হারিয়ে গেল আমাদের সেই গ্রমীণ জীবনের খেলাগুলো
আলাপচারিতা
এক সময় ছিল, ইচিং বিচিং, ওপেন টু বায়োস্কোপ, কড়ি খেলা, কানামাছি, লাঠি খেলা, কাবাডি, কুতকুত, গোল্লাছুট, ষাড়ের লড়াই, বউ-ছি, বলী খেলা, জোল্লাভাতি/টোপাভাতি, ডাংগুলি, দাড়িয়াবান্ধা, নোনতা খেলা, পিঠ ফাটান্তিজ, নৌকা বাইচ, রুমাল চুড়ি, পুতুল বৌ, ফুল টোক্কা, বাঘ ছাগল, বরফ পানি, মার্বেল, মোরগ লড়াই, লাটিম, লুডু, ষোল গুটি, এক্কা দোক্কা, সাত পাতা, বটি বটি, দাপ্পা, রস-কস, চারগুটি, চেয়ার সিটিংসহ আরও নানা ধরনের খেলা আমাদের আনন্দ দিয়েছে শরীর ও মন বিকাশে উচ্ছল প্রাণবন্ত ছিলাম। গ্রামগঞ্জের শিশু ও যুবকরা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলায় অভ্যস্থ ছিল শিশু কিশোর যুবা অবসরে গ্রামের খোলা মাঠে দলবেঁধে খেলতো নামতো এ খেলা। আর ছেলে-মেয়েরা শৈশবে দুরন্তপনায় জড়িয়ে থাকতো খেলাধুলার মধ্যে। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতার সময়ে এসে মাঠ-বিল-ঝিল হারিয়ে যাওয়ায়, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া ও কালের বিবর্তনে মহাকালের ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলাধুলা।
আদি ক্রীড়া সংস্কৃতিগ্রামীণ খেলাধুলা গুলো ছিল প্রতিভা বিকাশের অন্যতম বিনোদনমূলক ও স্বাস্থ্য গঠনে মন বিকাশের মাধ্যম। বাঙ্গালীর গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে। বিলুপ্ত প্রায় আমাদের গ্রামীণ খেলার ইতিহাস,খেলাধুলা গুলো শিকড়।
লাঠি খেলা
লাঠি খেলা একটি ঐতিহ্যগত মার্শাল আর্ট যেটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কিছু জায়গায় চর্চা করা হয়।[৫] ‘লাঠি খেলা’ অনুশীলনকারীকে ‘লাঠিয়াল’ বলা হয়। এছাড়াও, লাঠি চালনায় দক্ষ কিংবা লাঠি দ্বারা মারামারি করতে পটু কিংবা লাঠি চালনা দ্বারা যারা জীবিকা অর্জন করে, তিনি/তাঁরা লেঠেল বা লাঠিয়াল নামে পরিচিতি পান।
লাঠি একটি প্রাকৃত শব্দ যেটি সংস্কৃত ফর্ম ইয়াস্টি থেকে এসেছে। সুতরাং, লাঠি খেলাকে লাঠির কৌশল বলা যেতে পারে।[৮] দক্ষিণ এশীয় ভাষায় বাংলাসহ হিতোপদেশ আছে যে যার আছে লাঠি তার আছে ক্ষমতা। লাঠি খেলায় যে দক্ষ বা লাঠি খেলা নিয়ে যাদের বসবাস তারাও লাঠিয়াল হিসাবে পরিচিত।
লাঠি মুগুর, গদা বা ডাণ্ডা বিশেষ যেটি সাধারণত শক্ত বাঁশ দিয়ে তৈরি হয় এবং কখনও কখনও একটি লোহার রিংয়ের সঙ্গে আবদ্ধ অবস্থায় দুর্দান্ত অস্ত্রে পরিণত হয়।
লাঠি খেলা লাঠি দিয়ে আত্মরক্ষা শেখায়। ব্রিটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার জমিদাররা (পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বঙ্গ) নিরাপত্তার জন্য লাঠিয়ালদের নিযুক্ত করত। চরাঞ্চলে জমি দখলের জন্য মানুষ এখনও লাঠি দিয়ে মারামারি করে। মহরম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে এই খেলাটি তাদের পরাক্রম ও সাহস প্রদর্শনের জন্য খেলা হয়ে থাকে। এই খেলার জন্য ব্যবহৃত লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা, এবং প্রায়ই তৈলাক্ত হয়। অত্যাশ্চর্য কৌশলের সঙ্গে প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকেরাই এই খেলায় অংশ নিতে পারে।[৯] কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষেরাই লাঠিখেলায় অংশ নিয়ে থাকেন।[১০] উত্তরবঙ্গে, ঈদের সময়ে চাদি নামক একটি অনুরূপ খেলা খেলা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানের সময় “লাঠি খেলা” এর প্রদর্শনী এখনও আছে। পুরু বাংলায় গুরুসাদে দত্ত কর্তৃক ব্রাতাশ্রী আন্দোলনের সময়ও লাঠি খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।[৯]
