বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া ।। কুষ্টিয়ার সাহিত্যচর্চা।।কুষ্টিয়া জেলার দর্শনীয় স্থান
আলাপচারিতা
কুষ্টিয়া জেলা ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগষ্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে পূর্ব বাংলার অর্ন্তভুক্ত হয়। বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা ছিল অবিভক্ত বাংলাদেশের প্রেসিডেন্সী বিভাগের অন্যতম নদীয়া জেলার অংশ।
ইষ্ট ইন্ডিয়া, কোম্পানী ১৭৬৫ সালে বাংলা-বিহার উড়িষ্যায় দেওয়ানী লাভ করলে নদীয়া তাদের শাসনাধীনে আসে। নদীয়া প্রাচীন কাল থেকে জ্ঞান বিজ্ঞানে বিশেষ খ্যাত ছিল। বার শ শতকের শেষাংশ থেকে বাংরার শেষ স্বাধীন হিন্দু নরপতি লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী ছিল নদীয়া। ১২০১ সালে (মতান্তরে ১২০৩) ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বখ্তিয়ার খিলজী নামক একজন মুসলিম সেনাপতি মাত্র আঠার জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী নদীয়া দখল করে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মুসলিম শাসনের সূত্রপাত করেন।
মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে মেহেরপুরের বাগোয়ানের ভবানন্দ মজুমদার (বাল্য নাম দুর্গাদাস সমাদ্দার) যে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন তা ‘নদীয়া রাজবংশ’ নামে পরিচিত হয়। নদীয়া রাজবংশ যে এলাকা নিয়ে জমিদারী কায়েম করেন তা ‘নদীয়া’ নামে। নদীয়া রাজের জমিদারী এলাকা ছিল ৩১৫১ বর্গমাইল। নদীয়া রাজের জমিদারী এলাকা ছিল বর্তমান পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার সদর মহকুমা ও রানাঘাট মহকুমার দক্ষিণ অঞ্চল, মেহেরপুর মহকুমার কিছু অংশ, যশোরের বনগাঁ ও যশোর সদরের দক্ষিণ পূর্বাংশ, খুলনা জেলার পশ্চিম সাতক্ষীরা অঞ্চল।
কুষ্টিয়া বহুপূর্ব থেকেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে এর অবিসংবাদিত পরিচিতি রয়েছে।
তবে ‘কুষ্টিয়া’ নামটি কীভাবে এলো, তা নিয়ে ইতিহাসকারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সবচেয়ে সমর্থিত মতটি হেমিলটনস-এর গেজেটিয়ার সূত্রে পাওয়া। সেটি হলো, কুষ্টিয়াতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপাদিত হতো। পাটকে স্থানীয় ভাষায় ‘কোষ্টা’ বা ‘কুষ্টি’ বলতো, যার থেকে কুষ্টিয়া নামটিএসেছে। কারো মতে ফারসি শব্দ ‘কুশতহ’ থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে যার অর্থ ছাই দ্বীপ। আবার সম্রাট শাহজাহানের সময় কুষ্টি বন্দরকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের উৎপত্তি বলেও একটি মত রয়েছে।
১৮৬০ সালে কলকাতার (তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রাজধানী)সাথে সরাসরি রেললাইন স্থাপিত হয়। একারণে এ অঞ্চল শিল্প-কারখানার জন্য আদর্শ স্থান বলে তখন বিবেচিত হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস(১৮৯৬), রেণউইক, যজ্ঞেশ্বর এণ্ড কোং (১৯০৪) এবং মোহিনী মিলস (১৯১৯) প্রতিষ্ঠিত হয় ।কুষ্টিয়ার ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রধান নদীগুলো হল পদ্মা নদী, গড়াই নদী, মাথাভাঙ্গা নদী, কালীগঙ্গা নদী ও কুমার নদ।
