সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সুনীলের পিতা তাকে টেনিসনের একটা কাব্যগ্রন্থ দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিদিন এখান থেকে দুটি করে কবিতা অনুবাদ করবে। এটা করা হয়েছিল এ জন্য যে তিনি যেন দুপুরে বাইরে যেতে না পারেন। তিনি তা-ই করতেন। বন্ধুরা যখন সিনেমা দেখত, সুনীল তখন পিতৃ-আজ্ঞা শিরোধার্য করে দুপুরে কবিতা অনুবাদ করতেন। অনুবাদ একঘেয়ে হয়ে উঠলে তিনি নিজেই লিখতে শুরু করেন।
আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ
এই কী মানুষজন্ম? নাকি শেষ
পরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধ্যেবেলা
আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা
করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে
থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে
হেসে উঠি না, আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,
মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে; খাঁটি
অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-
(ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)
আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়িরে ছেলে
সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক
ঘামে ছিল না এমন গন্ধক
যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পার। নিখিলেশ, তুই একে
কী বলবি? আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেকেরে
বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কিনা;
আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না।
আমি ফুলের পাশে ফূল হয়ে ফূটে দেখেছি, তাকে ভালোবাসতে পারি না।
আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম,
আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
নিখিলেশ, আমি এই-রকমভাবে বেঁচে আছি, তোর সঙ্গে
জীবনবদল করে কোনো লাভ হলো না আমার -একি নদীর তরঙ্গে
ছেলেবেলার মতো ডুব সাঁতার?- অথবা চশমা বদলের মতো
কয়েক মিনিট আলোড়ন? অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত
দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা? কেননা সময় নেই,
আমার ঘরের
দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়। মৃত গাছটির পাশে উত্তরের
হাওয়ায় কিছুটা মায়া লেগে ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে
দেখি উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল, তবুও অক্লেশে
হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি। আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার
একটি মুহূর্ত চেয়েছিলাম, একটি ….., ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার;
ইচ্ছে ছিল না জানাবার
এই বিশেষ কথাটা তোকে। তবু ক্রমশই বেশি করে আসে শীত, রাত্রে
এ-রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না, রোজ অন্ধকার হাত্ড়ে
টের পাই তিনটে ইঁদুর না মূষিক? তা হলে কি প্রতীক্ষায়
আছে অদুরেই সংস্কৃত শ্লোক? পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এই অবেলায়
কিছুই মনে পড়ে না। আমার পূজা ও নারী-হত্যার ভিতরে
বেজে ওঠে সাইরেন। নিজের দু’হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে
তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের। আজকাল আমার
নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। এরকম সত্য
পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষার জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাংলা ভাষায় এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পঙ্ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় “নীললোহিত”, “সনাতন পাঠক”, “নীল উপাধ্যায়” ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
