১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করা হয়

ছবির উৎস,BANGLADESH GOVERNMENT

‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক একটিই’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন পাঁচ দাবির মধ্যে চারটি দাবি নিয়ে এর আগে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেকেই এগুলো চান না। বাহাত্তরের সংবিধান নিয়েও অনেক আগেই প্রশ্ন উঠেছিলো।

” পাঁচ দাবির মধ্যে চারটা দাবি নিয়ে এর আগেই অনেক জন আলোচনা হয়েছে। সেখানে মোটামুটি বোঝা গেছে অনেকে এগুলো চান না। বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে তো অনেক আগেই প্রশ্ন উঠেছে। যারা বাহাত্তরের সংবিধান বানিয়েছিলেন তারাই এতোবার এটা কাঁটা-ছেঁড়া করেছেন যে এটার আর কিছু নাই” বলেন মি. আহমেদ।

কিন্তু ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ দাবির বিষয়ে মি. আহমেদ বলেন বাংলাদেশের একটিই ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’।

“ আমরা জানি যে ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল একটা রিপাবলিক ঘোষণা করা হয়েছিল আমাদের। স্বাধীনতার ঘোষণা-পত্রে ছিল। প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক একটিই। সেই রিপাবলিকটি কর্তৃত্ববাদী শাসকের কারণে গত পাঁচ দশকে ফাংশন করেনি ভালোভাবে। তবে এর দায় শাসকদের” বলেন মি. আহমেদ।

‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গের কথা উল্লেখ করে মি. আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সমালোচনা পরবর্তী সময়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যে ১৯৭১ সালকে অস্বীকার করা হয় নি।

মি. আহমেদ বলেন, “সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ যদি থাকে তাহলে তো ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রও থাকে। সেটা বাহাত্তরের সংবিধানেরও আগে। সেটার ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ ও হয়েছিল, একটা সরকারও হয়েছিল ওই সময়। সুতরাং সেখানে একটা রিপাবলিক ঘোষণা হয়েছিল। পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ বলা হয়েছিল”।

“এখন হঠাৎ আরেকটা রিপাবলিক ঘোষণা করতে হলে তো, রাষ্ট্রের গোড়া ধরে টান দিলে তো বিস্তারিত তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা থাকতে হবে” বলে জানান মি. আহমেদ।

গণঅভ্যুত্থানে যে সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে এই সংগঠনের নেতারাই রয়েছে, ফলে তারাই ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করলে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে বলে মনে করেন মি. আহমেদ।

‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ দাবির মাধ্যমে বিপ্লবের স্বীকৃতি কেন তাদের লাগবে প্রশ্ন তুলে মি. আহমেদ বলেন, “তারা বিপ্লবের স্বীকৃতি চায় কেন? তারা যদি বিপ্লব করে থাকে তারাই তো বিপ্লবী সরকার। কে কাকে স্বীকৃতি দিবে? তারাই তো সরকারে রয়েছে”।

তাদের দাবি অনুযায়ী পাঁচই অগাস্টকে ‘বিপ্লব দিবস’ পালন করলেই চলে বলে মন্তব্য করেন মি. আহমেদ।

মি. আহমেদ মনে করেন, বর্তমান সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়ে সরকারে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনও রয়েছে। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান প্রক্লেমেশনের দাবি প্রসঙ্গে বলেন, “ ছাত্রদল বা ছাত্রশিবির কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনভাবে দলীয় সিদ্ধান্তে এই ধরনের দাবি প্রকাশ করেনি। ছাত্র রাজনৈতিক দলগুলোও তো সার্বজনীন হলে যুক্ত হবে”।

“প্রক্লেমেশন যখন করবেন, তখন তো সেটি সার্বজনীন হতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো এখনো পর্যন্ত পাবলিকলি এই দাবিগুলোর সাথে একমত হয়েছে কীনা সেটাও একটা বিবেচনায় রাখতে হবে” বলে মনে করেন মিজ খান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামের প্ল্যাটফর্মটির ভেতরেই এখন মতাদর্শগত পার্থক্য স্পষ্ট থাকায় এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দাবি দাওয়া বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক জোবায়দা নাসরীন এবং রাশেদা রওনক খান।

তারা বলছেন দাবি সার্বজনীন হতে হলে সেখানে সব শ্রেণি-পেশার, সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান বিবিসি বাংলাকে বলেন,

“ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মের মধ্যে যে মতাদর্শগত পার্থক্য রয়েছে সেগুলো খুব দৃশ্যমান। এই দৃশ্যমান মতাদর্শগত পার্থক্য কাটিয়ে তারা একটা প্ল্যাটফর্মে এসে কথাগুলো বলছেন নাকি মতাদর্শগত পার্থক্যের জায়গাটা এখনো রয়ে গেছে, তা পরিষ্কার নয়”।

“কারণ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে তারাই একমত না সবাই, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যান্য যে আরো চারটা দাবির ক্ষেত্রেও তাইই হবে। অতএব সামগ্রিকভাবে আসলে এই দাবিটা কতটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সেই পাটাতন থেকে করা হচ্ছে?” প্রশ্ন তোলেন মিজ খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন অধ্যাপক জোবায়দা নাসরীন মনে করছেন, জনসমর্থন ছাড়া শুধুমাত্র চাপ প্রয়োগ করে কোন দাবি বাস্তবায়ন করা যায় না।

বিবিসি বাংলাকে মিজ নাসরীন বলেন,

“বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটা মব তৈরি করে পদত্যাগ চাওয়া বা এটাই করতে হবে এরকম চাওয়া আমি মনে করি এটা একভাবে বিপ্লবের স্পিরিটকে খারিজ করে। কারণ বিপ্লবের স্পিরিটের মূল জায়গাই কিন্তু জনগণের শক্তি”।

“ফলে যে দাবীই তারা করুক তা বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মত বা জনসমর্থন অবশ্যই দরকার হবে” বলেন মিজ নাসরীন।