কুষ্টিয়া কোনো প্রাচীন নগর নয়। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে এখানে একটি নদীবন্দর স্থাপিত হয়। যদিও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ বন্দর বেশি ব্যবহার করত, তবুও নীলচাষী ও নীলকরদের আগমনের পরেই নগরায়ন শুরু হয়।
১৯৪৭-এ ভারতবর্ষ ভাগের সময় কুষ্টিয়া পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর মহকুমাসমূহ ছিল কুষ্টিয়া সদর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। তৎকালীন এস ডি ও মৌলভি আব্দুল বারী বিশ্বাস কে প্রধান করে ১৯৫৪ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু সরকারি অফিস কুষ্টিয়ায় স্থাপনের পরে শহরটিতে পুনরায় উন্নয়ন শুরু হয়। কুষ্টিয়া জেলায় বাংলাদেশের সর্বপ্রথম রেলস্টেশন জগতি রেলওয়ে স্টেশন, বাংলাদেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় কুমারখালি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় অবস্থিত।
কুষ্টিয়া জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পকলা একাডেমি কুষ্টিয়াতে অবস্থিত। শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়ে এ-জেলা দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুষ্টিয়া শহর ছাড়াও এ জেলায় কুমারখালী ও ভেড়ামারা পৌরসভায় বিসিক শিল্প গড়ে ওঠেছে৷ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাংলাদেশের বৃহত্তম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত।
মুক্তিযুদ্ধে
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ১৪৭ জন পাকসেনা কুষ্টিয়া সদরে পৌঁছালে তারা সেখানকার ইপিআর, পুলিশ, আনসার, ছাত্র এবং স্থানীয় জনগণ কর্তৃক ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হয়। ৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বংশীতলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
এছাড়াও পাকসেনারা এ উপজেলার মিলপাড়ার এক বাড়িতে অতর্কিত আক্রমণ করে একই পরিবারের প্রায় ১২ জনকে হত্যা করে। ৬ আগস্ট কুমারখালী উপজেলার স্থানীয় এক রাজাকারের বাড়ি আক্রমণ করতে গিয়ে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৩ নভেম্বর দৌলতপুর উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৩টি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে। এই জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ২টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে এবং ১০টি সরণি মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য একটি স্মারক ভাস্কর্য হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের ‘মুক্তবাংলা’।
হুপূর্বে কুষ্টিয়া অবিভক্ত ভারতের নদীয়া জেলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে) অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও পাবনা জেলার মহকুমা ও থানা হিসেবেও রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল এ জেলাটি। কোম্পানি আমলে কুষ্টিয়া যশোর জেলার অধীনে ছিল। ১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়ায় একটি পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। হ্যামিলটন’স গেজেট প্রথম কুষ্টিয়া শহরের কথা উল্লেখ করে ।
কুষ্টিয়া শহর হলো এ জেলার প্রশাসনিক সদর এবং প্রধান শহর।কুষ্টিয়া জেলা ৬টি উপজেলা, ৭টি থানা,৫টি পৌরসভা, ৫৭টি ওয়ার্ড, ৭০টি মহল্লা, ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৭১০টি মৌজা ও ৯৭৮টি গ্রামে বিভক্ত।