নীললোহিত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম। নীললোহিতের মাধ্যমে সুনীল নিজের একটি পৃথক সত্তা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। নীললোহিতের সব কাহিনিতেই নীললোহিতই কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে নিজেই কাহিনিটি বলে চলে আত্মকথার ভঙ্গিতে। সব কাহিনিতেই নীললোহিতের বয়স সাতাশ। সাতাশের বেশি তার বয়স বাড়ে না। বিভিন্ন কাহিনিতে দেখা যায় নীললোহিত চির-বেকার। চাকরিতে ঢুকলেও সে বেশিদিন টেকে না। তার বাড়িতে মা, দাদা, বৌদি রয়েছেন। নীললোহিতের বহু কাহিনিতেই দিকশূন্যপুর বলে একটি জায়গার কথা শোনা যায়। যেখানে বহু শিক্ষিত, সফল কিন্তু জীবন সম্পর্কে নিস্পৃহ মানুষ একাকী জীবনযাপন করেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায়। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি “কাকাবাবু-সন্তু” নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম মাদারীপুর জেলায়,কালকিনি থানার মাইজপাড়া গ্রামে। বর্তমান যা বাংলাদেশের অন্তর্গত। জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ব্যাংকের পিয়নের চেয়েও স্কুল মাস্টারের বেতন ছিল কম। সুনীলের মা কখনোই চান নি তার ছেলে শিক্ষকতা করুক। পড়াশুনা শেষ করে কিছুদিন তিনি অফিসে চাকুরি করেছেন। তারপর থেকে সাংবাদিকতায়। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মি. পলেন কলকাতায় এলে সুনীলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়। সেই সূত্রে মার্কিন মুলুকে গেলেন সুনীল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে। ডিগ্রি হয়ে গেলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রন্থাগারিক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন সুনীল।
২০০২ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা শহরের শেরিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ ও ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যাযয়ের জন্ম ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪
মৃত্যু ২৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে হৃদ্যন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ৪ এপ্রিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতার ‘গণদর্পণ’-কে সস্ত্রীক মরণোত্তর দেহ দান করে যান। কিন্তু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একমাত্র পুত্রসন্তান শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতে তার দেহ দাহ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যবস্থাপনায় ২৫ অক্টোবর ২০১২ তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
বাবাকে বলতে ইচ্ছা করে, অনেককে তুমি পাত্তা দিয়েছো, যাঁরা ভাল নন
বাবার জন্মদিনের সেই জৌলুস, সেই ব্যস্ততা, সেই অভিমান, সেই ছোটাছুটি, এখন আর কিছুই নেই। আমি বিদেশে বসে আছি
ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে ভোরে ওঠার অভ্যাস ছিল। মর্নিং ওয়াকে যেতাম। কাছেই ঢাকুরিয়া লেক। সকালে উঠে লাফিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে পড়তাম বাবার সঙ্গে। মর্নিং ওয়াক সেরে বাবার কোনও বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে যেতাম। গল্প করতাম। শৈশবের ভোর ছিল এমনই— আমার আর বাবার। সেই ভোরের আদুরে হাওয়া এখন পাল্টে গিয়েছে। আমি কালাপানি পার করে অন্য দেশে। বাবা নেই বহু বছর। তবু ঋতু বদলে বসন্তের মতোই বাবার জন্মদিন আসে। আর আমার ভোরের কথা মনে পড়ে। আপনাদের ‘সুনীল গাঙ্গুলী’, আমার বাবা, ভোরের কলকাতায় আমার পাশে পাশে হাঁটত। হাত ধরে। হাত আমি এখনও হয়ত ধরেই আছি। বাবা চলে গিয়েছে। ‘সুনীল গাঙ্গুলীর ছেলে’ আর আমি এখন হাত ধরে হাঁটি।
শৈশবে এত সব বুঝতাম না। কে কবি, কবিতা কী, গল্প, উপন্যাস কী, বুঝতে বুঝতে অনেক দিন লেগেছে। শুধু দেখতাম, বাবার জীবন ছিল নিয়মে বাঁধা। ছিল রোজ লেখার অভ্যাস। সকালে উঠে চা খেয়ে কাগজ পড়া। তার পর লিখতে বসা। অফিস যাওয়া তার পর। ফিরে এসে ফের লেখা। রাতে আড্ডা। নিয়মে আঁটা জীবন। তবুও একটু একটু পেতাম বাবাকে। বড় হলাম, মানে ক্লাস সেভেন-এইট হবে, দেখতাম, ভিড় বেড়ে গেল বাবার চারিদিকে। ‘কই, আমাকে তো সময় দেয় না আর’, মনের মধ্যে অভিমানের পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ছোট-বড় হয়ে এই কথাটাই বার বার ফিরে আসত। এক বার হল কী, হঠাৎ দেখি বাড়িতে হাজির আমার স্কুলের এক শিক্ষিকা। আমি তো ওঁকে দেখেই ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছি! কী জানি, আমার নামে নালিশ ঠুকবেন নাকি! নাহ্, তা হয়নি। আনন্দবাজারে কর্মরত বাবার কাছে এক আর্জি নিয়ে এসেছিলেন ওই শিক্ষিকা। যদি সাংবাদিকতার পরিচয়ে কিছু সমাধান হয়। সারা দিন এমনই নানা কাজে বাবাকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দেখা করতে হত, কথা বলতে হত। আমাদের জন্য সময় তেমন ছিল কই!