লাঠিয়াল বাহিনী সড়কি খেলা, ফড়ে খেলা, ডাকাত খেলা, বানুটি খেলা, বাওই জাক (গ্রুপ যুদ্ধ), নরি বারী (লাঠি দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) খেলা এবং দাও খেলা (ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) খেলা দেখায়। এর মধ্যে ডাকাত খেলার উপস্থাপনা ঈদে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে প্রসিদ্ধ। লাঠিখেলার আসরে লাঠির পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ঢোলক, কর্নেট, ঝুমঝুমি, কাড়া ইত্যাদি ব্যবহূত হয় এবং সঙ্গীতের সাথে চুড়ি নৃত্য দেখানো হয়।
লাঠি খেলার অসাধারণ ইতিহাস আছে কিন্তু এর জনপ্রিয়তা এখন পড়তির দিকে।[১২] ঈদ উপলক্ষে লাঠিখেলার আয়োজন সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়, নড়াইল প্রভৃতি জেলায় ভিন্ন নামে দেখা যায়।[১০] লাঠি খেলা নিয়ে বর্তমানে নতুন দল তৈরি হচ্ছে না। এছাড়া পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও লাঠি খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে।[১৩]
কাবাডি
কাবাডি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় খেলা।[১] বর্তমানে কাবাডি আন্তর্জাতিক ভাবেও খেলা হয়। এই খেলা সাধারণত কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সব ধরনের ছেলেরা খেলে থাকে। সাধারণত বিশেষ উৎসব বা পালা-পার্বনে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে কাবাডি খেলার আয়োজন করা হয়। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছে। পূর্বে কেবল মাত্র গ্রামে এই কাবাডি খেলার প্রচলন দেখা গেলেও বর্তমানে সব জায়গায় কাবাডি খেলা প্রচলিত হয়েছে।
১৯৭৮ নালে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বার্মার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। [১৪] ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় প্রথম এশিয়ান কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে আস্তে আস্তে কাবাডি খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
- মাঠঃ কাবাডি খেলার বালকদের মাঠ লম্বায় ১২.৫০ মিটার চওড়ায় ১০ মিটার হয়। এবং বালিকাদের কাবাডি খেলার মাঠ লম্বায় ১১ মিটার এবং চওড়ায় ৮ মিটার হয়। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে যাকে মধ্যরেখা বা চড়াই লাইন বলে। এই মধ্য রেখার দুই দিকে দুই অর্ধে দুটি লাইন টানা হয় যাকে কোল লাইন বলে। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে ১ মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে লবি বলা হয়।
- সদস্যঃ প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতি দলের ৭ জন খেলোয়াড় একসাথে মাঠে নামে। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক তিন জন খেলোয়াড় পরিব্রর্তন করা যাবে।
- সময়ঃ ৫ মিনিট বিরতি সহ দুই অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে এবং মেয়েদের ২০ মিনিট করে খেলা হবে। খেলা শেষে যেই দল বেশি পয়েন্ট পাবে সাই দলই জয়ী হবে। দুদলের পয়েন্ট সমান হলে দুঅর্ধে আরও ৫ মিনিট করে খেলা হবে। এরপরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হবে।
- পয়েন্টঃ যদি কোন খেলোয়াড় মাঠের বাহিরে চলে যায় তাহলে সে আউট হবে। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা(অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পাবে। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড়কে(একাধিক হতে পারে)স্পর্শ করে এক নিঃশাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলে, যাদের কে স্পর্শ করবে সে বা তারা কয় জনই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যাবে।
