ইসলামের অন্যতম একটি নামাজ। جُمُعَة (জুমুআহ) শব্দটি আরবী, এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া।
ছবি;সংগৃহীত
সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামায়াতের সাথে সে দিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরযরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে “জুমার নামাজ” বলা হয়।
‘জুমা’ শব্দের অর্থ এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা কাতারবদ্ধ হওয়া। শুক্রবার মসজিদে জোহরের চার রাকাতের পরিবর্তে কাতারবদ্ধ হয়ে দুই রাকাতের যে ফরজ নামাজ আদায় করা হয়, ইসলামের পরিভাষায় সেটিই সালাতুল জুমা বা জুমার নামাজ।
“তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু”। (সুরা : নাহল – আয়াত -১৮)
‘হে বিশ্বাসীরা! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহকে মনে রেখে তাড়াতাড়ি করবে ও কেনাবেচা বন্ধ রাখবে। এ-ই তোমাদের জন্য ভালো; যদি তোমরা বোঝো।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ৯)
জুমার নামাজের আজান দেওয়ার পর সব বৈষয়িক কাজ স্থগিত রেখে নামাজ আদায় করার জন্য আল্লাহ সবাইকে মসজিদে কাতারবন্দী হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। এর পরের আয়াতেই বলা হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা বাইরে ছড়িয়ে পড়বে ও আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে বেশি করে ডাকবে; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)।
“হে বিশ্বাসীগণ, যখন তোমাদের শুক্রবারের নামাজের (জুমার নামাজ) জন্য আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহকে স্মরণ করো এবং ক্রয় বিক্রয় পরিত্যাগ করো; যদি তোমরা বুঝে থাকো, তবে এতেই তোমাদের পক্ষে কল্যাণ। যখন নামাজ সমাপ্ত হয়, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর করুণার (জীবিকা) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো; সম্ভবত [এতেই] তোমাদের মুক্তি রয়েছে।
অর্থাৎ আল্লাহর হক আদায় করার মাধ্যমে আখিরাতের সম্পদ অর্জন করার পর আবার দুনিয়ার সম্পদ তথা স্বাভাবিক রুটিরুজির অন্বেষণে ছড়িয়ে পড়তে বলা হচ্ছে।
মহান রাব্বুল আলামীন মাত্র ছয় দিনে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেন যা পরিপূর্ণতায় বিকশিত হয় সপ্তাহের শেষ দিন শুক্রবার এই মর্মে পবিত্র আল-কোরআনে কয়েকটি আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন-এর ঘোষণা রয়েছে।প্রখ্যাত তাফসির বিশারদ আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.)-এর সহিহ বর্ণনায় অবগত হওয়া যায় যে, ছয় দিনে জগত সৃষ্টি হয়েছে তা রবিবার থেকে শুরু করে শুক্রবারে শেষ হয়।আবার পৃথিবী ধ্বংস তথা কেয়ামত সংগঠিত হবে ঠিক শুক্রবারে।
সপ্তাহের পালাক্রমে চলমান শুক্রবার তথা জুম্মা-বার-এর জন্য মাত্র ছয়টি দিন অপেক্ষা করতে হয় যা কিনা ধনী-দরিদ্র,মধ্য-ভিত্ত,সকল মুসলিমের জন্য অগণিত গুণাহ মাফের এবং বর্ণ,বৈষম্যভেদ্য সবার মিলনমেলার দিবসও বটে। উৎকৃষ্ট সময়,ইতিহাস,দর্শন,রহস্য এবং অলৌকিকতার কারণে মহান রব-এর যাবতীয় সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে বর্তমান চলমান প্রক্রিয়া ধাবিত হয়ে কেয়ামত কাল পর্যন্ত এই দিবসটির তাৎপর্য যেনো রহস্যের চাঁদেরই আবৃত থাকবে।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃনবী (সাঃ) বলেনঃ সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এ দিন ‘আদাম (‘আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিন সেখান থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে,জুমার দিনই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে।[ মুসলিম-১৮৬২,আবু দাউদ- ৯৬১]
