মহানবী (সা.) ছিলেন সরল অনাড়ম্বর জীবনের অধিকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন আদর্শ মহামানব
প্রিয়নবী (সা.) সারা সৃষ্টি জগতের জন্য কল্যাণ ও শান্তির শ্রেষ্ঠ বার্তাবাহী, বিশ্বজগতের জন্য রহমত।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) {৫৭০-৬৩২ খ্রি.} ছিলেন মানবজাতির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় মহান উদার, বিনয়ী ও নম্র ব্যক্তিত্ব। তিনি উত্তম চরিত্র ও মহানুভবতার একমাত্র আধার। পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, প্রতিবেশী সবার অকৃত্রিম শিক্ষণীয় আদর্শ ও প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নবী করিম (সা.) একাধারে সমাজসংস্কারক, ন্যায়বিচারক, সাহসী যোদ্ধা, দক্ষ প্রশাসক, যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক এবং সফল ধর্মপ্রচারক।
কল্যাণকর প্রতিটি কাজেই তিনি সর্বোত্তম আদর্শ।
তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আল-আহজাব, আয়াত: ২১)
ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, জাতিধর্ম নির্বিশেষে গোটা মানবজাতির জন্য প্রয়োগ যোগ্য সার্বজনীন উত্তম আদর্শ ও কল্যাণ নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করেছেন রাহমাতুললিল আলামীন মহানবী (সা.)। তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আদর্শ।
ইসলাম ধর্ম হল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সকল ধর্মের শেষ ধর্ম, বিশ্ব ধর্মের সর্বশেষ সংস্করণ, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন তেমনি সর্বশেষ ঐশী বানীবাহক।
মহান আল্লাহ বলেন- “নি:সন্দেহে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ-তার জন্য যে আল্লাহ ও আখিরাতকে কামনা করে থাকে এবং আল্লাহকে অনেক স্মরণ করে।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং-২১)
মহান আল্লাহ বলেন, “আমি তো আপনাকে প্রেরণ করেছি বিশ্বজগতের জন্য রহমত সরুপ।” (সূরাহ আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)
মুহাম্মদ (সা.) হলেন মহান চরিত্রের অধিকারী ও আদর্শের জীবন্ত প্রতীক। জন্মের পর হতেই তার মাঝে বিরাজ করেছিলো সর্বোত্তম চরিত্র মাধুরী, সর্বোত্তম আদর্শ, মহৎ মানুষ ও সর্বোত্তম প্রতিবেশি ইত্যকার মহত্তম, গুণাবলী। বাল্যকাল থেকেই তার স্বভাব ছিল কলুষতা, কাঠিন্য, কর্কশতা ও অহংকার থেকে মুক্ত। তিনি ছিলেন, দয়াশীল, শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল ও ঔদার্যশীল এবং নিষ্কুলুস ও নির্ভেজাল মহামানব। শৈশব থেকে মহানবী (সা.) সত্যবাদী ও ন্যায়নিষ্ঠ ছিলেন। তাই আরবের সকলে মিলে তাঁকে আখ্যা দিয়েছিল আল আমীন।
তাঁর সদাচরণ, উত্তম ব্যবহার এবং সততার দ্বারা মানুষকে বশীভূত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সূরা আল-কালাম, আয়াত: ৪)
আত্মমর্যাদাবোধবশত কখনো তিনি মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান ও হেয়প্রতিপন্ন করেননি বা নগণ্য ভাবেননি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সব মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করে পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠতর স্বভাব-চরিত্রের অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন। তাঁর স্বভাব-চরিত্রের মধ্যে বিনয় ও নম্রতা ছিল সদা জাগ্রত। সর্বোত্তম আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবেই তাঁকে বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন আচার-আচরণে অত্যন্ত বিনয়ী। কখনো দুর্বল ব্যক্তিকে কটু কথার মাধ্যমে হেয়প্রতিপন্ন করতেন না। এমনকি কোনো মানুষকে তার সামর্থ্যের বাইরে অসাধ্য কাজে বা কঠিন দায়িত্বে বাধ্য করতেন না। তিনি দরিদ্র অসহায় মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন।
সমাজে যে যতটুকু মর্যাদার অধিকারী, তাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করতেন। তিনি নম্রতাসুলভ আচরণ প্রদর্শন
করার জন্য সাহাবায়ে কিরামদের উপদেশ দিতেন, আচার-ব্যবহারে অযথা রাগ ও ক্রোধ থেকে সর্বদা বিরত থাকার পরামর্শ দিতেন। তিনি মানুষকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নম্র-বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চাসনে আসীন করেন আর যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে অপদস্থ করেন।’ (মিশকাত)
তাঁর পারিবারিক কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বাড়িতে অবস্থানকালে পরিবারের কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো তখন তিনি নামাজের জন্য উঠে যেতেন।’ হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, ‘পরিবারের প্রতি অধিক স্নেহপ্রবণ হিসেবে নবী করিম (সা.) থেকে বেশি অগ্রগামী আমি আর কাউকে দেখিনি। তিনি দিবারাত্রির সময়টুকু তিন ভাগে ভাগ করে নিতেন। এক ভাগ ইবাদত-বন্দেগি করতেন। অন্য ভাগ পরিবার-পরিজনের গৃহকর্মের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতেন। আর এক ভাগ সময় তিনি নিঃস্ব-দুস্থজনদের জনসেবায় ব্যয় করতেন। কোনো জরুরি অবস্থা দেখা না দিলে সাধারণত এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটত না।
তাঁর কাছ থেকে বিধর্মীরাও আশাতীত সুন্দর কোমল আচরণ লাভ করত। তিনি এতই নমনীয় ও কোমলতর ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন যে তাঁর পবিত্র সংস্রব কিংবা সামান্যতম সুদৃষ্টির কারণেও অনুসারীরা তাঁকে প্রাণাধিক ভালোবাসত এবং মনে-প্রাণে গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করত। তাঁর কোমল ব্যবহার সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.) কঠোর ভাষী ছিলেন না, এমনকি প্রয়োজনেও তিনি কঠোর ভাষা প্রয়োগ করতেন না। প্রতিশোধপ্রবণতা তাঁর মধ্যে আদৌ ছিল না।
মন্দের প্রতিবাদ তিনি মন্দ দিয়ে করতেন না, বরং মন্দের বিনিময়ে তিনি উত্তম আচরণ করতেন। সব বিষয়েই | তিনি ক্ষমাকে প্রাধান্য দিতেন।
নবী করিম (সা.)-এর সুমহান জীবনাদর্শ অনুসরন মানুষের প্রতি সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয়ী চরিত্র, বিনম্র ব্যক্তিত্ব, আনুগত্যতা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা।