মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সম্মুখযুদ্ধ হয় কুষ্টিয়ায়
এই প্রতিরোধযুদ্ধে পাকিস্তানীদের প্রথম পরাজয়ের দৃষ্টান্তও কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়া বাংলাদেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো শত্রু মুক্ত হয় ১ এপ্রিল ১৯৭১ সালে। ৩০ মার্চ এর এই যুদ্ধে প্রথমবারের মতো পাকহানাদাররা ধুলায় লুটিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ এর নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের পর মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রহরেই কুষ্টিয়ায় তারা প্রথমবারের মতো পরাজিত হয়। অফিসারসহ শতাধিক পাকসেনা প্রাণ হারায়। এই সংবাদ বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন, ফরাসী টেলিভিশন সহ বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্র্রচারিত হলে তাদের সম্মান লুণ্ঠিত হয় অপরদিকে বিশ্বব্যাপী বাঙালির মুক্তির পক্ষে জোরালো সমর্থন আসতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরী হতেও এই যুদ্ধ সহায়ক ভূমিকা রাখে।
স্বাধীনতা মূলমন্ত্র এসেছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিত ৭ মার্চের ভাষণের মধ্যে দিয়ে।
পাকি বুলেটে ঢাকা শহরেই ৫০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। সেই কালরাত থেকেই পাকহানাদাররা সারাদেশে নিষ্ঠুর হত্যাকা-, অত্যাচার, নিপীড়ন চালাতে থাকে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। মূলত মার্চই বাংলাদেশ। অগ্নিঝরা মার্চে বীর বাঙালিরা কঠিন ইস্পাতঐক্য গড়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অগ্নিঝরা মার্চে মুক্তিকামী বাঙালিদের মননে মুক্তির মন্ত্রণা পায়। ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা আসম আব্দুর রব, নুরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ ও আব্দুল কুদ্দুস মাথন। যুদ্ধকালীন এই পতাকার ডিজাইনার ছিলেন কুমিল্লার শিবচন্দ্র।
৩ মার্চ থেকে চলতে থাকে সারাদেশে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পতাকা উত্তোলন তারই ধারাবহিতকতায় কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজের মাঠে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় লাল সবুজের ছয়টি তারা খচিত একটি পতাকা স্বাধীন বাংলার পতাকা হিসাবে উড়িয়ে দেন কুষ্টিয়া জেলা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ও জেলা ছাত্রলগের সভাপতি আব্দুল জলিল।
স্বাধীন বাংলার ইশতেহার পাঠ করেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হাদী। মারফত আলী, আব্দুল মোমেন, শাসসুল হাদীর নেতৃত্বে গঠিত হয় জয় বাংলা বাহিনী। ২৩ মার্চ কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে পুনরায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য গোলাম কিবরিযা (এমপিএ) ও আব্দুর রউফ চৌধুরী এবং তারা জয় বাংলা বাহিনীর অভিবাবদন গ্রহণ করেন। যুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে থাকে। কুষ্টিয়ার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে জয় বাংলা বাহিনী গঠিত হয়।
সেই কালো রাতে ঢাকা সহ সারাদেশে পাক হানাদাররা ইপিআর সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করে নেয়। তেমনিভাবে কুষ্টিয়াতেও সেইন২৫ মার্চ ১৯৭১ রাত পৌনে বারোটায় মেজর শোয়েবের নেতৃত্বে এবং ক্যাপ্টেন শাকিল, ক্যাপ্টেন সামাদ ও লেঃ আতাউল্লাহ শাহ এর উপঅধিনায়কত্বে ২৭ বেলুচ রেজিমেন্ট এর ডি-কোম্পানীর ২১৬ জন সৈন্য কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন আক্রমণ করে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিরস্ত্র করে। ডিউটিরত পুলিশরা আগে থেকেই আঁচ করতে পারে এবং তারা অস্ত্র নিয়ে নদী সাঁতরে পার হয়ে আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তানী সৈন্যরাহিনী পুলিশ লাইন, জিলা স্কুল, টেলিগ্রাফ অফিস, থানা ও আড়ুয়াপাড়া অফিস দখল করে তাদের ঘাটি গড়ে তোলে।
