তরমুজের গুন কাহিনী
গরম পড়তেই বাজারে উঠছে তরমুজ। গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে এই রসালো ফলের দিকে ঝুঁকেছেন অনেকেই। বেলার দিকে তরমুজের জুসই হোক বা খাওয়ার পরের ফল হিসাবে, তরমুজের জুড়ি মেলা ভার। তাছাড়া শরীর ঠাণ্ডা রাখা থেকে শুরু করে, বহু রোগ থেকে সুরক্ষা দেয় তরমুজ। তবে তরমুজের গুণের পাশাপাশি এর খোসার উপকারিতাও একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
তরমুজের গুণ-হার্টের রোগ থেকে মুক্তি দিতে তরমুজ অপরিহার্য। কার্ডিওভ্যাসকুলার রোগ প্রতিরোধে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, রোগের ঝুঁকি কমাতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।
তরমুজের গুণ-তরমুজে বহু মিনারেল ও ভিটামিন থাকায় তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তরমুজে থাকা উপাদান চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে।
তরমুজে থাকা লাইকোপেন ক্যানসারের প্রবণতা অনেকটা কমিয়ে আনে। এই লাইকোপেনের জন্যই তরমুজের রং গাঢ় লাল হয় এবং এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা ক্যানসার রোধ করে। তরমুজ ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি৬, যা অ্যান্টিবডি গঠন করতে সাহায্য করে।
রক্তশূন্যতার ক্ষেত্রে তরমুজ যেমন উপকারী, তেমনই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও তা উপকারী। তরমুজের খোসায় থাকে রসালো ভাব, থাকে জলের পরিমাণ। যা শরীরকে ডিহাইড্রেড হতে দেয় না। এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায়, তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
তরমুজের গুণ-তরমুজে রয়েছে লাইকোপিন। যা ত্বকের উজ্জ্বলাত বাড়ায়।
তরমুজের গুণ- তরমুজে রয়েছে ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। এছাড়াও রয়েছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম। কিডনি ও লিভার সুস্থ রাখতে যা কার্যকরী। এছাড়াও তরমুজ মনকে শান্ত রাখে, প্রবল গরমে দেয় ঠাণ্ডার প্রভাব।
তরমুজের গুণ-রক্তশূন্যতার ক্ষেত্রে তরমুজ যেমন উপকারী, তেমনই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও তা উপকারী।
তরমুজের খোসার গুণ- তরমুজের খোসায় থাকে সিট্রুলাইন, যা রক্তনালীর প্রসারে সাহায্য় করে। গবেষণা বলছে, এটি পেশীতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে
তরমুজের জন্য যুদ্ধে রাজস্থানে প্রাণ হারান হাজারো সৈনিক
৩৭৫ বছর আগে তরমুজ নিয়ে এই যুদ্ধে রাজস্থানে প্রাণ হারান হাজারো সৈনিক। পূর্ব রাজস্থানের এই স্থান ‘মাতিরে কি রাড়’ নামে পরিচিত। রাজস্থানের স্থানীয় ভাষায় তরমুজকে মাতিরে বলা হয়। এটা পৃথিবীর একমাত্র লড়াই- যা ফলের জন্য সংঘটিত হয়েছিল। ‘মাতিরে কি রাড়’ ১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল। তখন বিকানেরের সিলভা গ্রাম এবং নাগৌরের জখানি গ্রাম একে অপন্যের সঙ্গে সংলগ্ন ছিল। দুটি রাজ্যেরই শেষ সীমানা ছিল এ দুটি গ্রাম।
বিকানেরের তৎকালীন রাজপুত্রের মতে- যেহেতু তরমুজ গাছ তাদের সীমানার মধ্যে ছিল এবং এতে ফল ধরেছিল…. সেহেতু গাছটি তাদের। অন্যদিকে নাগৌরের সেনাদের দাবি ছিল- গাছ বিকানেরের সীমানায় থাকলেও ফলন যখন হয়েছে, তখন তা জখানি গ্রামের সীমা ভেদ করেছে। যেহেতু তাদের গ্রামে ফলন ভালো হয়েছে, সেহেতু এই ফলের অধিকার একমাত্র নাগৌরের। কেউ কারোর দাবি থেকে পিছু হঠতে নারাজ। তরমুজ তা হলে কার- এইনিয়েই শুরু হয় লড়াই। দুপক্ষই তাদের হাজারো সৈন্যবাহিনী নিয়ে ময়দানে নামে এবং একমাত্র তরমুজের জন্য এই যুদ্ধ পরিণত হয় রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে। এই যুদ্ধে বিকানেরের তরফে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রামচন্দ্র মুখিয়া ও নাগৌর ছিল সিংভি সুখমালের নেতৃত্বে।
দুই তরফে সেনারাই এ যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। মজার কথা হলো, রাজারা এই যুদ্ধের কোনো আঁচই পাননি! এমনকি তরমুজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে উত্তেজনা চলে আসছে, তাও তারা জানতেন না। বিকানেরের রাজা করণ সিং ওই সময় মৃগয়ায় গিয়েছিলেন। অন্যদিকে নাগৌরের শাসক রাও অমর সিং ব্যস্ত ছিলেন অন্যত্র। শোনা যায়, কিছুদিনের জন্য ছুটি কাটাতে তিনি ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে তারা যখন এই যুদ্ধের খবর পান, তখন নিজেরা সৈন্যদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। এতে কোনো লাভ হয় না।#