ইসলামের বিশুদ্ধ চর্চা ও বর্ণনার জন্য নজদ অঞ্চল প্রসিদ্ধ। এই অঞ্চলে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের হাত ধরে ওহাবী মতবাদ বা সালাফি মতবাদ জন্ম ও বিকাশ লাভ করে।
রুহুল কুদ্দুস টিটো
পশ্চিম দিক থেকে তুয়াইক পর্বতের দৃশ্য, দিগন্তের ওপাশে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ অবস্থিত
নজদ (আরবী نجد ) হচ্ছে সৌদি আরবের মধ্যবর্তী অঞ্চল। ওয়াহাবী আন্দোলন এর জন্মস্থান হিসেবে নজদ এলাকা বিশেষ প্রসিদ্ধ।সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ নজদ অঞ্চলে বাস করে এবং এদের বেশিরভাগ ওহাবীপন্থী।রিয়াদ, আল কাশেম এবং হাইল এলাকা নিয়ে নজদ অঞ্চল গঠিত। নজদবাসীগণ সৌদি আরবে সংখ্যালঘু। কারণ নজদ প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত।
আরবী শব্দ নজদ অর্থ হচ্ছে উচ্চ ভূমি। একদা আরবের অঞ্চলের বিস্তীর্ণ উচু অঞ্চলকে বোঝাতে নজদ ব্যবহার করা হতো, কিন্তু মধ্যাঞ্চলের এই উচু ভূমি কালের পরিক্রমায় নজদ নামে পরিচিতি লাভ করে। নজদের পশ্চিমে হেজাজ ও ইয়েমেন, পূর্বে পূর্ব আরব এবং উত্তরে ইরাক ও সিরিয়া অবস্থিত।ইসলামের বিশুদ্ধ চর্চা ও বর্ণনার জন্য নজদ অঞ্চল প্রসিদ্ধ। এই অঞ্চলে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের হাত ধরে ওহাবী মতবাদ বা সালাফি মতবাদ জন্ম ও বিকাশ লাভ করে।
নজদের সব থেকে বড় শহর রিয়াদ যা সৌদি আরবেরও সব থেকে বড় শহর। ২০০৯ সালে সৌদি আরবের সব থেকে বড় শহরের লোকসংখ্যা ছিলো ৪৭ লক্ষ মাত্র। বুরাইদাহ, উনাইযাহ, আর রাস নজদ এলাকার অন্যতম শহর। ক্ষুদ্র শহর ও গ্রামের মধ্যে আছে সুদাইর, আল খারজ, দাওয়াদমি, আফিফ, আল মাজমাআহ, শাকরা, থারমাডাআ, ধুরমা, আল গাওয়াইয়াহ, আল হারিক, হতাত বনি তামিম, লায়লা, আস সুলাইয়ি এবং ওয়াদি আদ দাওয়াসির।
Muhammad ibn ʿAbd al-Wahhab (আরবি: محمد بن عبد الوهاب;বাংলায়: মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব) (জন্ম ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে, মৃত্যু ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে) একজন ইসলামিক সালাফি পণ্ডিত এবং ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা।তাঁর জন্ম নজদ প্রদেশে (বর্তমান রিয়াদ)।মূলত তাঁর নামানুসারে এই আন্দোলনের নাম হয়েছে।
ওয়াহাবী আন্দোলন (আরবীঃ وهابية ওয়াহাবিয়াহ) হচ্ছে ধর্মীয় আন্দোলন বা ইসলামের একটি শাখাগোষ্ঠী যা অর্থোডক্স, ধর্মের দিক থেকে অতিচরমপন্থী,”বিশুদ্ধবাদী,”একেশ্বরবাদীর উপাসনার জন্য ইসলামী পূনর্জাগরণ,চরমপন্থী আন্দোলন ইত্যাদি নামে পরিচিত। ইবনে তাইমিয়া এবং আহমাদ ইবনে হান্বাল এর শিক্ষায় উদ্ধুদ্ধ হয়েএই মতবাদে বিশ্বাসীরা ইসলামের মূলধারা থেকে বিচ্যুতদেরকে কোরআন ও হাদিসের বর্ণিত পথে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
ওহাবী (وهابى) শব্দটি আরবী, এটি আল্লাহতালা’র সিফাতি নামগুলোর অন্যতম। আক্ষরিক অর্থে ওয়াহাবী বা ওহাবী মানে ‘আল্লাহওয়ালা’। তবে, ঐতিহাসিকভাবে ‘ওহাবী’ বলতে মূলত সৌদি আরবের প্রখ্যাত শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব এর ‘মুহাম্মদী আন্দোলন’ এর সাথে জড়িত কিংবা তার মতের অনুসারীদের বুঝানো হয়।
বিশ্বের ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে বাস করে। সৌদি আরবের ২২.৯%, কাতারের ৪৬.৮৭%, আমিরাতের ৪৪.৮%, বাহরাইনের ৫.৭%, কুয়েতের২.১৭% জনগণ ওয়াহাবী পন্থী। সৌদি আরবের ওয়াহাবী পন্থী লোকের বেশীর ভাগ নজদ (রিয়াদ) অঞ্চলে বাস করে সৌদি আরব, কাতার, শারজাহ এবং রাস আল খাইমাহ তে ইসলামের অফিশিয়াল সংস্করণ হচ্ছে ওয়াহাবী মতবাদ।
কেউ কেউ মনে করেন ভারতে উত্তর প্রদেশের সৈয়দ আহমদ বেরলভি মক্কায় হজ করতে গিয়ে আবদুল ওয়াহাবের সংস্পর্শে এসে প্রভাবিত হন এবং তিনি ভারতে ফিরে এসে ওয়াহাবি অন্দোলনের অনুকরণে ভারতে ধর্মসংষ্কার কার্যক্রম শুরু করেন। যদি ও এই বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, সৈয়দ আহমেদ ব্রেলবী শিখদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং শিখদের সাথে ইংরেজদের সুসম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে ইংরেজরা শিখদের সাথে সমন্বয় করে তাঁকে ওহাবী মতবাদ প্রচারের সাথে যুক্ত হওয়ার ভুয়া ইতিহাস তৈরি করে। বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতে, ভারতে ওহাবী মতবাদের প্রচার করেছিল মাজহাব বিরোধী আহলে হাদিস আকিদার অনুসারীরা।