কুষ্টিয়া জেলার মানুষের কথ্য বা মুখের ভাষাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে শুদ্ধ ভাষা অর্থাৎ বাংলাদেশে বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রমিত রূপ বলা হয়ে থাকে।নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রথম জীবন ও কবিতার স্বর্নযুগ কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কাটিয়েছিলেন।
কুষ্টিয়ার সাহিত্যচর্চা ও
কুষ্টিয়া জেলার বিখ্যাত সাহিত্যিক
একদা নদীয়ার অংশ বলে এ অঞ্চলের ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কৃষ্ণনগরীয় বিশেষ প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। লালন-গগন প্রমুখ বাউলের কারণে এ জেলা বাউল অঞ্চল হিসাবেও স্বীকৃত। বহু কীর্তিমান ব্যক্তি এ জেলায় জন্মেছেন। যেমন মীর মশাররফ হোসেন, কাঙাল হরিনাথ, জলধর সেন, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, মুন্সী দাদ আলী, জগদীশ গুপ্ত, শচীন্দ্রনাথ অধিকারী, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, হরগোপাল বিশ্বাস প্রমুখ সাহিত্যিক। উল্লেখ্য, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা বীর বাঘা যতীনও এ জেলার কয়া গ্রামের সন্তান। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে অবস্থানকালে পদ্মা-গড়াই এবং এ অঞ্চলের প্রকৃতি-প্রভাবিত হয়ে অনেক কাব্য, সংগীত, ছোটগল্পসহ ছিন্নপত্রের মতো অসাধারণ গ্রন্থ রচনা করেন। উল্লেখ্য, এ অঞ্চলের সাহিত্যচর্চার ধারা পরবর্তীকালে উত্তর প্রজন্ম সমৃদ্ধ করেছেন এবং বর্তমানেও এ প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
সত্তরের দশকে কবি ও গীতিকার হিসাবে আবু জাফর সুখ্যাত হন। তার কাব্য ‘বাজারে দুর্নাম তবু তুমি সর্বস্ব’ এবং গীতিগ্রন্থ ‘আমার নিকৃষ্ট গান’ সুধীমহলে বহুল আলোচিত। আবু জাফরের সমসাময়িক কবি ও গীতিকার ছিলেন সুশীল বসু। সে-সময়ের খ্যাতিমান গীতিকবি মাসুদ করিম। আবুল আহসান চৌধুরীর কাব্য প্রকাশিত হয় সত্তরের দশকে। তার কাব্যগ্রন্থ ‘স্বদেশ আমার বাংলা’। পরবর্তীকালে মূলত গবেষক ও প্রাবন্ধিক হিসাবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। আনোয়ারুল করীম, ম. মনিরউজ্জামান এবং মিলন সরকার প্রথম জীবনে কবিতা লিখলেও পরে তারা প্রাবন্ধিক-গবেষক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। জাতীয় পত্রপত্রিকায় কুষ্টিয়ার কবি ইকবাল আজিজ, মিনু রহমান, নাসিমা সুলতানা, সোহেল অমিতাভ এবং খৈয়াম বাসারের কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। নাট্যকার হিসাবে কল্যাণ মিত্র জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং পরে বাংলা একাডেমি পদকে ভূষিত হন। সত্তর ও আশির দশকে কুষ্টিয়ার বেশ কয়েকটি সাহিত্য সংগঠন সক্রিয় ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-‘কুষ্টিয়া সাহিত্য পরিষদ’, ‘রোববারের সাহিত্য আসর’, ‘কুষ্টিয়া সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’, ‘রাজু আহমেদ স্মৃতি সংসদ’, কুমারখালী সাহিত্য পরিষদ’, ‘পূরবী সাহিত্য বাসর’, ‘সংলাপ সাহিত্য সংসদ’ এবং ‘সাক্ষর সাহিত্য সংসদ’।
