১৮শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মাছধরার গ্রাম আজ বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ও বিলাসবহুল পর্যটন শহর
আলাপচারিতা
দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর। এটি দুবাই আমিরাতের রাজধানীও। পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত, দুবাই একটি বৈশ্বিক শহর এবং মধ্য প্রাচ্যের প্রধান ব্যবসায় কেন্দ্র। এটি যাত্রী এবং পণ্যবাহী বিমানের জন্য একটি বড় বৈশ্বিক পরিবহনের কেন্দ্র। তেল উৎপাদন শহরটির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করেছে, যা ইতিমধ্যে একটি বড় বণিক কেন্দ্র ছিল। দুবাইয়ের তেলের আউটপুট ২০০৮ সালে পারস্য উপসাগরীয় দেশটির অর্থনীতির ২.১ শতাংশ ছিল। বিশ শতকের গোড়ার দিকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র ছিল, দুবাইয়ের অর্থনীতি বাণিজ্য কর, পর্যটন, বিমানচালনা, রিয়েল এস্টেট এবং আর্থিক পরিষেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর নির্ভরশীল।[৮] দুবাই বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প, প্রচুর হোটেল এবং বড় বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে দুবাইয়ের আনুমানিক জনসংখ্যা ছিল ৩,৪০০,৮০০ জন।
১৮শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে দুবাই একটি মাছধরার গ্রাম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয় এবং ১৮২২ সালের মধ্যে বনি ইয়াস উপজাতির প্রায় ৭০০-৮০০ সদস্যের একটি শহরে পরিণত হয়, এটি আবুধাবির শেখ তাহনুন বিন শাকবুতের অধীনে ছিল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৭ টি প্রদেশের মধ্যে একটি দুবাই। আজকে দুনিয়াব্যাপী ধনীদের ভ্রমণের প্রিয় গন্তব্য এই শহর । দুবাই শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের দূরদর্শিতার কল্যাণে দুবাই বর্তমানে পৃথিবীর সবচাইতে বেশি ভ্রমন করা শহরের তালিকায় ৩ নাম্বারে অবস্থান করছে।
দুবাইয়ের আজকের এই ঈর্ষনীয় অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনের মূল কারিগর শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। তিনি অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সাথে দুবাইয়ের তেল নির্ভর অর্থনীতিকে ট্যুরিজম ও বাণিজ্য নির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত করেছেন। গড়পড়তা যেকোনো কিছুতেই আপত্তি তার। যেকোনো কাজে তিনি হয় নাম্বার ওয়ান, নাহয় দ্য অনলি ওয়ান হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন। এটাই তার সাফল্যের মূলমন্ত্র।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে জনবহুল এবং সর্ববৃহৎ শহর দুবাই। একই সঙ্গে আমিরাতের রাজধানীও এই শহরটি। পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এ শহরটি এখন পুরো বিশ্ব বাণিজ্যের উপকেন্দ্র হিসেবেই বেশি পরিচিত।
মোবাইল অ্যাপ টিকটকের পর্যটনবিষয়ক সূচক ‘টিকটক ট্রাভেল ইনডেক্স ২০২২’র জরিপে ভ্রমণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর হিসেবে উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাইয়ের নাম। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য নিউইয়র্কের রাজধানী ও আটলান্টিক সাগরের তীরবর্তী শহর নিউইয়র্ক সিটি এবং যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন। এই জরিপটি পরিচালনা করেছে আন্তর্জাতিক লাগেজ কোম্পানি বাউন্স।