২৬ মার্চ সমস্ত শহরে ২৪ ঘন্টার জন্য কারফিউ জারী করে পাক সেনারা শহরময় টহল দিতে থাকে।টহলের মধ্যেই কুষ্টিয়ার ছাত্র, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ যেনো আগে থেকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। ২৭ মার্চ কুষ্টিয়া নবাব সিরাজউদদৌলা রোডে মিউনিসিপিউলিটি মার্কেটের সামনে বিকেলে ভাষা সৈনিক নাজিম উদ্দিন আহমেদের শ্যালক কুষ্টিয়া কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রনি রহমান হাতবোমা নিক্ষেপ করে। পরে সেনাবাহিনীর গুলিতে তিনি শহীদ হন। রনি রহমানই মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার প্রথম শহীদ।
রনি রহমানের শহীদানের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার মানুষ প্রতিশোধ নিতে ২৯ মার্চ কুষ্টিয়া জেলা স্কুল, পুলিশ লাইনন্স ও টেলিগ্রাফস্থ পাক হানাদার ক্যাম্প আক্রমনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ৩০ মার্চ ভোর চারটায় আক্রমণ করে। মেজর ওসমান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণাধীন আনুমানিক ৭০০ বাঙালি ইপিআর সৈন্য ছিল। সহস্রাধিক আনসার, মুজাহিদ ও পুলিশ তার বাহিনীর সাথে যোগ দিয়েছিল। যোগাযোগ রক্ষা র জন্য পোড়াদহের খেলার মাঠে একটি একচেঞ্জ এর মাধ্যমে কুষ্টিয়া যুদ্ধ ক্ষেত্র ও চুয়াডাঙ্গা সদর দপ্তরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়।
এমপিএ ডা: আসহাব-উল –হক ফিল্ড চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন ও প্রযোজনীয় ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করলেন। আর তৎকালীন এমএনএ আজিজুর রহমান আক্কাস, বারিস্টার আল ইসলাম,ব্যারিস্টার বাদল রশিদ, সহিউদ্দিন আহমেদ, সেসময়ের এমপিএ আব্দুর রউফ চৌধুরি, গোলাম কিবরিয়া, ইউনসি আলী, নুরুল হক, জহিরুল হক রাজা মিয়া, আহসানউল্লাহ এবং খন্দকার শামসুল আলম দুদু, নূর আলম জিকু, রশিদুজ্জামান দুদু, এম এ বারী, অধ্যাপক নুরুজ্জামান, আনোয়ার আলী, আব্দুল মোমেন, শামসুল হাদী কুষ্টিয়া পাক আর্মির অবস্থান, সৈন্য সংখ্যা, অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে সম্ভাব্য আক্রমণের একটি নকসা তৈরী করে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, দৌলতপুর ইপিআরদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। আব্দুর রউফ চৌধুরীর নেতৃত্বে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মাঙ্গন মিয়া সহ আরো কয়েক জন সেনা সংগ্রহের দায়িত্বে থাকেন।
কুষ্টিয়ার নেতৃবৃন্দরা নকসার উপর ভিত্তি করে ২৮ মার্চ রাতে চুয়াডাঙ্গার ইপিআর সেক্টর কামন্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন আযম চৌধুরীর সঙ্গে কুষ্টিয়া আক্রমনের পরিকল্পনা করে।কুষ্টিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি কোম্পানী ঝিনাইদহ এসে পৌছায় এবং যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক অবরোধ করে।যশোর সেনানিবার থেকে পাকবাহিনী আসতে চাইলে তা প্রতিহত করাই ছিল এই অবরোধের উদ্দেশ্য।২৯ মার্চ ভোর চারটায় আক্রমণ করার কথা ছিল কিন্তু গাড়ি দুর্টনার জন্য সুবেদার মোজাফফর ক্ম্পোানী যথাসমেয় এসে পৌছেতে পারেনি, তারপর ৩০ মার্চ ভোর চারটায় তিনদিক থেকে পাকঘাটিগুলো সংযুক্তভাবে আক্রমণ করা হয়।
কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, পুলিশ লাইন , আড়ুয়াপাড়াস্থ অয়ারলেস স্টেশন এই তিনটি ছিল পাকিস্তানীদের প্রধান ক্যাম্প—এছাড়াও ছিল থানা ও টেলিফোন একচেঞ্জ। তিনদিক থেকে একই সময়ে যুগপৎ তিনটি পাকঘাটির ওপর প্রবলভাবে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করা হয়। ক্যাপ্টেন আযম চৌধুরীকে জিলা স্কুলে অবস্থানরত পাকিস্তানী সৈন্যদের আক্রমণ করতে আদেশ দেয়া হয়এবং তিনি ডিসি(ফুড) সাহেবের বাড়িতে বসে যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকেন।
নায়েব সুবেদার মনিরুজ্জামানকে (শহীদ) আড়ুযাপাড়াস্থ ওয়ারলেস স্টেশন আক্রমণ করতে আদেশ দেয়া হয়। ইপিআর বাহিনীর সাথে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান নেয় নূর আলম জিকু, আবুল কাশেম ও এ্যাডভোকেট আব্দুল বারী, ছাত্র, জনতা, ইপিআর, পুলিশ, আনসারহ জয় বাংলা বাহিনী। সুবেদার মোজাফফরকে পুলিশ লাইন আক্রমণের আদেশ দেয়া হয়—এই গ্রুপে মুক্তিবাহিনীসহ ছাত্র জনতা পুলিশ লাইন সংলগ্ন জজ সাহেবের বাড়ি ও আশে পাশে অবস্থান নেয়। কুষ্টিয়া থানা ও টেলিফোন একচেঞ্জ আক্রমনের জন্য ট্রাাফিক মোড়ে রউফ চৌধুরীর বাড়ি হতে হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণের জন্য জাহেদ রুমি, শামসুল হুদা সহ ছাত্র ইউনিয়নের নতা, কর্মী ও ছাত্রলীগের ছেলেরা এবং ২৫ মার্চ হরিপুরে আশ্রয় নেয়া পুলিশ সদস্যগণ অবস্থান নেন। ৩০ মার্চ ভোর চারটায় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভোড়ামারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কুষ্টিয়া শহরকে বিচ্ছিন্ন কারর পর একটি অপেনিং ফায়ারের সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়ার চারদিক থেকে পাক সেনাদের উপর আক্রমণ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সামান্য রাইফেল কয়েকটি এলএমজি আর অফুরন্ত মনোবল,অদম্য সাহস ও দেশপ্রেশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ঝাপিয়ে পড়েন।
৩০ মার্চ ভোর চারটায় প্রথম সুবেদার মোজাফফরের অধীনস্থ কোম্পানী পুলিল লাইনের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একটি বাড়ির তিনতলা থেকে আগত এক কোম্পানী আনসার ও এক কোম্পানী মুজাহিদ এ্ই যুদ্ধে যোগ দেয়। হাজার হাজার মানুষ আক্রমণের সাথে সাথে মুহুর্মুহু ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিতে থাকেসারাদিন যুদ্ধের পর বিকাল ৫টায় কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে।
ভোর থেকে শুরু হয়ে বিকাল পযন্ত চলা এই যুদ্ধে পাক সেনাদের অধিকাংশই নিহত হয়। কুষ্টিয়া শহরের তিনটি প্রধান ঘাটি পুলিশ লাইন, জিলা স্কুল ও ওয়্যারলেস এর মধ্যে শুধু মাত্র জিলা স্কুল ছাড়া সব মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। বিজয়ের আনন্দে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল শক্তিতে জেলা স্কুল চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং অবিরাম আঘাত হানতে থাকে। রাতের অন্ধকারে জীবিত প্রায় ৪০-৪৫ জন পাকসেনারা ২টি জীপ ও ২টি ডজ গাড়িতে করে ঝিনাইদহের পথে পালাবার চেষ্টা করে। পলায়নকালের আগেই শৈলকুপার সেতুর কাছে মুক্তিবাহিনীরা আগে থেকেই এমবুশ করে রাথে। সেতুটি ভেঙ্গে বাঁশের চাটাই দিয়ে ঢেকে আলকাতরা দিয়ে রঙ করে পীচঢালা রাস্তার মতো করে রাখে। পলায়নরত পাকসেনাদের গাড়ি দুটি গর্তের মধ্যে পড়ে গেলে মুক্তিবাহিনী অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে। এখানে মেজর শোয়েবসব বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়।অবশিষ্ট পাকসেনা আহত অবস্থায় আশেপাশের গ্রামে পালিয়ে যায়। গ্রামবাসীরা এসব পাকসেনাদের পিটিয়ে হত্যা করে।
