নেতা হলেন একজন মানুষ যিনি একদল মানুষকে একটি নির্দিষ্ট ফলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রভাবিত করেন। এই বিষয়টি কোনও খেতাব বা প্রথাগত কর্তৃত্বের উপর নির্ভরশীল নয়।
নেতৃত্ব হ’ল একটি দক্ষতা, যার জন্য একজন ব্যক্তির প্রয়োজন হয়, অধীনস্থদের স্বেচ্ছায় কাজ করার জন্য প্রভাবিত করা এবং সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনে তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উত্সাহিত করা। উদ্দেশ্য এবং অধস্তনদের উপর ভিত্তি করে, সংগঠনটি বিভিন্ন নেতৃত্বের স্টাইল থেকে চয়ন করতে পারে। স্বৈরাচারী নেতৃত্ব একচেটিয়া নেতৃত্ব হিসাবে পরিচিত, স্টাইলগুলির মধ্যে একটি, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে ঘিরে রেখেছে।স্বৈরাচারী নেতৃত্বের মধ্যে নেতা অধীনস্থদের কী করা উচিত এবং কীভাবে করা উচিত সে সম্পর্কে নির্দেশনা দেন।
গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব হ’ল এমন একটি যা অধস্তনকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াতে অংশ নেওয়ার সমান সুযোগ দেয় যা করা হবে এবং কীভাবে করা হবে।
স্বৈরাচারী নেতৃত্ব শৈলী অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমস্ত ক্ষমতা নেতার হাতেই কেন্দ্রীভূত থাকে, এই নেতারাও একনায়ক। তারা অধস্তনদের কোনওরকম পরামর্শ বা উদ্যোগকে প্রশ্রয় দেন না। ব্যবস্থাপককে প্রবলভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারে বলে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা সফল হয়েছে। যে হেতু একজন ব্যক্তিই সমগ্র দলের হয়ে সিদ্ধান্ত নেন এবং যতক্ষণ না তারা সে সিদ্ধান্ত দলকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন ততক্ষণ তা নিজেদের মধ্যেই রাখেন, তাই এ ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়। স্বৈরাচারী নেতা কাউকে বিশ্বাস করেন না।
স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব নেতা নিজেকে সকল ক্ষমতার অধিকারী মনে করেন। তিনি অধস্তনদের কোন প্রকার মতামত। | গ্রহণ না করে একাই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং অধস্তনদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করেন। তিনি অধস্তনদের বল প্রয়ােগ, আদেশ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে কাজ আদায় করেন। এরূপ নেতা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেন এবং কতৃত্ব হস্তান্তরে সম্পূর্ণরূপে নারাজ থাকেন।
গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব শৈলীতে দলের সিদ্ধান্ত-গ্রহণকেই পছন্দ করা হয়, অর্থাৎ এই নেতা দলের সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করে তার পর নির্দেশ দেন। তিনি দলের সহযোগিতা লাভ করতে পারেন এবং দলকে কার্যকরী ও ইতিবাচকভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। গণতান্ত্রিক নেতার সিদ্ধান্ত স্বৈরাচারী নেতার মতো একপেশে নয়, কারণ দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ও তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হয়।
নেতৃত্বকে একটি বিশেষভাবে আবেগবহুল প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়। এখানে সামাজিক প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়ার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে আবেগ। একটি প্রতিষ্ঠানে নেতার মেজাজের কিছু প্রভাব তার দলের উপর পড়ে। এই প্রভাব্গুলিকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে।দলের প্রতিটি সদস্যের মেজাজ।
যে দলের নেতার মেজাজ ইতিবাচক সেই দলের সদস্যরা, যে দলের নেতার মেজাজ নেতিবাচক সেই দলের সদস্যদের তুলনায়, বেশি ইতিবাচক মেজাজে থাকেন।নেতারা আবেগ সঞ্চারণ কৌশলের মাধ্যমে তাদের মেজাজ দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে চারিয়ে দেন। মনস্তাত্ত্বিক যে সব কৌশলের মাধ্যমে সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন নেতারা অনুগামীদের প্রভাবিত করেন, আবেগ সঞ্চারণ তার অন্যতম। দলের আবেগপূর্ণ মনোভাব দলের মধ্যে ধারাবাহিক বা সমপ্রকৃতি যুক্ত আবেগের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে ফুটিয়ে তোলে দলের আবেগপূর্ণ মনোভাব। দলের আবেগপূর্ণ মনোভাব হল দলের প্রতিটি সদস্যের ব্যক্তিগত মেজাজ্রে গড় এবং তা দলীয় স্তরের বিশ্লেষণে প্রাপ্ত মেজাজকে বোঝায়।