আন্তর্জাতিক লাগেজ কোম্পানি বাউন্স জরিপের ফলাফল ঘোষণা করে কোম্পানি। সেখানে বলা হয়, বিশ্বের ১৪০টি শহরের টিকটক ব্যবহারকারীরা এতে অংশ নিয়েছেন। তার মধ্যে ৮১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ভিউ (পয়েন্ট) পেয়ে ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয় শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠেছে দুবাই। তালিকায় দ্বিতীয় নিউইয়র্ক সিটি ও তৃতীয় লন্ডন পেয়েছে যথাক্রমে ৫৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ভিউ এবং ৩৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ভিউ। ‘সম্পদ ও বিলাসব্যসনের প্রতিশব্দ হয়ে ওঠা দুবাই বিশ্বজুড়ে ভ্রমণপ্রেমীদের মন জয় করে নিচ্ছে। ছুটির অবসরে দুবাইয়ে নিজের মতো আরামে সূর্যালোক উপভোগ করতে চান- এমন লোকজনের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে,’ বিবৃতিতে উল্লেখ করে বাউন্স কর্তৃপক্ষ। প্রকাশিত ‘টিকটক ট্রাভেল ইনডেক্স ২০২২’ তালিকায় ভ্রমণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি শহরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। জরিপে অংশ নেয়া টিকটক ব্যবহারকারীদের পছন্দের তালিকায় থাকা বাকি ৭ শহর হলো ইস্তাম্বুল (৩৪ বিলিয়ন ভিউ), প্যারিস (৩৩ বিলিয়ন ভিউ), মিয়ামি (২৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ভিউ), লস অ্যাঞ্জেলেস (২০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ভিউ), শিকাগো (১৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ভিউ), টরন্টো (১৭ দশমিক ১ বিলিয়ন ভিউ) এবং মাদ্রিদ (১৬ বিলিয়ন ভিউ)।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, প্রধান শহর, নিরাপদ শহর ও আমিরাতে বাণিজ্যিক রাজধানী দুবাই। বিলাসবহুল জীবনযাপন, চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি, আকাশচুম্বি অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল, কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জসহ ব্যবসায়িক কারণে দুবাই ভ্রমণপ্রিয়দের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
একাধিক গগনচুম্বী অট্টালিকা। সেখানকার রাস্তায় বিলাশবহুল গাড়ির ছড়াছড়ি। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ার এই জায়গায় এমন কিছু জিনিস বিক্রি হয়, যা কেনার সাহস দেখাতে পারেন না কোটিপতি আরব ব্যবসায়ীরাও।
যা দেখবেন
বুর্জ খলিফা: বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফা, যা একইসঙ্গে একটি সাত তারকা হোটেল, মসজিদ, বিনোদনকেন্দ্র, নাইট ক্লাব, অ্যাপার্টমেন্ট, অফিস এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ ডেক হিসেবে বিখ্যাত। ভবনটি জুমেইরা সৈকত থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বুর্জ খলিফা ‘দুবাই টাওয়ার’ নামেও পরিচিত। ১৬০ তলাবিশিষ্ট আকাশচুম্বী এ ভবনটির মোট উচ্চতা ২ হাজার ৭১৭ ফুট, যার অবকাঠামো রকেটের মতো। এ ভবনে ঘণ্টায় ৪০ মাইল গতিবেগে চলে এমন মোট ৫৪টি এলিভেটর আছে।