৩১ মার্চ আহত অবস্থায় লে: আতাউল্লআহ শাহ ধরা পড়ে। ১লা এপ্রিল কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত হয়।২রা এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় মেজর ওসমান চৌধুরী তার জবানবন্দি দেন। এই যুদ্ধে মাত্র ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং কয়েকজন আহত হন। শহীদ মুক্তিযযোদ্ধারা হলেন : হামেদ আলী-পিতা –ওমোদ আলী, গ্রাম-দুধকুমড়া, কুমারখালী দেলোয়ার হোসেন পিতা-আলম হোসেন, মিরপুর, খন্দকার আব্দুর রশিদ পিতা-আব্দুর রহমান, গ্রাম-বামনপাড়া, মেহেরপুর, ফজলুর রহমান পিতা-নাসির উদ্দিন, গ্রাম-মেহেরপুর, আশরাফ আলী খান-পিতা হাছেন আলী খান,বামনপাড়া, মেহেরপুর, গোলাম শেখ পিতা-নজীর শেখ, গ্রাম-মশান, মিরপুর। আহত হন-আব্দুল মোমেন পিতা-আব্দুল করিম, কোর্টপাড়া, কুষ্টিয়া, আনসার আলী পিতা-আজগর আলী, চাপাইগাছি, কুমারখালী,কুষ্টিয়া আরও অনেকে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘কুষ্টিয়ার যুদ্ধ’ পাকিস্তানি বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব ধুলায় লুটিয়ে দেওয়া তথা পরাজয়ের প্রথম উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত, যা নিয়ে সাংবাদিক ড্যান কগিন বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের (১৯১৭) ১৯ এপ্রিল সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনী রচনা করেন। সেই কারণে কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীণতার ইতিহাসের এক নজিরবিহীন উদাহরণই শুধু নয় রক্তাক্ষরে লেখা থাকবে এই বীরত্মগাথা। কুষ্টিয়ার যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে প্রাথমিকভাবে একটি বড় ধরনের বিজয়।
এ যুদ্ধ জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করে। প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও যানবাহন মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। অপরদিকে পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে এবং মুক্তিবাহিনী সম্পর্ক তাদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের এই বীরত্মগাথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনালগ্নেই কুষ্টিয়ার দামাল ছেলেদের কাছে পাকসেনাদের পরাজয় ইতিহাসের এক অনন্য মাইফফলক। বাংলাদেশের একমাত্র জেলা কুষ্টিয়া ১ এপ্রিল থেকে টানা ১৬ দিন শত্রুমুক্ত ছিল যা স্বাধীনতা যুদ্ধকে পরবর্তীতে বেগবান করতে অনন্য ভূমিকা রেখেছিল।
বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা যেটা এখন মুজিবনগর সেখানে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠন করে এই ইতিহাস সবার জানা। রণাঙ্গনে যখন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা হাতে অস্ত্র নিয়ে বীরত্বের সাথে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর জামায়াত ও মুসলীম লীগের দালালদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যুদ্ধরত তখন সারাদেশে কিছু বাঙালি হাতে কলম তুলে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য ও পাক হানাদারদের কারযক্রম তুলে ধরতে তারা বহু পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন এবং নিয়মিত প্রতিবাদ লেখা, সংবাদ ছাপতে থাকেন্।