- সতর্কতাঃ এক নিঃশাসে স্পষ্ট ভাবে পুণঃপুণঃ কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে “দম নেওয়া” বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হবে।বিপক্ষ কোর্টে একসাথে একাধিক আক্রমণকারী যেতে পারবে না। কোন আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হবে।
কুতকুত
কুতকুত গ্রামীণ কিশোরী-তরুণীদের অন্যতম প্রধান খেলা।[১] উঠানে শস্য শুকাতে দেবার ফাঁকে কিংবা বিকালের নরম আলোয় গৃহের আঙ্গিনায় কৈশর পেরোনো তরুণীরা কুতকুত খেলায় মেতে ওঠে। বর্ষার পরের নরম মাটিতে মাটির ভাঙ্গা তৈজসপত্রের অংশ দিয়ে দাগ কেটে কুতকুতের জন্য ঘর বানানো হয়। বাংলার গ্রামীণ মেয়েরা যে কোনো ঋতুতেই এই খেলা খেলে থাকে। কুতকুত খেলায় ঘর বেচাকেনার বিষয়টি বাণিজ্যের প্রতি গ্রামীণ নারীদের সচেতনতাকে তুলে ধরে।
লাইলি লুইলি বাঁশের চোঙ
বাঁশ কাটলে টাকা থোং
এত টাকা নেবো না
লাইলির বিয়া দিব না
লাইলির আম্মা কাঁন্দে
গলায় রশি বান্দে
আয়তক্ষেত্রাকার মোট ৭/৮টি ঘর আঁকা হয় এবং এই ঘরগুলোর শেষ মাথায় অর্ধচন্দ্রাকৃতির আর একটি ঘর বানানো হয়। প্রথম ঘরে গুটি ফেলে এক পা শূন্যে রেখে এবং দম দিতে দিতে গুটিকে সবগুলো ঘর অতিক্রম করে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ঘরে এনে পা নামিয়ে দম ফেলা যায়। তার পর এই ঘর থেকে গুটিকে পা দিয়ে আঘাত করে সব ঘর অতিক্রম করানোর চেষ্টা করা হয়। গুটিটি সব ঘর অতিক্রম না করলে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ঘর থেকে বের হয়ে শূন্যে পা তুলে দম নিতে নিতে তাকে আবার আগের নিয়মে ঘর থেকে বের করে আনতে হয়। খেলোয়াড়রা কপালে গুটি রেখে উপর দিকে তাকিয়ে ৮টা ঘরের দাগে পা না ফেলে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ঘরে যেয়ে আবার প্রথম ঘরে ফেরত আসতে পারলে সে ঘর কেনার যোগ্যতা অর্জন করে। কুতকুত খেলায় যে ঘর কেনা হবে সেই ঘরে পা বা গুটি ফেলা যাবেনা। ঘর কেনার প্রক্রিয়াকালীন সময় খেলোয়াড়ের দাঁত দেখা গেলে ঐ খেলোয়াড়ের খেলা ঐ অবস্থায় মারা যায়। ক্রমান্বয়ে ঘর কিনে শেষ ঘরটি দখল করার মাধ্যমে খেলার নিষ্পত্তি হয়।
গোল্লাছুট
গোল্লাছুট বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। গ্রাম ছাড়াও বাংলাদেশের শহরাঞ্চলেও এই খেলা ব্যাপক প্রচলিত। ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল , খুলনা, পাবনায় এই খেলার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। [১] এই খেলা বাইরে অর্থাৎ স্কুলের মাঠ অথবা খোলা জায়গায় শিশুরা খেলে থাকে। গোল্লাছুট খেলায় দুটি দল থাকে। মাটিতে এক জায়গায় গর্ত করে একটি লাঠি পুতে তাকে কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়, এই লাঠিকে কেন্দ্র করে বৃত্ত তৈরি করে ২৫/৩০ ফুট দূরে আরো একটি রেখা টেনে সীমানা নির্ধারন করা হয়। বৃত্ত তৈরি করে ঘুরতে হয় বলে একে “গোল্লা” এবং আঞ্চলিক ভাষায় ছুট হলো দৌড়ানো। এভাবেই খেলার নাম হয়েছে গোল্লাছুট।
খেলার শুরুতে প্রথম দুজন দলপতি নির্ধারন করা হয়। দলপতিদের বলা হয় “গোদা”। দুদলেই সমান সংখ্যক খেলোয়াড় থাকে (৫ অথবা ৭ জন)। দলপতি মাটিতে পুঁতা কাঠি এক হাতে ধরে অপর হাতে তার দলের অন্য খেলোয়াড়ের হাত ধরে থাকে। এভাবে তারা পরস্পরের হাত ধরে কেন্দ্র স্পর্শ করে ঘুরতে থাকে। তাদের লক্ষ্য হলো বৃত্তের বাইরে যে কাঠি বা গাছ (দ্বিতীয় লক্ষ্যবস্তু) থাকে তা দৌড়ে স্পর্শ করা।
