বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী যেসংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ।
যে ভোটে শেখ হাসিনা তৃতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, ২০১৮ সালের সেই সংসদ নির্বাচনকেও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য মনে করছে না দেশটি।
বিশ্বের ২০২২ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে এমন পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশে মানবাধিকারের বিচারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার গঠন হয়, যেখানে বেশিরভাগ ক্ষমতা ন্যস্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ একটানা তৃতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসে, যাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকেন। ব্যালটে নিয়ম বহির্ভূত সিলমারা এবং বিরোধী এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অনিয়ম এমন সব অভিযোগের কারণে ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে অবাধ ও স্বচ্ছ হিসাবে বিবেচিত হয়নি।২০২২ সালে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের বাধা, সভা-সমাবেশে বলপ্রয়োগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানকে বাধা প্রভৃতি অন্যান্য সময়ের মতো অব্যাহত ছিল বলে উল্লেখ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে।
সেখানে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন ও দুর্নীতির বিষয়ে ব্যাপক দায়মুক্তির অভিযোগের খবর এই সময়ে ছিল। যে সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের চিহ্নিতকরণ, তদন্ত, বিচার ও শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে সরকার কদাচিৎ পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে এমন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছিল, এমন পর্যবেক্ষণ যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতে নয়। এদিকে এই প্রতিবেদন নিয়ে এক বিবৃতিতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, ‘ব্যক্তির অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন একটি অধিকতর নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী বিশ্ব গড়ে তুলতে সহায়তা করে। (মানুষের) মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করার মধ্য দিয়ে দেশ হিসেবে আমাদের পরিচিতির মূল দিকটি ফুটে উঠে।
‘যুক্তরাষ্ট্র সম্মান, শ্রদ্ধা ও অংশীদারিত্বের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিয়মিতভাবে মানবাধিকারের বিষয়গুলো বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরছে। আমরা এই ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখব।’ জাতিসংঘের মানবাধিকার চুক্তিগুলোর আলোকে প্রণীত বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক এই বার্ষিক প্রতিবেদনে পৃথিবীর ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের স্থানীয় মানবাধিকার ও শ্রমিকদের অধিকারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিগত প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। দেশ ও অঞ্চলভিত্তিক এই প্রতিবেদনে কোনো আইনি সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় না কিংবা মানবাধিকার পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর কোনো ক্রমতালিকা বা তুলনা করা হয় না।