পর্যটকদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় এবং আকর্ষণীয় স্থান। এ ভবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো ১২৪ তলার ওপরে প্রকৃতি দর্শনের জন্য পর্যবেক্ষণ ডেকটি। এখান থেকে শুধু দুবাই নয়, আরবের একটি বড় অংশ পর্যবেক্ষণ করা যায়। ভূমি ছেড়ে এ ভবনটি এতই উপরে উঠেছে যে, একই বিল্ডিংয়ে থাকা সত্ত্বেও এখানকার মানুষজন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পান। শুধু উচ্চতাই নয়, বুর্জ খলিফার আভিজাত্য এবং চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী এক মুহূর্তেই আপনাকে বিমোহিত করে তুলবে।
বুর্জ আল আরব : বিশ্বের একমাত্র বিলাসবহুল সাত তারকা হোটেল বুর্জ আল আরব। ৩২১ মিটার লম্বা এ ভবনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে অনেকটা পাল তোলা জাহাজ বা তিমি মাছের মতো, যা জুমেরিয়া সৈকতে পাশে সমুদ্রের মধ্যে একটি কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি করা হয়েছে। আকাশচুম্বী এ হোটেল বিশ্বের চতুর্থ সুউচ্চ ভবন। বিলাসবহুল এ হোটেলের অত্যাধুনিক রাজকীয় অন্দরসজ্জা, দৃষ্টিনন্দন অ্যাকুরিয়াম এবং চমৎকার ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনাকে দারুণ এক শিহরণ দেবে।
হোটেলের প্রতিটি রুমেই রয়েছে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের আইপ্যাড, যার মাধ্যমে আপনি সহজেই হোটেল এবং রেস্তোরাঁর নানা তথ্য জানতে পারবেন। ব্যাপক ব্যয়বহুল এ হোটেলে প্রতি রাত থাকার জন্য খরচ হবে ৪ হাজার ৫০০ দিরহাম। তবে, এত টাকা খরচ না করেও পাশে থাকা জুমেইরা সৈকতে গিয়ে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করে নিতে পারেন ।
বুর্জ খলিফা, যা একইসঙ্গে একটি সাত তারকা হোটেল, মসজিদ, বিনোদন কেন্দ্র, নাইট ক্লাব, এ্যাপার্টমেন্ট, অফিস এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণ ডেক হিসেবে বিখ্যাত। ১৬০ তলাবিশিষ্ট ‘বুর্জ খলিফা’র মোট উচ্চতা ২,৭১৭ ফুট। যার অবকাঠামো করা হয়েছে রকেটের মতো। এ ভবনে ঘণ্টায় ৪০ মাইল গতি বেগে চলে এমন মোট ৫৪টি এলিভেটর আছে। এছাড়া যাদের নিজস্ব হেলিকপ্টার রয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে হেলিপ্যাড ব্যবস্থা।
পাম আইল্যান্ড :দুবাইয়ের পাম আইল্যান্ডটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি জায়গা, যা মানুষের তৈরি কৃত্রিম দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টিকারী। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে সাগরের বুকে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম তিনটি দ্বীপ। সমুদ্রের ওপর বালি দিয়ে তৈরি তিনটি দ্বীপ এমনভাবে বসানো হয়েছে যা ওপর থেকে দেখতে একটি পাম গাছের মতো লাগে। এখানে রয়েছে বিলাসবহুল সব হোটেল আর রিসোর্ট। আরো রয়েছে নিজস্ব আবাসিক সৈকত, অ্যাপার্টমেন্ট, সুইমিং পুল, থিম পার্ক, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, হাসপাতাল এবং খেলাধুলার সুবিধা।