সেইসময় বাংলাদেশে এই ধরনের একটি পত্রিকা হলো স্বাধীন বাংলা। স্বাধীন বাংলা বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা যা প্রকাশিত হয়েছে কুষ্টিয়ার মুজিবনগর থেকে। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার শামসুল আলম দুদুর প্রকাশনায়, সাপ্তাহিক মশাল সম্পাদক ওয়ালিউল বারী চৌধুরীর সম্পাদনায় ও সাপ্তাহিক দর্শক সম্পাদক লিয়াকত আলীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদনায় মুজিবনগর থেকে ১লা মে ‘স্বাধীন বাংলা’ নামের সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করেছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলীরা অধিকাংশ ছিলেন কুষ্টিয়ার। সুরসৈনিক আব্দুল জব্বারের কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতারের ‘জল্লাদের দরবার’ অনুষ্ঠানটির কথা যারা সেদিন শুনেছিলেন তাদের মধ্যে এখনো যারা বেঁচে আছেন নিশ্চয় তাদের মানসপটে ভেসে ওঠে রাজু আহমেদ ও বাবুয়া বোসের নাম। যা স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত হতো নিয়মিত–এই রূপক ও রম্য নাটকে কুষ্টিয়ার সন্তান রাজু আহমেদের সাবললীয় অভিনয় মন্ত মুগ্ধের মতো মানুষ শুনেছে এবং অনেক দামাল ছেলেদের যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্যমী করেছে। জল্লাদের দরবার’ এর রচয়িতা কুষ্টিয়ার কল্যাণমিত্র এবং এই বেতারকেন্দ্রে আরও ভূমিকা রেখেছিলেন কুষ্টিয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম আমিনুল হক বাদশা।
১১ এপ্রিল পাকহানাদার লুটেরা শাসকগোষ্ঠি বহুগুণ শক্তি নিয়ে আবারো কুষ্টিয়ার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। কারণ মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার পাক সেনাদের এই পরাজয় পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি কোনভাবে মেনে নিতে পারেনি। ১১ এপ্রিল পাকিস্তানি বিমান বহর কুষ্টিয়া ও কুমারখালীর উপর আক্রমণ করে। বহু বাঙালি মৃত্যুবরণ করে।
১২ এপ্রিল পুনরায় বিমান হামলা হলে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা গুলিবর্ষণে একটি পাকিস্তানী জঙ্গী বিমান জেলখানার গেটের ওপর ভেঙ্গে পড়ে বিধ্বস্ত হয়।
১৫ এপ্রিল বিমান বহরের কভারে পাকসেনাদের পদাতিক বাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঝিনাইদহের বিশাখালী পয্যন্ত পৌছে,আরেক পদাতিক বাহিনী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নগরবাড়ী ঘাট পার হয়ে পাকশি হাার্ডিং ব্রিজের অপর পাড়ে এসে অবস্থান নেয়। উভয় জায়গায় মুক্তিবাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়। পাকসেনাদের মর্টার এইচ এমজি সহ অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্রের গোলার মুখে মুক্তিবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং পিছু হটতে বাধ্য হয়। এইসময় পাকহাসাদার বাহিনী কুষ্টিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
১৭ এপ্রিল পাকিস্তানী বিমান হামলা প্রচ- আকার ধারণ করে।বিমান বাহিনীর ছত্রছায়ায় পাকবাহিনী ভেড়ামারা-কুষ্টিয়া সড়কের দুইধারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সাধন করে। বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তারা শত শত বেসামরিক নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে।