বিগত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকে কুষ্টিয়ার সাহিত্যচর্চার যথেষ্ট গতিশীল ছিল। স্বৈরাচার, গণতন্ত্রহীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনালুপ্তির ষড়যন্ত্রের কারণে এ দুই দশকের সাহিত্যিকরা ছিলেন সংক্ষুব্ধ। কুষ্টিয়ার সাহিত্যচর্চায় এ সময় নিবেদিত ছিলেন অনেক তরুণ সাহিত্যিক। তাদের মধ্যে অনেকে এখনো সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রেখেছেন। তারা হলেন-আব্দুর রশীদ চৌধুরী, সৈয়দ আবদুস সাদিক, লালিম হক, পারিজাত মজুমদার, শুকদেব সাহা, খসরু আলম, ওয়াকিল মুজাহিদ, আলম আরা জুঁই, খৈয়াম বাসার, রোকেয়া রহমান বেবি, বিলু কবীর, শাহ আলম চুন্নু, মীর মোর্তজা আলী বাবু, হাসান মোস্তফা, শেখ রবিউল হক, বিধান চন্দ্র রায়, দেবাশীষ সান্ন্যাল, আখতারুজ্জামান চিরূ, বিপুল বিশ্বাস, শঙ্খুশেখর চক্রবর্তী, কামরুল আহসান মণি, সোহেল আমি বাবু, শামসুর রহমান বাবু, কনক চৌধুরী, মাসুম রেজা, কাজী রাশিদুল হক পাশা, বাবলু জোয়ার্দার, রফি হক, আসমা হোসেন মীরু, মুনশী সাঈদ, মাহমুদ হাফিজ, পারভীন আকতার চম্পা, আল মাসুম, রকিবুল হাসান, মিলি রহমান, আকমল হোসেন, দীপু মাহমুদ, আবদুল্লাহ সাঈদ, রেজাউল করিম, কামরুল ইসলাম, জেছের আলী, সরওয়ার মুর্শেদ, এমদাদ হাসনায়েন, আমিরুল ইসলাম, জিন্নাহ হক, আব্দুস সাত্তার, মিল্টন খন্দকার, বাকী বিল্লাহ বিকুল, লিটন আব্বাস, রেজাউল করিম স্মার্ক, শাহানারা রশীদ ঝর্ণা, আতিক হেলাল, কাজল রশীদ শাহীন, সাইম রানা, মাসুদ রহমান, আদিত্য শাহীন, লাইলা খালেদা, হোসেন শহীদ মজনু, সুহৃদ শহীদুল্লাহ, সারিয়া সুলতানা, মনোজ দে, আরিফুন নেছা সুখী প্রমুখ। উল্লেখ্য, এঁদের অনেকেই বর্তমানে ঢাকা প্রবাসী ও জাতীয় পত্রপত্রিকায় তাদের লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়; সর্বোপরি অনেকে বিশিষ্ট কবি ও লেখক হিসাবে স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ইতোমধ্যে নাট্যসাহিত্যে অবদানের জন্য মাসুম রেজা বাংলা একাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। আধুনিক ছোটগল্পকার হিসাবে মামুন হোসাইনের নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিলু কবির, মাহমুদ হাফিজ ও রকিবুল হাসান কাব্যসহ বহু গ্রন্থ প্রণেতা। সবিশেষ কাব্যগ্রন্থ হিসাবে সৈয়দ আবদুস সাদিকের ‘কৃষ্ণপক্ষে ঘোড়দৌড়’, বিলু কবীরের ‘ক্রিশঙ্কু পরকীয়া’ ও রকিবুল হাসানের ‘দুঃখময়ী শ্যামবর্ণ রাত’ উল্লেখযোগ্য। আশি ও নব্বইয়ের দশকের কুষ্টিয়ার প্রতিশ্রুতিবান কয়েকজন কবি-নাসিমা সুলতানা, আবু নাসের কর্নেল, রোকেয়া রহমান বেবী, খৈয়াম বাসার এবং নাসের মাহমুদ ইতোমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন।
সাধক লালন ফকির
তিনি তাঁর বাউল গানের জন্য বিখ্যাত। তাঁর বাঁধা মরমী গানগুলো আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। ধারনা করা হয় বর্তমান কুমারখালী থানার চাপড়া-ভাঁড়রা গ্রামে তার জন্ম আনুমানিক জন্ম: ১৭৭৪ ইং ও মৃত্যু: ১৮৯০ ইং ।
কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার
একাধারে সাময়িক পত্রসেবী , সমাজ বিপবী ও বাউল কবি ছিলেন। তাঁর রচিত বিজয়বসন্ত বাংলা ভাষা সাহিত্যের উল্লখযোগ্য গ্রন্থ।জন্মস্থান কুমারখালি জন্ম: ১৮৩৩ ও মৃত্যু: ১৮৯৬ খ্রী:।
গগন হরকরা
ডাকহরকরা ও পিওন হওয়া সত্বেও গানে পারদর্শী ছিলেন। তার লিখিত ‘আমি কোথায় পাব তারে ,আমার মনের মানুষ যেরে’ গানটির আঙ্গীক ও সুরের অনুসরনে রবীন্দ্রনাথ জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেন।
অনুমান করা হয় কুমারখালী শিলাইদহের গোবরখালী কসবা গ্রামে তার জন্ম আনুমানিক জন্ম: ১৮৪৫ ও মৃত্যু: ১৯১০ খ্রী:
মীর মশাররফ হোসেন
বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘‘বিষাদ সিন্ধু’’।কুমারখালী থানার লাহিনীপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম জন্ম: ১৮৪৭ ও মৃত্যু: ১৯১১ খ্রী: ।
অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়
ইতিহাসবিদ, আইনজীবি ও সাহিত্যিক। তাঁর আলোচিত দু’টি গ্রন্থ হচ্ছে সিরাজদ্দৌলা ও মীর কাশিম। বিজ্ঞান সম্মত প্রণালীতে বাংলা ভাষায় ইতিহাস রচনায় পথিকৃত।মিরপুর থানার শিমুলিয়া গ্রামে জন্ম: ১৮৬১ ও মৃত্যু: ১৯৩০ খ্রী: ।
ড. রাধা বিনোদ পাল
তিনি আইন সম্পর্কিত বহু গ্রন্থের রচনা করেন। এছাড়া তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতের বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। কুষ্টিয়ার সেলিকপুর গ্রামে জন্ম জন্ম: ১৮৯৬ ও মৃত্যু: ১৯৬৭খ্রী:।
ড. কাজী মোতাহার হোসেন
১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমী ও ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা পুরুষ্কার লাভ করেন।একাধারে সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সঙ্গীতজ্ঞ ও দাবাড়ু ছিলেন।১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমী ও ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা পুরুষ্কার লাভ করেন। কুমারখালী উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামে তাঁর জন্ম জন্ম: ১৮৩৭ ও মৃত্যু: ১৯৮১ খ্রী:।
মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা
বাঙ্গালী মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম সনেট ও গদ্য ছন্দে কবিতা লিখেছেন।বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরুষ্কার ১৯৬৭ এবং একুশে পদক ১৯৭৭।পাবনা,পৈতৃকনিবাস কুমারখালী উপজেলার নিয়ামতবাড়ীয়া গ্রামে।জন্ম: ১৯০৬ ও মৃত্যু: ১৯৭৭ খ্রী:
আজিজুর রহমান
একাধারে কবি, গীতিকার ও কুষ্টিয়ার ইতিহাস সন্ধানী। তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় ২০০০।১৯৭৯ সালে একুশে পদক পান।কুষ্টিয়া থানার হাটশহরিপুর গ্রামে।জন্ম: ১৯১৪ ও মৃত্যু: ১৯৭৮ খ্রী:
আকবর হোসেন
তিনি ছিলেন জনপ্রিয় উপন্যাসিক। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অবাঞ্জিত,কি পাইনি,নতুন পৃথিবী প্রভৃতি। কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে জন্ম: ১৯১৭ ও মৃত্যু: ১৯৮১খ্রী:।
রোকনুজ্জামান দাদা ভাই
খ্যাতনামা শিশু সংগঠক।শিশু সাহিত্যে ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমী পুরুস্কার পান।কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানায় জন্ম: ১৯২৫ ও মৃত্যু: ১৯৯৯ খ্রী:।
কল্যাণ মিত্র
কল্যাণ মিত্র সাহিত্যিক, অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকার ছিলেন। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। স্বাধীনতা পরবর্তী তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
কল্যাণ মিত্র ১৯৩৯ সালে কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০ শতকের ৬০ ও ৭০ এর দশকে তার নাটক মঞ্চে ও বেতারে পরিবেশিত হয়। তার অধিকাংশ নাটক বগুড়া থেকে প্রকাশিত হয়। সামাজিক নাটকে তিনি যুক্ত থাকলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নাটক লিখেছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার লেখা ব্যঙ্গনাটক ”জল্লাদের দরবারে” ও ব্যঙ্গ নাটিকা ”মীরজাফরের রোজনামচা’‘ বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। অনেকটা কলকাতার ঢংয়ে তিনি নাটকের চরিত্র নির্মাণ, ঘটনা বিন্যাস করতেন।
