ফুটবলের যাদুকর বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার পেলে ৮২ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন
রুহল কুদ্দুস টিটো
ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফুটবলার এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো, সারা বিশ্বে যিনি পেলে নামে বিখ্যাত, ৮২ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন।পেলের জন্ম ২৩ অক্টোবর ১৯৪০ ― মৃত্য ২৯ ডিসেম্বর ২০২২।
একজন ব্রাজিলীয় পেশাদার ফুটবলার ছিলেন এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু ব্রাজিলীয় পর্তুগিজ ভাষায়,যিনি পেলে (পর্তুগিজ উচ্চারণ: [peˈlɛ]) নামে অধিক পরিচিত, পেলে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন। তিনিই হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার। তাকে ফুটবলের সম্রাট বলা হয়। ব্রাজিলের হয়ে তিনি ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি ব্রাজিলের জাতীয় দলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও তিনবার বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার। বিতর্ক হলেও অনেকে তাকেই সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় মনে করেন।
পেলে ১৯৫৭ সালের ৭ জুলাই মারাকানা স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ২-১ ব্যবধানে হারা সেই ম্যাচে ১৬ বছর ৯ মাস বয়সে ব্রাজিলের পক্ষে প্রথম গোল করে পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার স্থান দখল করেন।
১৯৫৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে পেলে তার প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেন। ১৯৫৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের সেই ম্যাচটা ছিল প্রতিযোগিতার তৃতীয় খেলা। সেই বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ (এবং তখন পর্যন্ত যেকোন বিশ্বকাপ খেলায় সর্বকনিষ্ঠ) খেলোয়াড় পেলের সতীর্থ ছিলেন গ্যারিঞ্চা, যিতো এবং ভাভা। ওয়েলসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে করা গোলটি ছিল প্রতিযোগিতায় পেলের প্রথম এবং সেই ম্যাচের একমাত্র গোল, যার সাহায্যে ব্রাজিল সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হয়। ম্যাচের সময় পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন, বিশ্বকাপের গোলদাতাদের মধ্যে সবচেয়ে কম।
১৯৬৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের ১ম খেলায় বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হলেও হাঙ্গেরীর বিরুদ্ধে ২য় খেলায় ব্রাজিল হেরে যায়। এর পূর্বে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হলেও তিনি গুরুতর আঘাত পান। তারপরও কোচ ভিসেন্তে ফিওলা সকলকে আশ্চর্যান্বিত করে গ্রুপের শেষ খেলায় পর্তুগালের বিপক্ষে পেলেকে মাঠে নামান। তিনি পুরো রক্ষণভাগ পরিবর্তন করে ফেলেন। এমনকি গোলরক্ষকও বাদ পড়েননি। আক্রমণভাগে তিনি জায়ারজিনহো এবং পরিবর্তিত দু’জন খেলোয়াড়কে দেন। মধ্যমাঠে তিনি প্রথম খেলার ন্যায় সাজান। যদিও তিনি জানতেন যে, পেলে তখনো তার মারাত্মক জখমকে কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
১৯৭০ সালের আগের বিশ্বকাপের ব্যর্থতা মুছে ফেলে আবারও শিরোপা জিতে নেয় ব্রাজিল। টানা চারটি টুর্নামেন্টের তিনটিরই ট্রফি ওঠে তাদেরই হাতে। পেলে খেলেন তার চতুর্থ বিশ্বকাপের শেষটি। প্রতিটা ম্যাচে গোল করেন জেয়ারজিনহো। ফাইনালে ইতালিকে ৪-১ গোলে গুঁড়িয়ে দেয় ‘ক্যাপ্টেন’ কার্লোস আলবার্তো। দল তিনবার শিরোপা জেতায় জুলে রিমে ট্রফিটা একেবারেই দিয়ে দেওয়া হয় ব্রাজিলকে। সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন পেলে। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের পর নিজেকে সর্বকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করেন পেলে।
মাত্র সতের বছর বয়সে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন পেলে সুইডেনের ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ে ব্রাজিল দলের হয়ে দারুণ ভূমিকার জন্য।
তার ২১ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে ১৩৬৩ ম্যাচ খেলে রেকর্ড ১২৮১ গোল করেন পেলে। এর মধ্যে ব্রাজিলের হয়ে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি আন্তর্জাতিক গোলও রয়েছে তার।
মূলত তিন তিনবার বিশ্বকাপ জয় করার জন্য পেলে বিখ্যাত হয়েছেন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড়- নারী কিম্বা পুরুষ- যিনি এতবার বিশ্বকাপ জয় করেছেন।
১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ জয় করেছেন এবং ২০০০ সালে ফিফা তাকে শতাব্দী সেরা খেলোয়াড় ঘোষণা করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি কিডনি ও প্রস্টেট সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন।
তার কন্যা কেলি নাসিমেন্তো হাসপাতাল থেকে তার পিতার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ খবর ভক্তদের জানাচ্ছিলেন প্রতিনিয়ত সামাজিক মাধ্যমে।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকেই তিনি লিখেছেন, “আমাদের সব কিছুর জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমরা তোমাকে সীমাহীন ভালোবাসি। শান্তিতে ঘুমাও”।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও পেলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে, “কোলন ক্যান্সারসহ আগের সমস্যাগুলোর ফলস্বরূপ অনেকগুলো প্রত্যঙ্গ অকার্যকর হয়ে পড়া’কেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন বলেছেন সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের চেয়েও বেশি কিছু ছিলেন পেলে।
“বিজয়ী ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলে আমাদের ফুটবলের রাজা। যিনি কখনো কঠিন সময় মোকাবেলা করতে ভয় পাননি। তিনি তার পিতাকে একটি বিশ্বকাপ এনে দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু আমাদের উপহার দিয়েছেন তিনটি”।
“রাজা আমাদের নতুন ব্রাজিল উপহার দিয়েছিলেন এবং আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ, পেলে”।
পেলের সাবেক ক্লাব সান্তোষ তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানের বিস্তারিত ঘোষণা করেছে।
সোমবার সকালে তার মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে ক্লাবের এস্তাদিও উরবানো কালদেইরা’য় আনা হবে যেখানে মাঠের মাঝখানে কফিন রাখা হবে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
মঙ্গলবার শোভাযাত্রা সহকারে পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।
তথ্যসূত্র:উইকিপিডিয়া/ বিবিসি বাংলা