১৬ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তানী সৈন্যরা এই ১৪দিনেই কুষ্টিয়া জেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করে এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুট করে। বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্ট মে; ১৯৭১ এর কুষ্টিয়া সম্পর্কে বলা হয়, শহরের প্রয় ৯০ ভাগ বাড়ি, দোকান, ব্যাংক প্রভূতি সমন্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। এমনি করে পাকজান্তারা সারাদেশে নয় মাস ব্যাপক ম্যাচাকার করেছে যা বি¤॥^ মিডিয়ার সেই সময় প্রকাশিত। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এই জেলায় ১০ জন। তাঁদের মধ্যে বীর উত্তম ২ জন, বীর বিক্রম ১ জন ও বীর প্রতীক ৭ জন। বীর উত্তম ২ জন হলেন কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের শহীদ গ্রুপ ক্যাপ্টেন শরাফ উদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম এবং একই ইউনিয়নের বেড়কালোয়া গ্রামের শহীদ সিপাহী আবু তালেব বীর উত্তম। এছাড়া এই জেলায় বীর বিক্রম ১ জন হলেন শহীদ সাইফুল্লাহ খালেদ তারেক বীর বিক্রম। বীর প্রতীক ৭ জন হলেন : শহীদ দিদার আলী বীর প্রতীক, আব্দুল আলীম বীর প্রতীক, শহীদ মোঃ শামসুদ্দিন বীর প্রতীক, শহীদ েেকএম রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীক, শহীদ গোলাম ইয়াকুব আলী বীর প্রতীক, শহীদ হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, মেজর জেনারেল (অব) আনোয়ার হোসেন বীর প্রতীক। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে পাওয়া যায় ৪৪টি ছোট বড় যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে কুষ্টিয়ার যুদ্ধে।
কুষ্টিয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাবেক কাম-ার নাসিম উদ্দিন আহমেদ-এর মতে কুষ্টিয়া ৪৪টি যুদ্ধ হয়। এরে মধ্যে ৩৩টি ক্যাজুয়ালী যুদ্ধ সংগঠিক হয়েছে। দৌরতপুরে ১৯টি, মিরপুরে ৮টি, কুষ্টিয়া সদরে ৮টি, কুমারখালীতে ৬টি, ভেড়ামারায় ২টি ও খোকসায় ১টি। যুদ্ধে শতাধিক শতাধিক শহীদ হন। আহত হন প্রায় আড়াই শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
উল্লেখযোগ্য সম্মখ যুদ্ধ হলো: বংশীতলা, দুর্বাচারা, কাকিলাদহ-আবুরী, দৌলতপুর ধর্মদহের আদাবড়িয়ার ব্যাংগাড়ী মাঠ, ডাঁশা-সান্দিয়ারা চাষী ক্লাব, ঘাসখাল যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় যাঁদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে সেই সকল সারথিরা হলেন লাখো লাখো স্থানীয় জনগণ সহ আজিজুর রহমান আক্কাস (তৎকালীন এমএনএ), ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম (তৎকালীন এমএনএ ও প্রধানমন্ত্রীর পিএস), ছহিউদ্দিন আহমেদ (এমএনএ), ব্যারিস্টার বাদল রশিদ(এমএনএ ও মুক্তিযুদ্ধে লিয়াজো অফিসার) গোলাম কিবরিয়া (এমপিএ), জহুরুল হক রাজা মিয়া-এমপিএ, আব্দুর রউফ চৌধুরী-এমপিএ, ডা: আসহাব-উল-হক জোয়ারদার (তঃকালীন এমপিএ এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী সরকার পরিচালিত বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান), এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী (এমপিএ), এ্যাড: আহসান উল্লাহ(এমপিএ), মো: নুরুল হক (এমপিএ। এছাড়াও আরও যাদের অবদান রয়েছে তারা হলেন শামসুল হক (তৎকালীন ডিসি, কুষ্টিয়া), তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী (তৎকালীন এসডিও, মেহেরপুর) সহ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে কুষ্টিয়ার যুদ্ধই পাকিস্তানীদের প্রথম পরাজয়ের উজ্জ্বল উদাহরন— আর এ্রর সামনে থেকে অগ্রণী সেনানায়কের ভূমিকায় ছিলেন যুদ্ধ চলাকালীন আগস্টতক ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার )মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন এ এম আযম চৌধুরী বীর বিক্রম।
