১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসটিতে সমাবেশ করতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ ।। “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের পরে মানবাধিকার ইস্যুটা আমাদের রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় হয়েছে,”-শাহদীন মালিক
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, মানবাধিকার দিবসকে ঘিরে বিএনপি নাশকতার পরিকল্পনা করছে।
বিবিসি নিউজ বাংলা এক সংবদ প্রতিবেদনে বলছে, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর যাবত একটানা ক্ষমতায় থাকলেও ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসটি ঘটা করে করে পালন করতে দেখা যায়নি।
কিন্তু এবার তারা দিনটিতে সমাবেশ করতে চেয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যে কোন ধরণের সভা-সমাবেশ করতে গেলে কমিশনের অনুমতি নেবার প্রয়োজন রয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি না মেলায় বাইরে সমাবেশের পরিকল্পনা থেকে তারা সরে এসেছে।
“একটা বড় সমাবেশ করবো এরকম একটা কর্মসূচী আমাদের ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছি। সেই আবেদন তারা গ্রহণ করেননি। বাইরে সমাবেশের নামে শো-ডাউন হবে তারা এ আশংকা করছেন। যে কারণে ১০তারিখে মানবাধিকার দিবসের আনুষ্ঠানিকতা ভেতরেই পালন করবো,” কয়েকদিন আগে সাংবাদিকদের বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, ১০ই ডিসেম্বরকে ঘিরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় জড়ো হবার চেষ্টা করতে পারে। সেজন্য তারাও সতর্ক রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলন গত ৬ই ডিসেম্বর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মানবাধিকার দিবসকে ঘিরে বিএনপি নাশকতার পরিকল্পনা করছে।
“মানবাধিকার দিবসে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির প্ল্যান নিয়ে তারা এগুচ্ছে। এজন্য তারা জামাতকে একান্তই তাদের পাশে চায়,” -বলেন মি. কাদের।
বিএনপি বলছে, তাদের নেতা-কর্মীরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন
এবারের মানবাধিকার দিবস এমন এক সময়ে পালিত হবে যখন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে এবং এই নির্বাচন বয়কট করেছে বিএনপি।
নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরার পাশাপাশি গণতন্ত্র ও নির্বাচনের ইস্যিুটিকে আন্তর্জাতিক মহলের সামনে আনতে চায় বিএনপি। বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত ও সরকার বিরোধীরা মনে করে, ২০২১ সালে র্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি রাজনীতির জন্য একটি ‘টার্নি পয়েন্ট’। বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত ও সরকার বিরোধীরা মনে করে, ২০২১ সালে র্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি রাজনীতির জন্য একটি ‘টার্নি পয়েন্ট’।
“এটা নিশ্চয়ই নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিএনপি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুটা নিজেরা ফেস করেছে, নিজেরা নির্যাতিত হয়েছে। বিষয়টাকে যখন আন্তর্জাতিক মহল টেক-আপ করেছে তখন বিএনপি মনে করে যে তাদের এতদিনের সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান।
“মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন একটি দিন পালন করে, সেই দিনটাকে বিএনপি আনন্দের দিন হিসেবে না দেখে বিএনপি এটাকে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলার দিন। সেজন্য এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ,” -বলেন মি. আসাদুজ্জামান।
“ভোটাধিকার একটি মানবাধিকার, গণতন্ত্র একটি মানবাধিকার,” বলেন মি. আসাদুজ্জামান।
নতুন রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মানবাধিকার ইস্যুটিকে সরকার ও বিরোধী দল একে অপরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের পরে মানবাধিকার ইস্যুটা আমাদের রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় হয়েছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক।তিনি বলেন,
“সত্যিকার অর্থে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং মানবাধিকার রক্ষা করার যে প্রতিজ্ঞা – ঐ পর্যায়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এখনো আসেনি।”
২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অনেকটা আকস্মিকভাবে এসেছিল। যদিও এর আগে থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘণের নানা অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হয়েছে।
এরপর থেকে সরকার-বিরোধীরা বিভিন্ন সময় বলেছিল যে ‘আরো নিষেধাজ্ঞা’ আসতে যাচ্ছে। ২০২২ সালের ১০ই ডিসেম্বরের আগে অনেকে নতুন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করেছিলন। কিন্তু সেটি আর হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমস-এর অধ্যাপক সাঈদ মনে করেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিরোধী দলের মধ্যে একটা ‘রাজনৈতিক আকাঙ্খা’ তৈরি হয়েছে। কারণ অতীতের নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারের উপর একটা দৃশ্যমান চাপ তৈরি হয়েছিল।
তিনি মনে করেন, র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
‘নিষেধাজ্ঞা আসবে কেন?’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, বড় রাজনৈতিক দলগুলো মানবাধিকারের প্রতি যতটা না শ্রদ্ধাশীল তার চেয়ে বেশি হচ্ছে তারা এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে পরষ্পরকে কোনঠাসা করতে চায়।
মি. আহমদ, বলেন বাংলাদেশে মানবাধিকার ইস্যুটা রাজনীতিকিকরণ হয়ে গেছে। সেজন্য ১০ই ডিসেম্বর দিনটি নিয়ে একটা বাড়তি প্রচারণা চালায় রাজনৈতিক দলগুলো।
তিনি মনে করেন, বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানবাধিকার দিবসকে কাজে লাগাতে চায়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা এর পাল্টা অবস্থান তৈরি করতে চায়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘নিষেধাজ্ঞার’ বিষয়টি এখন সবচেয়ে আলোচিত। সে দৃষ্টিকোন থেকে ১০ই ডিসেম্বরের আগে নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়।
“পশ্চিমা বিশ্ব কী করবে না করবে সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। তবে এটা ঠিক নিশ্চয়ই রাজনৈতিক মহলে নতুন কোন স্যাংশন আসতে পারে এই চাপ অবশ্যই অনুভূত হচ্ছে। এটা কতটা যৌক্তিক কতটা অযৌক্তিক সেটা নতুন কোন স্যাংশন না দেয়া পর্যন্ত তো বলা যাবে না,” বলছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদিন মালিক।
সরকার-বিরোধীরা মনে করেন, মানবাধিকার কিংবা অন্য যে কোন ইস্যুতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আসলে সেটি তাদের জন্য বাড়তি রাজনৈতিক সুবিধা তৈরি করবে। সংবাদমাধ্যমেও এসব নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা।
শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করা হয় – নির্বাচনের আগে কোন নিষেধাজ্ঞা আসার সম্ভাবনা তারা দেখছেন কি না?
এ প্রশ্নে মি. কাদের জবাব দেন, “নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমাদের কোন উদ্বেগ নেই। আমরা জানি, সংবিধান মেনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে নিষেধাজ্ঞা আসবে কেন?
তথ্যসূত্র :বিবিসি বাংলা