আটলান্টিস, দি পাম: আটলান্টিস, দি পাম হচ্ছে একটি হোটেল রিসোর্ট, যা দুবাইয়ের পাম জুমাইরাতে অবস্থিত। কৃত্রিম দ্বীপের ওপর তৈরি এটিই বিশ্বের প্রথম রিসোর্ট। দি পামে প্রবেশ করার ঠিক পর মুহূর্ত থেকেই এর বিলাসিতা ও চোখ ধাঁধানো জৌলুস ।
দুবাই স্বর্ণ মার্কেট: বিশ্বের সবচেয়ে কম দামে খাঁটি স্বর্ণ পাওয়া যায় যে দেশে, সে দেশটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুবাই শহরবাসীরা নিজেরাই একে স্বর্ণের দেশ বলে দাবি করেন।
প্রথমদিকে স্বর্ণের জন্য বিখ্যাত দু’টি দেশ ছিল ভারত ও চীন। তবে এ দেশ দু’টিকে ছাড়িয়ে বর্তমানে শীর্ষে দুবাই। প্রতি বছর স্বর্ণ কেনার জন্যই বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা দুবাইয়ে ভিড় করে। সবাই দুবাই থেকে স্বর্ণালঙ্কার কিনতে প্রবল আগ্রহী। অনেকে আবার পুরনো স্বর্ণ বিক্রি করে নতুন স্বর্ণ কেনেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মোট প্রবাহের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই আসে দুবাই থেকে। দিন দিন দুবাই স্বর্ণের জন্য এতই বিখ্যাত হয়ে উঠছে। এর অন্যতম কারণ, দুবাইয়ের স্বর্ণের একটি বিশেষত্ব আছে, এখানকার স্বর্ণের তৈরি জিনিসপত্র নিঃসন্দেহে নির্ভেজাল। এখানে সবচেয়ে কম দামে সেরা জিনিস পাওয়া যায়। তাই স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বিক্রির সময় কোনো দর কষাকষি পছন্দ করেন না।
স্কি দুবাই : দুবাই ভ্রমণের পথে মরুভূমির বুকে ধু ধু করে বালি ওড়া কিংবা মরিচিকার দেখা পাওয়া স্বাভাবিক মনে হলেও বরফে স্কি করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, মরুভূমিতে ঝলসানো রোদ থাকলেও দুবাইয়েই কেবল মরুভূমির বুকে স্কি করা সম্ভব। তাও আবার বরফঘেরা মাঠে, যা ২২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
স্কি দুবাই মূলত একটি ইনডোর স্কি লাউঞ্জ, যেখানে পাওয়া যাবে পৃথিবীর সর্বপ্রথম ৪০০ মিটার দীর্ঘ ব্ল্যাক রান। লাউঞ্জের ভেতরে প্রবেশ করলে কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনি পেতে পারেন এন্টার্কটিকা ভ্রমণের অনুভূতি। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্কি দুবাইয়ের অভিজ্ঞতা উত্তেজনাপূর্ণ ও আনন্দময় মুহূর্ত সৃষ্টি করে। স্কি দুবাইয়ের প্রধান আকর্ষণ জেনেটু পেঙ্গুইন, কিং পেঙ্গুইন। এখানে পেঙ্গুইনদের সঙ্গে সাঁতার কাটাসহ কাচের বিশাল প্রাচীরের মাধ্যমে পেঙ্গুইনের মুখোমুখি হওয়া সত্যি অতুলনীয়। শুন্যের নিচে মাইনাস ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় বসেও আপনি মজা করে আইসক্রিম বা মগ ভর্তি গরম কফি খেতে পারেন। সে জন্য আপনাকে অবশ্যই বিশেষ এক ধরনের পোশাক পরতে হবে।
দুবাই ম্যারিনা : সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেক সুউচ্চ ভবন দুবাই ম্যারিনা। যেখানে রয়েছে বিশাল বিশাল সব আকাশছোঁয়া ভবন, বিলাসবহুল সৌন্দর্যে আবেশিত প্যাঁচানো ‘ক্যানন টাওয়ার’, সমুদ্র সৈকত, যা ট্যুরিস্টদের মন কেড়ে নেয় এক নিমিষেই।
সুন্দর আবহাওয়ার একটি দিন বেছে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন দুবাই ম্যারিনা থেকে। এখানে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ নিয়ে ঘুরতে পারেন ম্যারিনার অন্যতম ক্রুজে; কিংবা প্রিয়জনদের সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে অসাধারণ একটি ডিনারও করে নিতে পারেন।