২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনী কতৃক ইপিআর বাহিনীর আক্রান্ত হওয়ারে খবর এবং কুষ্টিয়ায় পাকসেনাদের আগমনের খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইপিআর বিডিআর থেকে বিজিবি)-এর যশোর সেক্টরের নিয়ন্ত্রণাধীন ৪ নং উইং-এর সদর দপ্তর ছিল চুয়াডাঙ্গা শহরে। ৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পশ্চিম পকিস্তান থকে বদলি হয়ে মেজর এম এ ওসমান চৌধুরী(অব: লে. কর্নেল) উইং কমা-ার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবয় যুদ্ধ চলাকালীন আগস্ট পরযন্ত ৮ন¤॥^র সেক্টর কমা-ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন)।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই কুষ্টিয়ার সশস্ত্র যুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থান ইতিহাসের উজ্জ্বলতম উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কুষ্টিয়ার উত্তাল জনতার গণবিদ্রোহ যাঁরা সেদিন সচক্ষে দেখেছিলেন তারা বুঝবেন—এতো বিদ্রোহ কেউ কখনো দেখেনি। হাজার হাজার জনতা ঢাল, সড়কি, বল্লম,, লাঠি নিয়ে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নিয়ে গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করেছিল। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসী তরুণেরা ও বাঙালী সৈনিতেরা অমিত তেজে অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা ধরে যেসব মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন স্বাধীনাতার জন্য আত্মবলিদানের মহান প্রত্যয়ে, সুমহান দেশপ্রেমের অঙ্গিকারে সংগ্রামী মানুষের কাতারে সামিল হয়েছিলেন—ইতিহাসে তাদের অনেকের নামই কখনো উল্লেখ থাকবে না তবুও সেই মহাজাগরণের অবিস্মরণীয় মুহূর্তে জাতির ক্রান্তিলগ্নে, দেশের চরম দুর্দিনে অস্ত্র হাতে যারা লড়ােই করেছিলেন—ইতিহাস ব্যর্থ হলেও তারা অনাদিকাল পর্ন্ত বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে এখনো যাদের নাম আসেনি এমন বীর অজানা থেকে গেছে ইতিহাসের দায়বদ্ধতা এতে থেকেই যায় যদিও সব নাম এই ৫০ বছরে তুলে আনা সম্ভব নয় এর জন্য সময় ঘাতে কমপক্ষে শতবছরেরও বেশি। হতে পারে বাদপড়া ঐ সকল এক একটি নামই একটি স্মারক গ্রন্থ হওয়ার দাবী রাখে।
সূত্র: জনকন্ঠ লেখক : লিটন আব্বাস তথ্যসূত্র: : যুদ্ধ বুলেটিন ১৮ সেপ্টেম্বর, ১০ নবেম্বর, ১৪ নভেম্বর, ১৭ নভে¤॥^র ১৯৭১ বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিব নগর, জনসংযোগ বিভাগ : ক্যাটাগরিস ১৭-০৬-১৯৭১ ও ২২-০৬-১৯৭১, ডিস্ট্রিক্ট-কুষ্টিয়া : মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে কুষ্টিয়ায় প্রতিরোধ যুদ্ধ/ /লে. ক. (অব:)আবু ওসমান চৌধুরী/প্রথম আলো/২ ডিসেম্বর’ ২০২০ : সম্মুখযুদ্ধ ১৯৭১, মুক্তিযোদ্ধাদের কলমে, প্রথমা প্রকাশন ২০২০, পৃষ্ঠা ৪৭-৫৬ : মুক্তিযুদ্ধের দু’শো রণাঙ্গন-কুষ্টিয়া যুদ্ধ-মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি সম্পাদিত : মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়া-কুষ্টিয়া পৌরসভা ডট ব্লগস্পট ডট কম ; অনির্বাণ/বিজয় দিবস রজত জয়ন্তী-১৯৯৬-জেলা প্রশাসন, কুষ্টিয়া : বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ড,কুষ্টিয়া। : কুষ্টিয়ার ইতিহাস/শ.ম শওকত আলী সম্পাদিত : মুক্তিযুদ্ধের নীরব স্বাক্ষী কুষ্টিয়ার র্দ্বুাচারা/জাহিদুল আলম জয়/দৈনিক জনকণ্ঠ ২০১২ : কুমারখালীর সান্দিয়াড়া –ডাঁশার চাষী ক্লাবের মুক্তিযুদ্ধ’’/এম এ মনিম তুহিন-২৯ মার্চ ২০০৯/কুমারখালী বার্তা : একরাতের স্মৃতি কথা/শরিফুল ইসলাম মাসুম-জি.ডি শাসসুদ্দিন আহমেদ কলেজিয়েট স্কুল স্মরণিকা/৮ মার্চ ২০১৪। : বৃহত্তর কুষ্টিয়ার ইতিহাস/১ম-৩য় খ-/বিলু কবীর সম্পাদিত-২০১৭ : কুমারখালী মুক্ত দিবস/লিটন আব্বাস/১৯৯৪-২০১৪ : মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস-কুষ্টিয়া জেলা/সোহেল আমিন বাবু/তাম্রলিপি-২০১৭।