অপরদিকে দৌড়ে কাঠি স্পর্শ করার আগেই বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা যদি ওই দলের কোন খেলোয়াড়কে স্পর্শ করতে পারে তাহলে সে এই দানে (পর্ব) খেলা থেকে বাদ যাবে। এভাবে শেষ পর্যন্ত দলপতিরও দৌড়ে কাঠি স্পর্শ করতে হবে। কোন খেলোয়াড়ই লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা দান পায়।
ষাঁড়ের লড়াই
অতীতে বাংলাদেশে ষাঁড়ের লড়াই একটি প্রসিদ্ধ খেলারূপে প্রচলন ছিল। লড়াই করার জন্য ষাঁড় গরু আলাদাভাবে লালন পালন করা হতো। এর দ্বারা হাল চাষ বা অন্য কোন ধরনের কাজ করা হতো না। ষাঁড়টিকে মোটাতাজা করা হতো শুধু লড়াই করার জন্য। শুকনো মৌসুমে গ্রামের বাজারে ঢোল পিটিয়ে ষাঁড়ের লড়াই দেখার আমন্ত্রন জানানো হতো। মাঠে ষাঁড়ের মালিকগণ তাদের ষঁড়গুলোকে বিভিন্ন রঙিন কাপড়, ঘুংগুর, দোয়াল দিয়ে গেঁথে নিয়ে আসতেন। দুদিকে দুজন রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে এসে দুপক্ষের ষাঁড়কে ছেড়ে দিয়ে সবাই মিলে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ও বিভিন্ন তালে তালে গান করত। এভাবে উপস্থিত সকল ষাঁড়ের মধ্যে যে ষাঁড়টি প্রথম স্থান পেত তাকে পুরস্কার দেয়া হতো। সে পুরস্কার গরুর গলায় বেঁধে বাজারে বাজারে দেখানো হতো। বর্তমানে এই শৌখিন প্রথা বিলুপ্তির পথে।[১৫]
বউচি
বউচি বাংলাদেশের একটি গ্রামীণ ও ঐতিহ্যবাহী খেলা।[১] বউচি খেলায় দুইটি দলের প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক দলে ৮ থেকে ১০ জন করে খেলোয়াড় হলে খেলা জমে। মাঠ অথবা বাড়ির উঠোন যেখানে খুশি সেখানে এই খেলা খেলা যায়। খেলার প্রারম্ভে ২০-২৫ ফুট দূরত্বে মাটিতে দাগ কেটে দুটি ঘর তৈরি করতে হয়। দুই দলের মধ্যে যারা প্রথমে খেলার সুযোগ পায় তাদের মধ্যে থেকে একজনকে বউ বা বুড়ি নির্বাচন করা হয়। দুটি ঘরের মধ্যে একটি ঘর হবে বড়, যেখানে এক পক্ষের বউ বাদে সব খেলোয়াড় থাকবে। আর ছোট ঘরে দাঁড়াবে বউ। ছোট ঘরটিকে বউঘর বা বুড়িঘর বলে। বউয়ের বিচক্ষণতার ওপর খেলার জয় পরাজয় নির্ভর করে। খেলায় বউঘর থেকে বউকে ছুটে আসতে হবে বড় ঘরটিতে। বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা সব সময় পাহারায় থাকে যেন বউ ঘর থেকে বের হতে না পারে। বউ বাইরে এলে যদি বিপক্ষ দলের কেউ তাকে ছুঁয়ে দেয় তাহলে ওই পক্ষের খেলা শেষ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে বিপক্ষ দল খেলার সুযোগ পায়। বড় ঘরটিতে যারা থাকে তারা দম নিয়ে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের তাড়া করে। দম নিয়ে তাড়া করলে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা দিগ্বিদিক ছুটে পালায়। তা সত্তে ও সবসময় খেয়াল রাখে বউ যেন যেতে না পারে। দম নিয়ে যাওয়া খেলোয়াড় যদি বিপক্ষ দলের কাউকে ছুঁয়ে দেয় তবে সে খেলোয়াড় মারা পড়ে। মারা পড়া খেলোয়াড় চলতে থাকা খেলায় অংশ নিতে পারে না। এভাবে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় মেরে বউকে বড় ঘরে ফিরে আসতে সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে বউয়ের সঙ্গী খেলোয়াড়েরা। বউ যদি বিনা ছোঁয়ায় বড় ঘরে চলে আসতে পারে তাহলে বিজয় অর্জন হয়। বিজয়ী দল পুনরায় খেলা শুরু করবে। যদি বউকে বিপক্ষ দল ছুঁয়ে দেয় তাহলে বিপক্ষ দল খেলার সুযোগ পাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে খেলা চলতে থাকে।
তথ্যসূত্র: উকিপিডিয়া