ধীরে ধীরে বাবার খ্যাতি বাড়তে থাকল। বাবা আরও ব্যস্ত হয়ে পড়ল। একের পর এক অনুষ্ঠান, রোজই কিছু না কিছু থাকে। না হলে বাড়িতে ভিড় লেগেই থাকত। অনেকেই আসতেন। তবে আজ মনে হয়, বাবার দোষও ছিল। কেন সবাইকে পাত্তা দিত? কেন উপকার করতে চাইত? সবাই ভাল নয়। হতে পারে না ভাল। বাবাকে বলতে ইচ্ছা করে, এমন অনেক লোককে তুমি পাত্তা দিয়েছো, যাঁরা ভাল নন। আবার এমন অনেককে দূরে সরিয়ে দিয়েছো, যাঁরা প্রকৃত ভাল মানুষ। ঠিক হয়নি সেটা। ভাল মানুষগুলোকে পাত্তা দিলে হয়ত ক্যানভাসে অন্যরকম ছবি আঁকা হত। বাবার মধ্যে যে গুন্ডা ব্যাপারটা ছিল, সেটাও বোধহয় এই ভালমানুষটির চাপে ধীরে ধীরে নিজেকে ঘরবন্দি করেছিল। তাই ‘না’ বলতে কষ্ট হত বাবার।
কেমন গুন্ডামি ছিল শুনবেন? এটাও মর্নিং ওয়াক ফেরত একটা গল্প। ওই দিন ঢাকুরিয়া লেক থেকে ফেরার পথে বাবা ঠিক করল বাস ধরবে। আমরা সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ একটা বাস চোখে পড়ল বাবার। স্ট্যান্ড থেকে ছাড়ার মুহূর্তে বাবা ছুট দিল বাসের দিকে। লাফিয়ে উঠে পড়ল। আমি তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছি। বাবাও বাসের গেটে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল, আমি তখনও ফুটপাতে ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছি। আমার দিকে এমন একটা নজরে বাবা সে দিন তাকিয়ে ছিল, দেখে মনে হল বাবা বোঝাতে চাইছে, আমি এই গুন্ডামির গুণটুকুও পাইনি। হয়ত পাইনি। তাই হয়ত কখনও বাবাকে কেড়ে আনতে পারিনি। কেড়ে আনতে চেয়েছিলাম কি? বাবার জন্মদিনগুলো যত না আমার বা মায়ের ছিল, তত বেশি ছিল কলকাতার। প্রতি বছর জন্মদিনে দেখতাম বাবা ব্যস্ত। একের পর এক অনুষ্ঠান। এখানে যাচ্ছে, ওখানে যাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে কাটানোর মতো সময় কই? যখন আরও বড় হলাম, চিন্তা হত মাকে নিয়ে। আমার থেকে মায়ের কষ্টটা হয়ত আরও বেশি। বাবাকে এই দিনটাতেও একলা করে পাওয়া যেত না যে। পেত না মা। এরকম করেই সকলের মধ্যে লোকটা রয়ে গেল। কাটিয়ে দিল জীবনটা।
তবে মজা হত বাবার লেখালেখিতে যখন নিজেদের দেখতে পেতাম। আমার তো ভারী আনন্দ হত। বাবার এমন একাধিক ছড়া আছে, যেখানে আমি আছি, বাবা লিখেছিল, ‘পুপলু যাবে ঘুম’। আমাকে নিয়ে লেখা ছড়া। বড় হয়ে বাবার ইতিহাসকে কেন্দ্র করে লেখাগুলো যেন আমাকে আঁকড়ে ধরল। ‘রাধাকৃষ্ণ’ আমাকে এখনও মুগ্ধ করে। এমন একটা নারীবাদ কেন্দ্রিক লেখা, যত বার পড়ি, তত বার নতুন করে আবিষ্কার করি। ‘সেই সময়’, ‘পূর্ব পশ্চিম’-এর কথা হয়ত অনেকেই বলবেন। কিন্তু আমার সবচেয়ে পছন্দের উপন্যাস ‘রাধাকৃষ্ণ’।
বাবার জন্মদিনের সেই জৌলুস, সেই ব্যস্ততা, সেই অভিমান, সেই ছোটাছুটি, এখন আর কিছুই নেই। আমি বিদেশে বসে আছি। ওখানে ছিলাম যখন, তা-ও ছোটখাটো কয়েকটা অনুষ্ঠানে গিয়েছি। কিন্তু এখানে তেমন কিছু হয় না। উদ্যাপনের অবকাশ কোথায়? চিন্তা হয় অসুস্থ মাকে নিয়ে। এ বারেও বাবাকে ছাড়াই আরও একটা জন্মদিন কাটাতে হবে মা’কে। তবে আর যা হোক, আমার নিজস্ব পরিচয়ের বাইরেও তো আমার মধ্যে বাবা বেঁচে আছে। ওই যে বললাম— আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে।
(লেখক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। মতামত একান্ত ব্যক্তিগত) আনন্দবাজার পত্রিকা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৫৬
তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া/ আনন্দবাজারপত্রিকা