের আগে পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের মুসলিম-প্রধান অঞ্চল নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রস্তাব আনা হয়। বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী যুক্তবঙ্গ গঠনের প্রস্তাব দিলেও ঔপনিবেশিক শাসকেরা তা নাকচ করে দেয়। পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি পূর্ব ভারতে আলাদা সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রস্তাব করে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও বহু রাজনৈতিক আলোচনার পর ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে ব্রিটিশরা ভারতের শাসনভার ত্যাগ করে এবং হিন্দু ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। মুসলিম অধ্যুষিত বাংলার পূর্ব অংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ভারত প্রজাতন্ত্র দ্বারা বিভক্ত নবগঠিত পাকিস্তান অধিরাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম দুইটি অংশের ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল দুই হাজার মাইলের অধিক। দুই অংশের মানুষের মধ্যে কেবল ধর্মে মিল থাকলেও, জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিতে প্রচুর অমিল ছিল।
পাকিস্তানের পশ্চিম অংশ অনানুষ্ঠানিকভাবে (পরে আনুষ্ঠানিকভাবে) “পশ্চিম পাকিস্তান” এবং পূর্ব অংশ প্রথম দিকে “পূর্ব বাংলা” ও পরবর্তীতে “পূর্ব পাকিস্তান” হিসেবে অভিহিত হতে থাকে। পাকিস্তানের দুই অংশের জনসংখ্যা প্রায় সমান হওয়া সত্ত্বেও, রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীভূত হতে থাকে।
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে ধারণা জন্মাতে থাকে যে, অর্থনৈতিকভাবে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, এবং এরকম বিভিন্ন কারণে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকে। ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দুইটি অঞ্চলের প্রশাসন নিয়েও মতানৈক্য দেখা দেয়।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তা মেনে নেয়নি। এর ফলস্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট রাজনৈতিক অসন্তোষ ও সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ অবদমনে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা ।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ রাতে নৃশংস গণহত্যা আরম্ভ করে, যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত।পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম আক্রমণের পর ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।অধিকাংশ বাঙালি স্বাধীনতার ঘোষণাকে সমর্থন করলেও, কিছু ইসলামপন্থী ব্যক্তিবর্গ ও পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত বিহারিরা এর বিরোধিতা করে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান সেনাবাহিনীকে দেশের পূর্ব অংশে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পুনর্প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন, যার ফলে কার্যত গৃহযুদ্ধের সূচনা ঘটে।যুদ্ধের ফলে প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।ক্রমবর্ধমান মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ভারত মুক্তিবাহিনীর সহযোগিতায় ও এর গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে থাকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত একটি বিপ্লব ও সশস্ত্র সংগ্রাম। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান ও স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবং বাঙালি গণহত্যার প্রেক্ষিতে এই জনযুদ্ধ সংঘটিত হয়।যুদ্ধের ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দীন আহমদ ৩ এপ্রিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সাহায্যে দিল্লি পৌঁছান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি গঠন করেন প্রবাসী সরকার। বিএসএফের মুখ্য আইন কর্মকর্তা কর্নেল এন এস বেইনস বাংলাদেশের জন্য একটি ‘সংক্ষিপ্ত সংবিধান’-এর খসড়া তৈরি করে দেন। এটি তাজউদ্দীন আহমদ ও তাঁর সহকর্মীরা চূড়ান্ত করেন। এটিই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, যা ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয়েছিল। ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে বলে এই ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং কলকাতা থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকে। তাই একে প্রবাসী সরকারও বলা হয়। বাঙালি সামরিক, বেসামরিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ মুজিবনগর সরকারের পক্ষ অবলম্বন করে।
পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসরত হাজার হাজার বাঙালি পরিবার আফগানিস্তানে পালিয়ে যায়। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ গোপনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু করে। যুদ্ধে বাঙালি উদ্বাস্তুদের দুর্দশা বিশ্ববাসীকে চিন্তিত ও আতঙ্কিত করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করেন। ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কয়েকজন সঙ্গীতজ্ঞ বাংলাদেশিদের সহায়তার জন্য নিউ ইয়র্কে তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিশ্বের প্রথম কনসার্ট আয়োজন করেন। মার্কিন সিনেটর টেড কেনেডি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে মার্কিন কংগ্রেসে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। অন্যদিকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন উপরাষ্ট্রদূত আর্চার ব্লাড পাকিস্তানি স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের সুসম্পর্কের বিরোধিতা করেন।
উত্তর ভারতে পাকিস্তানের বিমান হামলার পর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে যোগদান করে। ফলশ্রুতিতে পূর্ব ও পশ্চিম— দুই ফ্রন্টে আরেকটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সূচনা ঘটে। উপর্যুপরি বিমান হামলা ও বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দীর্ঘ নয় মাসের এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
যুদ্ধের ফলে বিশ্বের সপ্তম-জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান ঘটে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দেয়। জটিল আঞ্চলিক সম্পর্কের কারণে যুদ্ধটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মধ্যে চলমান স্নায়ুযুদ্ধের অন্যতম প্রধান পর্ব ছিল। জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্যরাষ্ট্র ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যেই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদ্যাপন করার একটা আবেগপ্রবণ গুরুত্ব আছে। ১৯৭১ সালে প্রবাসে যে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার আইনি ভিত্তি দেওয়া হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে, যেখানে ২৬ মার্চের কথা বলা হয়েছে।
আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশ ৫৪ বছরে পা দিলো।১৯৭১ সালের এই দিনে হাজার বছরের সংগ্রামী বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা অর্জন করে।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া