একটি মানুষের জিবনাদ্দশায় যতোগুলো সূর্য উড্ডয়ন- সকাল ভাগ্যে জুটবে তার ভিতরে সবচেয়ে মহিমাপূর্ণ দিনটি সে পাবে শুক্রবার তথা জুমুআ দিন।একটি দিন বলতে সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্তের পর্যন্ত সময়কে বুঝায় এবং যার অর্থ হলো সকল প্রকার ফরয,ওয়াজিব,সুন্নাত,নফল ইবাদতের জন্য এই দিনটি সর্বোৎকৃষ্ট এবং মঙ্গলজনক।
আরবী জুমা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো একত্রিত করা যার সাপ্তাহিক প্রধান দিবসের নাম শুক্রবার।পূর্বযুগে এই দিনকে ‘উরু-বা’ বলা হতো।জুমার দিনে চার ওয়াক্ত ফরয নামাজের সাথে যোহরের ফরয নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত সালাত আদায় করা ফরয এবং খুতবা পাঠ ও শোনা ওয়াজিব হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে।
জুমার সালাত ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। রাসূলুল্লাহ (সা) হিজরত-কালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছান এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার সালাত আদায় করেন।
এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার সালাত।জুমার নামাজের বিষয় পবিত্র কোরআনে সুরা জুমুআ ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে; অর্থাৎ হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।[সুরা জুমুআ : আয়াত ৯-১০]মহা আসমানী গ্রন্থ আল কুরআনে ১১৪টি সুরার মধ্যে পৃথক ও স্বাতন্ত্র্য একটি সুরা নাযিল করেছেন যা নামকরণ করা হয়ছে জুমুআ নামে।
যেমন মহান আল্লাহতায়ালা মুমিনদের উদ্দেশ্য করে শুক্রবারে আযান হবার সাথে সাথে বেচাকেনা বন্ধ সহ দুনিয়াদারী সকল কাজ পরিত্যাগ করে নামাযের উদ্দেশ্যে ছুঁটে আদেশ করেছেন এবং এও বলেছেন নামাজ শেষে আবার তোমরা স্বকর্মকে ছড়িয়ে পড়ে দিনটিতে আল্লাহকে বেশি বেশি স্বরণ করো।
এই দিনটি আমাদের মুসলমানের জন্য কতোটা মহিমাপূর্ণ যা মহান আল্লাহ সুবাহানাতায়াল্লাহ স্বয়ং খুশি হয়ে আমাদের দান করেছেন।আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল( সাঃ) বলেছেন;আল্লাহ্ আমাদের পূর্ববর্তীদেরকে জুমার দিন সম্পর্কে সঠিক পথের সন্ধান দেননি বিরোধে লিপ্ত হওয়ার কারণে। তাই ইহুদীদের জন্য শনিবার এবং খৃষ্টান-দের জন্য রবিবার জুম্মু‘আ নির্ধারিত হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে (পৃথিবীতে) আনলেন এবং আমাদেরকে জুম’আর দিনের সঠিক সন্ধান দিলেন। অতএব তিনি শুক্রবার দিন,শনিবার ও রবিবার এভাবে (বিন্যাস) করলেন, এভাবে তারা ক্বিয়ামাতের দিন আমাদের পশ্চাদবর্তী হবে। আমরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে শেষে আগমনকারী উম্মাত এবং ক্বিয়ামাতের দিন হব সর্বপ্রথম। যাদের সমগ্র সৃষ্টির সর্বপ্রথম বিচার অনুষ্ঠিত হবে। অধস্তন বর্ণনাকারী ওয়াসিল (রাঃ)-এর বর্ণনায় আছে “সকলের মধ্যে”।[সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৮৬৭]
জুমার দিনে ভাগ্যবান মুসলমানদের ইবাদতের জন্য একটি মিলনমেলা এবং দোয়া কবুলের জন্য।তাই দিনটির পবিত্রতা রক্ষার জন্য এবং মহান আল্লাহর অনুগ্রহ প্রীতির জন্য এই দিনের আমল গুলি পালন করা উচিত।আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার কাছে থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ ফারা হবে।[ (আবু দাউদ- ৩৪৩]হাদীস-টিতে পাঁচটি আমলের ব্যাখা রয়েছে,যেমন;-১)গোসল করা [বুখারী শরীফের ৮৭৯ নং হাদীসে আবূ সা‘ঈদ খুদ-রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃআল্লাহ্র রসূল (সাঃ) বলেন জুমার দিনে প্রত্যেক সাবালকেরা জন্য গোসল করা ওয়াজিব।] ২)সুগন্ধি ব্যাবহার করা ৩)কোনো মুসুল্লি কে টপকে সামনে না যাওয়া ৪)নির্ধারিত নামাজ আদায় করা এবং ৫)খুতবার সময় কোনো কথা না বলা।