ভারতের প্রথম নোবেলজয়ী পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
ভারতের প্রথম নোবেলজয়ী, তথা ইউরোপের বাইরের কোনও দেশের নাগরিক হিসাবে প্রথম নোবেল পুরষ্কারের সম্মান পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর সেই নোবেলজয়ীর স্মরণে এদিন ‘দ্য নোবেল প্রাইজ’এর তরফে জানানো হয় শ্রদ্ধার্ঘ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এফআরএএস (৭ মে ১৮৬১ – ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ – ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়।১২৬৮ সালের ২৫ শে বৈশাখের পূণ্য লগ্নে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
তাঁর সাহিত্যদর্শন যুগ যুগ ধরে মানুষকে ছুঁয়ে গিয়েছে, যার রেশ চিরন্তন। আর এমন এক ব্যক্তিত্ব কার্যত বাঙালি জীবনের মহীরুহ হয়ে উঠেছেন।
রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বেশি পরিচিত কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি। যা তাকে প্রথম বাঙালি হিসেবে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়। গীতাঞ্জলি, সোনার তরী, কল্পনা, বলাকা, চিত্রা, চৈতালি, মহুয়া, সেঁজুতি, পুনশ্চ, পূরবী, ভগ্ন হৃদয় ইত্যাদি তার প্রসিদ্ধ কাব্যগ্রন্থ। তার কাব্যে যেমন রোমান্টিকতা ছিল, তেমনি ছিল জীবনবোধ ও বাস্তবতার স্বাক্ষর।
আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার
চরণধূলার তলে।
সকল অহংকার হে আমার
ডুবাও চোখের জলে।
নিজেরে করিতে গৌরব দান
নিজেরে কেবলই করি অপমান,
আপনারে শুধু ঘেরিয়া ঘেরিয়া
ঘুরে মরি পলে পলে।
সকল অহংকার হে আমার
ডুবাও চোখের জলে।-কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতার প্রথমাংশ।
কেবল বাঙালি নয়, বিশ্ববাসীকে যিনি বারবার মুগ্ধ করেছেন তাঁর লেখনীতে, গানে, কবিতায়, দর্শনে, তিনি ভারতের প্রথম নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
কবির ১৬১তম জন্মজয়ন্তীতে দিনভর তাঁরই লেখা গান, গল্পে, কবিতায় কবি-স্মরণ
বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা তিনি। বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ-প্রসারে তাঁর অবদান অসামান্য। বাঙালির মননে ও সংস্কৃতি-কৃষ্টিতে তিনি চিরস্মরণীয়। শুধু সাহিত্য ও সংস্কৃতিই নয়, দর্শন, পরাধীন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনেও অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীত রচয়িতা-সুরকার, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী,, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী ও দার্শনিক। নতুন পথের নয়া দিগন্ত রচিত হয়েছিল তাঁর লেখণীতে।
তিনিই গান বেঁধেছিলেন-
‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো।
একলা রাতের অন্ধকারে আমি চাই পথের আলো॥‘
তাঁর লেখা গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক- তাঁর বাণী আজও আমাদের উদ্বুদ্ধ করে, অনুপ্রাণিত করে।
তাঁর চিরস্মরণীয় কিছু অবিস্মরণীয় উদ্ধৃতি-
-“চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি”
– ‘’সুশিক্ষার লক্ষণ এই যে, তাহা মানুষকে অভিভূত করে না, তাহা মানুষকে মুক্তিদান করে।‘’
‘’পৃথিবীর উপকার করার ইচ্ছা থাকলেও কৃতকার্য হওয়া যায় না, কিন্তু তার বদলে যেটা করতে পারি সেইটে করে ফেললে অনেক সময় আপনি পৃথিবীর উপকার হয়, নিদেন একটা কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়।‘’
-“আছে দু:খ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে..”
-“যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।”
-“অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তবে ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।”
– “তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি।”
-“আগুনকে যে ভয় পায়, সে আগুনকে ব্যবহার করতে পারে না।”
-“নিজের অজ্ঞতা সম্বন্ধে অজ্ঞানতার মতো অজ্ঞান আর তো কিছু নাই।”
-“মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন।”
রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব উদ্যাপনের অঙ্গ হল রবীন্দ্রসংগীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, রবীন্দ্রনাট্যাভিনয়, রবীন্দ্ররচনাপাঠ, আলোচনাসভার আয়োজন ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায়ও রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপন করা হতো। ঘটা করে, সাড়ম্বরে এ দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বাঙালির ভাষা ও সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, মন-মানসিকতা বিকাশে রবীন্দ্রনাথের মহীরূহ প্রততীম অবদানের প্রতি ঋণ স্বীকার করে।