রাজু আহমেদ
রাজু আহমেদ ছিলেন একজন পার্শ্ব অভিনেতা। তিনি ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘মায়ার সংসার’ (১৯৬৯), ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘মধুমিলন’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘দীপ নেভে নাই’ (১৯৭০), ‘ওরা ১১ জন’, ‘বাঘা বাঙালি’, ‘চৌধুরী বাড়ী’, ‘লালন ফকির’ (১৯৭২) এবং ‘ঝড়ের পাখি’, ‘আমার জন্মভূমি’ ও ‘রংবাজ’ (১৯৭৩) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রণাঙ্গনের শব্দসৈনিক। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত নাটক ‘জল্লাদের দরবারে’ তিনি জল্লাদ ইয়াহিয়া খানের ভূমিকায় কণ্ঠ দিয়েছিলেন। এই নাটকে তার ভরাট কণ্ঠ সেই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস আর শক্তি জুগিয়েছিল। রাজু আহমেদের বাবা লুত্ফল হক ছিলেন একজন উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী, আইনজীবী ও নাট্যব্যক্তিত্ব। তার মা রত্নগর্ভা। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ১৯৭২ সালের ১১ই ডিসেম্বর দুর্বৃত্তের হাতে প্রাণ দিতে হয় অভিনেতা ও মুক্তিযোদ্ধা রাজু আহমেদকে।
কুষ্টিয়া জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা দ্বারকানাথ ঠাকুর শিলাইদহ জমিদারী ক্রয় করে ১৮১৩ সালে তিনি কুঠিবাড়িটি নির্মাণ করেন। দ্বিজেন্দ্রনাথ, জ্যোতিবিন্দ্র নাথ, হেমেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ ঠাকুর বংশের প্রায় সকলেই পদ্মা গড়াই বিধৌত এখানে বসবাস করেন। মূলত: জমিদারী কাজকর্ম দেখাশুনার জন্য এই বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল। সে সময়ে ঠাকুর পরিবারে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ; নাটোরের পতিসর ও পাবনার শাহজাদপুরে তিনটি জমিদারী ছিল। পারিবারিক আদেশে রবীন্দ্রনাথকে শিলাইদহে জমিদারী পরিচালনার জন্য এসেছিলেন।
বাউল সম্রাট লালন শাহের মাজার
আধ্যাত্মিক সাধক লালন শাহ’র কুমারখালীর ছেঁউড়িয়াতে আশ্রয় লাভ করেন এবং পরবর্তীকালে ছেঁউড়িয়াতে মৃত্যুর পর তাঁর সমাধি স্থলেই এক মিলন ক্ষেত্র (আখড়া) গড়ে ওঠে। ফকির লালন শাহের শিষ্য এবং দেশ বিদেশের অগনিত বাউলকুল এই আখড়াতেই বিশেষ তিথিতে সমবেত হয়ে উৎসবে মেতে উঠে। এই মরমী লোককবি নিরক্ষর হয়েও অসংখ্য লোক সংগীত রচনা করেছেন। বাউল দর্শন এখন কেবল দেশে নয়, বিদেশের ভাবুকদেরও কৌতুহলের উদ্রেক করেছে। ১৯৬৩ সালে সেখানে তার বর্তমান মাজারটি নির্মাণ করা হয় এবং তা উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর মোনায়েম খান। ২০০৪ সালে সেখানেই আধুনিক মানের অডিটোরিয়ামসহ একাডেমি ভবন নির্মাণ করা হয়।
টেগর লজ
১৮৯৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেকে ব্যবসার সাথে জড়িয়ে ফেলেন। তিনি ও তার দুই ভাগ্নে সুরেন্দ্রনাথ ও বলেন্দ্রনাথ এর সহায়তায় শিলাইদহে টেগোর এন্ড কোম্পানীগড়ে তোলেন যৌথ মুলধনী ব্যবসা। সে বছরই ব্যবসায়িক সুবিধার্থে টেগোর এন্ড কোম্পানী শিলাইদহ থেকে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তরিত করেন। কোম্পানী দেখাশুনার জন্য কবি শহরের মিলপাড়ায় একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করেন। এখানে বসে কবি অসংখ্য কবিতা লিখেন যা পরবর্তিকালে ‘‘ক্ষণিকা’’, কথা ও কাহিনীতে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে এ ভবনটিও একটি দর্শনীয় স্থান।