ওয়াটার কার
দুবাইয়ের অত্যাশ্চর্য বহুমূল্য সামগ্রীর প্রসঙ্গ উঠলে প্রথমে বলতে হবে ওয়াটার কারের কথা। মার্কিন সংস্থার তৈরি জল ও রাস্তা — দু’জায়গাতেই সমান গতিতে চলতে পারা এই গাড়িগুলির এক একটির দাম ১.৩৫ লাখ আমেরিকান ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১.১২ কোটি টাকা। ১৯৯৯ থেকে ডেভিড মার্চের সংস্থা এই গাড়ি তৈরি করে আসছে।
দুবাইয়ের যুবরাজ শেখ হামদান বিন মহম্মদ আল-মাকতুম কাছে রয়েছে ছ’টি ওয়াটার কার। এগুলির চাকা বিশেষভাবে তৈরি। ফলে মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই স্থল থেকে জলযানে পরিণত হতে পারে ওই গাড়ি। জলে ওয়াটার কার ঘণ্টায় ৬০ মাইল বেগে ছুটতে পারে। রাস্তায় এর গতিবেগ ১০ মাইল বলে জানা গিয়েছে।
সমুদ্রের নীচে হোটেল
সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর এই শহরে রয়েছে সমুদ্রের নীচের একটি হোটেল। যেখানে একটি রাত থাকার জন্য অতিথিদের সর্বনিম্ন খরচ করতে হয় প্রায় সাড়ে ছ’হাজার মার্কিন ডলার। তবে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার দিতে হয় পর্যটকদের। আন্ডারওয়াটার হোটেলের দু’টি বিশালবহুল স্যুইট নাম নেপচুন ও পোসেইডন। সেখান বিছানায় শুয়েই মেঝে, ছাদ বা জানালা দিয়ে উপহ্রদে বসবাসকারী পঁয়ষট্টি হাজারেরও বেশি সামুদ্রিক প্রাণীকে খুব কাছ থেকে দেখা যায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অ্যাকোরিয়ামটি অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম সর্ববৃহৎ দুবাই শপিং মলে। অ্যাকোরিয়ামটিতে ৩৩ হাজার প্রজাতির প্রাণী রাখা আছে।
রোবটের উটের দৌড়
একটা সময় এই আরব দেশটিতে উটের দৌড়ে শিশুদের জকি হিসেবে ব্যবহার করা হত। কিন্তু পরবর্তীকালে মানবাধিকার সংগঠনগুলির চাপে শিশুদের জায়গায় রোবট নিয়ে আসেন উদ্য়োক্তারা। ৫০০ মার্কিন ডলারে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ওই রোবটগুলিকে কিনতে পাওয়া যায়। তার পর থেকে উটের দৌড় আরও জনপ্রিয় হয়েছে দুবাইতে।
গাড়ির জন্য কপ্টার
এছাড়া জ্যামে আটকে থাকা গাড়িকে দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে কপ্টার ব্যবহার করে থাকে দুবাই প্রশাসন। বিশ্বের আর কোনও দেশে এই পরিষেবা দেওয়া হয় না। সেদিক থেকেও আরব মুলুকটির শহর অন্যদের থেকে অনন্য।
এছাড়াও হাইড্রোফ্লাইং বুট বিক্রি হয় দুবাইতে। যার প্রতি জোড়ার দাম পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। যা পশ্চিম এশিয়ায় বিক্রি করে ফ্লাইবোর্ড নামের একটি বিদেশি সংস্থা।
দুবাইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা: দুবাইয়ের পুলিশ পৃথিবীর সব চাইতে ধনী পুলিশ। দুবাইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা পুরোটাই অটোমেটেড। স্মার্ট পুলিশ স্টেশনে যে কেউ চাইলেই কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ক্রিমিনাল রেকর্ডস চেক করতে পারবেন, কোনো কমপ্লেইন বা কোন কিছু হারিয়ে গেলে সেটির জন্য রিপোর্ট করতে পারবেন। সব কিছু অটোমেটেড হওয়ায় কোনো রকম হয়রানি বা ঘুষ নেওয়া-দেওয়ার সুযোগ নেই।