যে দলের নেতার মেজাজ ইতিবাচক সেই দলের আবেগপূর্ণ মনোভাব, যে দলের নেতার মেজাজ নেতিবাচক সেই দলের তুলনায় অনেক বেশি ইতিবাচক হয়। সমন্বয়, প্রচেষ্টার বিস্তার এবং কাজের কৌশলের ক্ষেত্রে দলের প্রক্রিয়া। সর্বসমক্ষে মেজাজের বহিঃপ্রকাশ দলের সদস্যদের চিন্তা ও কাজ করার ধরনের উপর প্রভাব ফেলে। যখন মানুষ একটি বিশেষ মেজাজের মধ্যে দিয়া যায় ও তা প্রকাশ করে, তখন তারা অন্যান্যদের একটি সংকেত পাঠায়। নেতারা তাদের মেজাজের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং মনোভাবের সংকেত দেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নেতাদের ইতিবাচক মেজাজের বহিঃপ্রকাশ এই সংকেত পাঠায় যে নেতারা লক্ষ্যের দিকে অগ্রগতিকে ভাল বলে মনে করছেন।দলের সদস্যের এই সব সংকেতের প্রতি জ্ঞানাত্মক ও আচরণগতভাবে সাড়া দেন যা দলের প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রতিবিম্বিত হয়। মক্কেল পরিষেবা সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গিয়েছে নেতার ইতিবাচক মেজাজের বহিঃপ্রকাশ দলের কার্য সম্পাদনার মান উন্নত করে। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে অন্যান্য তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
নেতৃত্ব হল বুদ্ধিমত্তা, বিশ্বাসযোগ্যতা, মানবিকতা, সাহস, ও শৃঙ্খলাবোধের বিষয়। শুধু বুদ্ধিমত্তার উপর ভরসা করলে বিদ্রোহী মনোভাব দেখা দিতে পারে। শুধু মানবিকতার ব্যবহার দুর্বলতার জন্ম দেয়। অবিচল বিশ্বাস থেকে দেখা দেয় মূর্খতা। সাহসের শক্তির উপর নির্ভরতা রূপ নিতে পারে হিংসার। অতিরিক্ত শৃঙ্খলাবোধ এবং কঠোরতা থেকে জন্ম নিতে পারে নিষ্ঠুরতা। যখন এই পাঁচটি গুণ একত্রিত হয়, প্রতিটি গুণ নিজের কাজের প্রতি যথাযথ হয়, তখনই একজন মানুষ নেতা হয়ে উঠতে পারেন। – সান জু
নেতার মেজাজ বাদে তার আচরণও কর্মস্থলে কর্মীদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক আবেগের উৎস। নেতা কিছু পরিস্থিতি ও ঘটনার জন্ম দেন যার ফলে আবেগপূর্ণ সাড়া পাওয়া যায়। কর্মীদের সঙ্গে পারস্পরিক ক্রিয়ার সময় নেতাদের কিছু কিছু আচরণ এই সব আবেগপূর্ণ ঘটনার উৎস। কর্মস্থলে আবেগপূর্ণ ঘটনাগুলিকে রূপদান করেন নেতারা। উদাহরণ- কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য প্রদান, কাজ বণ্টন, সম্পদের বিতরণ। যে হেতু কর্মীদের আচরণ ও উৎপাদনশীলতা তাদের মানসিক আবেগ দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়, তাই প্রতিষ্ঠানের নেতাদের প্রতি কর্মীদের আবেগবহুল প্রতিক্রিয়াগুলিকে বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজনীয়।আবেগপূর্ণ বুদ্ধিমত্তা, অধিগম্যতার ক্ষমতা এবং নিজের ও অন্যান্যদের মেজাজ ও আবেগকে পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানে কার্যকরী নেতৃত্বের প্রতি অবদান রাখে। নেতৃত্বের অর্থ দায়িত্বশীলতা।
কার্ট লেউইন ও তার সহকর্মীরা নেতৃত্বের বিভিন্ন শৈলীকে চিহ্নিত করেছেন:
- একনায়ক
- স্বৈরাচারী
- অংশগ্রহণকারী
- অবাধ-স্বাধীনতা প্রদানকারী
স্বৈরাচারী নেতৃত্ব শৈলী অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমস্ত ক্ষমতা নেতার হাতেই কেন্দ্রীভূত থাকে, এই নেতারাও একনায়ক। তারা অধস্তনদের কোনওরকম পরামর্শ বা উদ্যোগকে প্রশ্রয় দেন না। ব্যবস্থাপককে প্রবলভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারে বলে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা সফল হয়েছে।
গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব শৈলীতে দলের সিদ্ধান্ত-গ্রহণকেই পছন্দ করা হয়, অর্থাৎ এই নেতা দলের সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করে তার পর নির্দেশ দেন। তিনি দলের সহযোগিতা লাভ করতে পারেন এবং দলকে কার্যকরী ও ইতিবাচকভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। গণতান্ত্রিক নেতার সিদ্ধান্ত স্বৈরাচারী নেতার মতো একপেশে নয়, কারণ দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা ও তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হয়।
মুক্ত বিচরণপন্থী নেতা নেতৃত্ব দেন না, বরং দলকে সম্পূর্ণভাবে তার নিজের মতো চলতে দেন; এই ধরনের নেতা তার অধস্তনদের সর্বাধিক স্বাধীনতা দেন। অধস্তনদের তাদের নিজস্ব নীতি ও কৌশল স্থির করার ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়। মুক্ত বিচরণপন্থী নেতৃত্ব শৈলীকে স্বৈরাচারী শৈলীর চেয়ে ভাল বলে মনে করা হয়। কিন্তু এটি গণতান্ত্রিক শৈলীর মতো কার্যকরী নয়।