জগতি রেলওয়ে স্টেশন
রেলওয়ের ঐতিহ্য জগতি স্টেশন রেলের ইতিহাসে কালের সাক্ষী হয়ে আছে কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশন। এটিই এদেশের প্রথম রেল স্টেশন। ব্রিটিশ আমলে কলকাতার শিয়ালদহ থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত যাতায়াতে ১৮৬২ সালে এ স্টেশনটি চালু করা হয়। ১৮৪৪ সালে আর. এম স্টিফেনসন কলকাতার কাছে হাওড়া থেকে পশ্চিম বাংলার কয়লাখনি সমৃদ্ধ রানীগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি গঠন করেন। এ কোম্পানি ১৮৫৪ সালে হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেললাইন চালু করে। এরপর ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকাতা থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত রেলপথ চালু করে। এই লাইনকেই বর্ধিত করে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন শাখা উন্মোচন করা হয়। সে সময়ই প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ববঙ্গের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতি। পরে ঢাকার সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি জগতি থেকে বর্তমান রাজবাড়ী জেলার পদ্মানদী তীরবর্তী গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত রেললাইন চালু করা হয়। সে সময় মানুষ কলকাতা থেকে ট্রেন করে জগতি স্টেশন হয়ে গোয়ালন্দঘাটে যেতেন। সেখান থেকে স্টিমারে পদ্মানদী পেরিয়ে চলে যেতেন ঢাকায়। কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে দেশের সেই প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতি।
গোপীনাথ জিউর মন্দির
কুষ্টিয়া শহরে ১৯০০ সালে যশোর জেলার নলডাঙ্গার মহারাজা প্রমথ ভূষণ দেবরায় কর্তৃক দানকৃত জমির উপর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাঁদার টাকায় এ মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। ১৯০৫ সালে মহারাজা প্রমথ ভূষণ দেব তার স্ত্রীর স্মৃতি রক্ষার্থে বর্তমান রথখোলা গোপীনাথ জিওর মন্দির ও রথের মেলা প্রচলন করেন। ১৯১৩ সালে ধনী ব্যবসায়ী মাখন রায় অপূর্ব কারুকার্য খচিত বিরাট আকৃতির একটি পিতলের রথ নির্মাণ করে দেন যা সমগ্র ভারতবর্ষের একমাত্র রথ ছিল।
মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তভিটা
বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্ত্তভিটা কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়ায় অবস্থিত। এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছোট আকারের একটি লাইব্রেরী আছে। সম্প্রতি ১৭ অক্টোবর ২০০৮ সালে মীর মশাররফ হোসেনের নামে স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থায়নে ৫৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেলা পরিষদ কুষ্টিয়া কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য একটি লাইব্রেরী ও অডিটরিয়াম এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনাব আলী ইমাম মজুমদার।
ঝাউদিয়ার শাহী মসজিদ