ক্রাইম এবং ডিসিপ্লিন ঠিক রাখতে দুবাইয়ের একটি পলিসি আছে। সেটি হলো জরিমানা। অনেকটা পান থেকে চুন খসলেই আপনাকে গোনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ যদি নোংরা গাড়ি চালায় তাহলে অটোমেটিকভাবে তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে ২০০ দিরহাম জরিমানা কেটে নেওয়া হয়। কারোও যদি চেক বাউন্স হয় তাহলে তার গন্তব্য সোজাসুজি জেল।
দুবাইয়ে প্রায় ২০০ জাতীয়তার মানুষ রয়েছে। দুবাইয়ের মাত্র ১০% লোকাল শেখ বাস করে, বাকি সবাই বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। পৃথিবীর সব বড় বড় অনেক তারকার দুবাইতে এক বা একাধিক বাড়ি রয়েছে। দুবাইয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ট্যাক্স ফ্রি হওয়াতে বাণিজ্য বা সেরা মেধাবী মানুষগুলোও জীবন গড়ার জন্য দুবাইয়ে পাড়ি জমায়।
দুবাইকে বলা হয় ‘গ্লোবাল ভিলেজ’, যার কোনো সীমানা নেই। আর সেই গ্রামের প্রভাবশালী ‘মাতবর’ হলেন শেখরা। অঢেল টাকা-পয়সার মালিক শেখরা যা কিছু সুন্দর তার সবকিছুই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন। জীবনকে নানাভাবে উপভোগ করতে তারা তাদের চারপাশকে সাজিয়েছেন নানা অনুষঙ্গে।
শেখদের আনন্দ-বিনোদের জন্য রয়েছে বুর্জ আল-খলিফা, বুর্জ আল-আরব থেকে শুরু করে দুবাই মল, পাম আইল্যান্ড, স্কাইডাইভিং, মরুভূমিতে সাফারি, মিরাকল গার্ডেন, কোরআন পার্ক, প্রমিজ ব্রিজসহ বহু বিনোদন পার্ক ও আকর্ষণীয় জায়গা।
দুবাইকে বহুজাতিক সংস্কৃতির মিলনমেলা বলা হয়ে থাকে। এখানে প্রায় দুশ’রও বেশি জাতির মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। আপনি যে দেশ থেকেই দুবাই বেড়াতে যান না কেন, স্বদেশী মানুষের দেখা পাবেনই।
রাতের বুর্জ খলিফা পর্যটকদের কাছে এটি নিঃসন্দেহে আরব আমিরাতের সবচেয়ে দর্শনীয় এবং আকর্ষণীয় স্থান। এই ভবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো ১২৪ তলার উপরে প্রকৃতি দর্শনের জন্য পর্যবেক্ষণ ডেকটি। যেখান থেকে শুধু দুবাই নয়, আরবের একটি বৃহৎ অংশ পর্যবেক্ষণ করা যায়। ভূমি ছেড়ে এই ভবনটি এতটাই উপরে উঠেছে যে, একই বিল্ডিংয়ে থাকা সত্ত্বেও এখানকার মানুষজন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে পান। শুধু উচ্চতাই নয়, বুর্জ খলিফার আভিজাত্য এবং চোখ ধাঁধানো নির্মাণশৈলী এক মুহূর্তেই যে কাউকে বিমোহিত করবে।
রাতের বুর্জ খলিফাতে লেজার শো মনে রাখার মতো। আর দুবাই ফাউন্টেইনের ওয়াটার শো তো আছেই। ফাউন্টেইনে পানির বিচিত্র খেলা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এটিই পৃথিবীর সব থেকে বড় ফাউনন্টেইন। এখানকার বিশাল কৃত্রিম ওয়াটার ডান্স প্রায় সাড়ে ছয় হাজার সঙ্গীতের সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ৩ থেকে ৬ মিনিট ধরে নৃত্য পরিবেশন করে। সন্ধ্যায় এই ফাউন্টেইনে যুক্ত হয় ৬ হাজার ৬০০টি সুপার লাইট এবং ২৫টি রঙের প্রজেক্টর। যা পানির ধারাকে বহুরূপে প্রকাশ করে। এমন কি রঙিন আলোকরশ্মির ঝলমল সেই আলো ২০ মাইলেরও বেশিদূর থেকে দেখা যায়। প্রতি ১৫-২০ মিনিট অন্তর এই ওয়াটার ডান্স দেখা যায়।