২৪ ঘণ্টায় ১৪ জেলায় ২১ ভোটকেন্দ্রে আগুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরুর আগে শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের অন্তত ২২ জেলায় ৪১টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৪ জেলার ২১টি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
একই সময় চার জেলায় চার নির্বাচনী ক্যাম্প ও দুই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সাত জেলায় ১১টি যানবাহন ও তিন জেলায় অন্তত তিনটি স্থাপনায় (ভোটকেন্দ্র নয় এমন বিদ্যালয়) আগুন লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া দুই জেলায় ভাঙচুর করা হয়েছে ২২টির মতো যানবাহন।
৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন বর্জন করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ছাড়াও দলটির যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন শরিক দল এবং সিপিবি, বাম জোটসহ কয়েকটি বামপন্থী দল। আন্দোলনের অংশ হিসেবে হরতাল–অবরোধ, বিক্ষোভ–মিছিল, সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে দলগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ও রোববার দেশজুড়ে হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
বিরোধীদের এ কর্মসূচি চলাকালে শনিবার বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নোয়াখালীতে দলটির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের। আর রাজশাহী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। চট্টগ্রামের দুই স্থানে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ত্রিভুজাকৃতির লোহার পাত ফেলে রাখায় চাকা পাংচার হয়ে বিকল হয় ৮০টির মতো যাত্রীবাহী ও পণ্যবোঝাই গাড়ি।
শনিবার সন্ধ্যায় এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জন করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় প্রতিটি নাশকতার ঘটনার পর বিএনপির ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগ ও তাদের ‘দলীয় পুলিশ প্রশাসনের’ মজ্জাগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘আগুন দিয়ে গাড়ি পোড়ানো, ট্রেনে আগুন, রেললাইন উপড়ানো, সহিংসতা, গানপাউডার ও লগি-বইঠা দিয়ে মানুষ হত্যার মূল হোতা আওয়ামী লীগ।’
ভোটকেন্দ্রে আগুন
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় চারটি ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাতে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান। উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কেন্দ্রগুলো হলো ডাউকি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুরচাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঘবেড় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুর্গাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে কেন্দুয়ার ইউএনও সেলিম মিঞা তিনটি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের কথা নিশ্চিত করেছেন। কেন্দুয়া থানার ওসি এনামূল হক জানান, গ্রাম পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় মানুষ আগুন নিভিয়েছেন।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নে তিনটি ও শিকারপুর ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রে শনিবার সকালে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। ভোটকেন্দ্রগুলো হলো বামরাইল ইউনিয়নের ধামসার প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানুহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হস্তিশুন্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিকারপুর ইউনিয়নের মুণ্ডুপাশা প্রাথমিক বিদ্যালয়। উজিরপুর থানার পরিদর্শক মো. তৌহীদুজ্জামান বলেন, নিরাপত্তাকর্মীদের কারণে কেন্দ্রগুলোর তেমন ক্ষতি হয়নি। কেন্দ্রে পাহারা জোরদার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের নান্দাইল ও গফরগাঁও উপজেলায় দুই ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নান্দাইলে শনিবার ভোরে ৭১ নম্বর হরিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গফরগাঁওয়ে শুক্রবার ভোররাতে পড়শীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। নান্দাইল ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন উপকর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ৭১ নম্বর হরিপুর বিদ্যালয়ের চারটি কক্ষ পুড়ে গেছে। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় যুবদল ও কৃষক দলের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। এদিকে গফরগাঁও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা রাম প্রসাদ পাল বলেন, পড়শীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁদের কর্মীরা আগুন নেভান।
গাজীপুর মহানগরীর পূর্ব চান্দনা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে শুক্রবার মধ্যরাতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভান। গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার ওসি আবু সিদ্দিক বলেন, পূর্ব চান্দনা বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের আংশিক পুড়ে গেছে।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ধলাইরপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে শুক্রবার মধ্যরাতে কে বা কারা আগুন দেয়। এতে কেন্দ্রের আসবাব পুড়ে গেছে। চুনারুঘাট থানার ওসি হিল্লোল রায় বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে স্থানীয় বিএনপির সাবেক এক নেতাকে আটক করা হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র শনিবার ভোরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, দোষী ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার কান্দিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবনে শনিবার সকালে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলায় তেমন ক্ষতি হয়নি।
শেরপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভান্ডারকক্ষে (স্টোররুম) শনিবার সকালে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভায়। সদর থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, এটি নাশকতা কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরমোহন সুরেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি কক্ষে শুক্রবার দিবাগত রাতে আগুন দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যে কোনো পক্ষ কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাবিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে শুক্রবার রাতে আগুন লাগানো হয়। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। স্থানীয় লোকজন এসে তাৎক্ষণিকভাবে তা নিভিয়ে ফেলেন। মৌলভীবাজার সদর থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘মনে হয় ভীতি সৃষ্টির জন্য এটা করা হয়েছে। ’