নাসিরুদ্দিন হোজ্জার ৩ গল্প
মোল্লা নাসিরুদ্দিন একজন মধ্যযুগীয় মুসলিম সুফি যিনি হাস্যরসাত্মক চরিত্র হিসেবে সুপরিচিত।
মধ্যযুগে আনুমানিক ত্রয়োদশ শতকে সেলজুক শাসনামলে ইরানের বৃহত্তর খোরাসানে তিনি বসবাস করতেন।অবশ্য নিকট ও মধ্য প্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশই নাসিরুদ্দিনকে তাদের দেশের বলে দাবী করে। এর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক এবং উজবেকিস্তান। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে তার নাম বিভিন্নভাবে উচ্চারিত হয়। সাধারণত অধিকাংশ সংস্কৃতিতে “হোজ্জা” এবং “মোল্লা” নামে পরিচিত। তিনি জনপ্রিয় দার্শনিক এবং বিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। তার হাস্যরসাত্মক গল্প এবং উক্তিগুলোই তাকে বিখ্যাত করে রেখেছে। চীনে তিনি “আফান্টি” নামে পরিচিত এবং চীনারা তাকে উইগুরের তুর্কী ব্যক্তি বলে মনে করে।
বিড়াল সব মাংস খেয়ে ফেলেছে
গিন্নি মাংস রান্না করতে গিয়ে একটু একটু টেস্ট করতে করতে সব মাংস খেয়ে ফেলল।
হোজ্জা নদী থেকে গোসল সেরে এসে খেতে বসে মাংস না দেখে জিজ্ঞাসা করলে গিন্নি জানালো, বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে।
হোজ্জা তাড়াতাড়ি বিড়ালটাকে ধরে ওজন করে দেখল যে সেটার ওজন এক কেজি।
গিন্নিকে তখন বলল, ‘এটা যদি বিড়াল হয় তবে মাংস কোথায়, আর এটা যদি মাংস হয়, তবে বিড়ালটা কোথায়?’
লবণ দিয়ে খাই
হোজ্জা আর তার এক বন্ধু একবার এক হোটেলে ঢুকল কিছু খাওয়ার জন্য। খাওয়া শেষে হিসাব করে দেখল যে, দুই গ্লাস দুধ খাওয়ার মতো টাকা ওদের হাতে নেই। তাই দুজনের জন্য এক গ্লাস দুধ চাইল। দুধ আসার পর হোজ্জার বন্ধুটি বলল, ‘ভাই, তুমি আগে অর্ধেকটা খেয়ে ফেল।’
হোজ্জা জানতে চাইল, কেন?
বন্ধুটি বলল, ‘আমি আবার চিনি ছাড়া দুধ খেতে পারি না। অথচ একজনের খাওয়ার মতোই চিনি আছে আমার কাছে। তাই বলছিলাম যে, তুমি অর্ধেকটা খেয়ে নিলে বাকিটা আমি চিনি দিয়ে খাব।’
চিনি না দেয়ায় হোজ্জা মনে মনে রেগে গেল। সে তার বন্ধুকে শিক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
হোজ্জা তখন গ্লাসটায় অনেকটা লবণ ঢেলে বলল, ‘তাহলে আমার অর্ধেক ভাগটা আমি লবণ দিয়ে খেয়ে নিলাম। বাকিটা তুমি চিনি মিশিয়ে মিষ্টি করে খেয়ো!’
পানির রাজহাঁসগুলোর একটাই পা
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা একদিন একটা রাজহাঁস রোস্ট করে বাদশার দরবারের দিকে রওনা দিলেন। রোস্ট করা রাজহাঁসটা তিনি বাদশাকে উপহার দেবেন।
পথে চলতে চলতে রোস্টের ঘ্রাণে হোজ্জার খিদে পেয়ে গেল।
অগত্য একটা গাছের ছায়ায় বসে রাজহাঁসটার একটা পা কেটে খেয়ে ফেললেন।
প্রাসাদে এসে হোজ্জা বাদশাকে রোস্টের থালাটা উপহার দিলেন। ঢাকনা খুলে বাদশা দেখেন, রাজহাঁসটার পা একটা।
তিনি হোজ্জাকে বললেন, ‘সে কী! তোমার রাজহাঁসের মাত্র একটা পা কেন?’
হোজ্জা ভেবেছিলেন, বাদশা উপহারটি পেয়ে বাবুর্চির হাতে তুলে দেবেন। বাবুর্চি সেটাকে কেটেকুটে এনে বাদশার সামনে পরিবেশন করবে। কিন্তু হলো উল্টোটা।
বাদশার প্রশ্নে থতমত খেয়ে হোজ্জা বললেন, ‘হুজুর, ওই দেখুন, লেকের পানির রাজহাঁসগুলোর একটাই পা।’
আসলে সে সময় রাজহাঁসগুলো প্রাসাদের পাশের লেকে এক পা গুটিয়ে অন্য পায়ে ভর করে দাঁড়িয়েছিল। তাই ভাগ্যক্রমে হোজ্জার কথার সঙ্গে দাঁড়ানো রাজহাঁসের দৃশ্য মিলে গেল।
ওদিক বাদশা কিন্তু হোজ্জার চালাকি ধরে ফেললেন।
তিনি একজন রক্ষীকে বললেন, রাজহাঁসগুলোকে লাঠি দিয়ে তাড়াতে।
লাঠির ভয়ে রাজহাঁসগুলো দুই পায়ে ভর দিয়ে দৌড়ে পালাল।
বাদশা বললেন, ‘হোজ্জা, দেখলে তো, ওদের দুটো করে পা?’
হোজ্জা বললেন, ‘হুজুর, ওরা তো সামান্য রাজহাঁস। ও রকম লাঠি দিয়ে তাড়ালে আমারও দুই পায়ের জায়গায় চার পা গজাত।’