কুষ্টিয়া সদর থানার অর্ন্তগত ঝাউদিয়া গ্রামে শাহী মসজিদ মোঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ঝাউদিয়ার জমিদার শাহ সূফী আহমদ আলী ওরফে আদারী মিয়া নির্মাণ করেন। এটি মোঘল শিল্পকলার এক অপূর্ব নিদর্শন। মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এবং এর চার কোনায় চারটি বড় মিনার আছে। ১৯৮০ সাল থেকে প্রত্নতত্ব বিভাগ এটি সংরক্ষণ করে আসছে।
কুষ্টিয়া পৌরভবন
১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়া পৌরসভা গঠিত হয়। কুষ্টিয়ার বিখ্যাত নীলকর টি. আই কেনী নীল ব্যবসার স্বার্থে এ শহরে একটি বিশাল ভবন নির্মাণ করেন। ২১০ একরের উপর নির্মিত এ ভবনের কক্ষ ছিল ৫০টি যা ক্রিসেন্ট বিল্ডিং নামে পরিচিত ছিল। এখানেই নব গঠিত কুষ্টিয়া মহকুমা দপ্তর, কোর্ট ও মিউনিসিপ্যাল দপ্তর গড়ে উঠে। তবে বর্তমানে ভবনটি জরাজীর্ণ। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে এ শহরের এক বিত্তবান জমিদার সতীশ শাহর বাড়ীতেবর্তমান পৌরভবনটি স্থানান্তর করা হয়।
মোহিনী মিল
সচল অবস্থায় মোহিনী মিল সমগ্র এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপড়ের কলের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মিল। কুষ্টিয়ার অন্যতম বিখ্যাত ব্যক্তিত্ত্ব মোহিনী মোহন চক্রবর্তী ১৯০৮ সালে কুষ্টিয়া মোহিনী মিলস এন্ড কোম্পানী লিমিটেড নামে এই কাপড়ের মিলটি প্রতিষ্ঠা করেন। সমসাময়িক কালে অন্যান্য বস্ত্র কলের তুলনায় এই মিলের উৎপাদন অনেক বেশী মানসম্পন্ন ছিল বলে কালক্রমে এটি দেশের অন্যতম সেরা কাপড়ের মিলে পরিণত হয়।সচল অবস্থায় মোহিনী মিল সমগ্র এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপড়ের কলের স্বীকৃতি লাভ করে।মাত্র ৮টি তাঁত নিয়ে মিলটি উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তীতে মোহিনী মিল ব্যপ্তি লাভ করে। এর শ্রমিক সংখ্যা প্রায় তিন হাজারে উন্নীত হয়। মোহিনী মিলের শাড়ি ও ধুতী বাংলায় জনপ্রিয়তা লাভ করে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী থেকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা পর্যন্ত যুক্তকারী একটি রেলসেতু। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত। পাবনা জেলার পাকশী রেলস্টেশনের দক্ষিণে পদ্মা নদীর উপর এই সেতুটি অবস্থিত। এই সেতুর নির্মাণকাল ১৯০৯-১৯১৫। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয়। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১,৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫৮৯৪ফুট বা ১.৮ কিমি।এর উপর দুটি ব্রড-গেজ রেললাইন রয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে কুষ্টিয়ার সাথে কলকাতার রেল যোগাযোগ ছিল। ১৯০৯ সালে পদ্মা নদীর উপর ভেড়ামারা-পাকশি রেল সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯১৫ সালে শেষ হয়। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ এর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ব্রিজটি লম্বায় এক কিলোমিটার এবং এতে ১৮টি স্প্যান আছে। এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহতম রেল সেতু। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর বোমার আঘাতে এর দুটি স্প্যান নষ্ট হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে পুনরায় তা মেরামত করা হয়। বর্তমানে এর পাশেই লালন শাহ্ সেতুর অবস্থান।
তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া,যুগান্তর