দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ যাবৎকাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের আগে এশিয়ায় সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।
১৯৪২ সাল থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ ফিল্ড মার্শাল স্যার ক্লাউড অচিনলেক ব্রিটিশদের দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন, “যদি ভারতীয় সেনাবাহিনী না থাকতো, তবে উভয় যুদ্ধে [দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয়] তারা আসতে পারতো না।”
ভারতীয়রা বিশ্ব জুড়ে পার্থক্য নিয়ে লড়াই করেছিল, এছাড়া ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় জার্মানির বিরুদ্ধে এবং বার্মায় জাপানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে জার্মানি ও ইতালির বিরুদ্ধে এবং ইউরোপীয় থিয়েটারের জার্মানির বিরুদ্ধে ভারতীয়রা যুদ্ধ করে।
১৯৪৫ সালের আগস্টে জাপানী আত্মসমর্পণের পর ভারতীয়রাও সিঙ্গাপুর এবং হংকং য়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৮৭,০০০ ভারতীয় সৈন্য (আধুনিক দিনের পাকিস্তান, নেপাল ও বাংলাদেশ সহ) মারা গেছে।
ব্রিটিশ যুদ্ধের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছিল যখন ভারতের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ব্রিটেনকে সাহায্য করার আগে স্বাধীনতা দাবি করেছিল।
লন্ডন প্রত্যাখ্যান এবং কংগ্রেস যখন ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে “ভারত ছাড়ো” প্রচারণা ঘোষণা করেছিল, তখন তার কয়েক হাজার নেতাকে ব্রিটিশরা কারাগারে বন্দি করেছিল।
এদিকে, ভারতীয় নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে জাপান ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী গঠন করে, যা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক সেনা ও যুদ্ধে নিয়োজিত কর্মীদের জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্য মজুদ করায় ১৯৪৩ সালে বাংলায় একটি দুর্ভিক্ষে ক্ষুধার্ততা লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায় এবং চার্চিলের জরুরি খাদ্য ত্রাণ সরবরাহের অনিচ্ছা সম্পর্কে একটি অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয় রয়ে গেছে।
🇬🇧দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন ভারতীয়রাও ব্রিটিশদের হয়ে লড়ছে তখন সামরিক প্রয়োজনের অজুহাত দেখিয়ে ব্রিটিশরা ভারত বিশেষ করে বাংলা থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য সরিয়ে নেয়।
🇬🇧খাদ্যশস্যের অভাবে তখন বাংলা মূলকে যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় তা ইতিহাসে তেতাল্লিশের মন্বন্তর নামে পরিচিত। সেই মন্বন্তরের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ মারা যায। তখন বাংলার জনসংখ্যা ছিল ছয় কোটির মতো। সেই হিসেবে প্রায় প্রতি ১৫ জনের ভেতর একজন মারা যায়। এটা অবিশ্বাস্য বড় রকমের একটা গণহত্যা।
🇬🇧ব্রিটিশরা আসার আগে মুসলিম শাসনামলে বাংলা মূলকে কখনো দুর্ভিক্ষ হয়নি। কেননা মুসলিম শাসকরা কোন মৌসুমে ফসল বেশি হলে সেটা জমিয়ে রাখতেন খরার সময় বিলি করার জন্য।
🇬🇧কিন্তু ব্রিটিশরা আসার পর প্রতি দশকে একটা করে বড় দুর্ভিক্ষ হতো। কেননা তারা সব ফসল ব্রিটেনে পাচার করে দিত। এই বাড়তি ফসলের বদৌলতে তারা নিজেদের দেশে সফলভাবে শিল্প বিপ্লব ঘটিয়েছিল।
🇬🇧ব্রিটিশরা আসার আগে ভারতে কখনো হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হয়নি। নিজেদের শাসন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে তারা কৌশলে হিন্দু মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করে। সেই বিষে ভারত বর্ষ এখনো জ্বলছে।
🇬🇧ব্রিটিশরা আসার আগে ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী জনপদ। পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ জিডিপির অধিকারী ছিল ভারতীয়রা। ব্রিটিশদের ২০০ বছরের সীমাহীন শোষণে ভারতবর্ষ হয়ে যায় বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র জনপদ।
🇬🇧রানী এলিজাবেথ ছিলেন এই ভয়ানক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কর্ণধারদের উত্তরসূরী। তাই তার মৃত্যুর সারা দুনিয়া, মিডিয়া, সভ্য ইউরোপ তার জন্য মায়া কান্না করবে আর তার মহানত্ব ঘোষণা করবে এটাই স্বাভাবিক।