‘হে বিশ্বাসীরা! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহকে মনে রেখে তাড়াতাড়ি করবে ও কেনাবেচা বন্ধ রাখবে। এ-ই তোমাদের জন্য ভালো; যদি তোমরা বোঝো।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ৯)
‘জুমা’ শব্দের অর্থ এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা কাতারবদ্ধ হওয়া। শুক্রবার মসজিদে জোহরের চার রাকাতের পরিবর্তে কাতারবদ্ধ হয়ে দুই রাকাতের যে ফরজ নামাজ আদায় করা হয়, ইসলামের পরিভাষায় সেটিই সালাতুল জুমা বা জুমার নামাজ।
জুমার দিনটি এবং এই দিনের আমল সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এককভাবে অন্য কোনো দিন বা দিনের নামাজ নিয়ে এত বর্ণনা আর পাওয়া যায় না। আমলের দিক থেকে আল্লাহ তাআলা যেসব দিনকে ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন, জুমা তার অন্যতম।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথম মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল; তৃতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল এবং সে যেন একটি ছাগল কোরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ যে ব্যক্তি মসজিদে গেল, সে যেন একটি মুরগি সদকা করল। আর পঞ্চম যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল, সে যেন একটি ডিম সদকা করল। এরপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুতবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যায়।’ (বুখারি: ৮৮১)
জুমার নামাজের আজান দেওয়ার পর সব বৈষয়িক কাজ স্থগিত রেখে নামাজ আদায় করার জন্য আল্লাহ সবাইকে মসজিদে কাতারবন্দী হওয়ার আদেশ দিয়েছেন। এর পরের আয়াতেই বলা হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা বাইরে ছড়িয়ে পড়বে ও আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে বেশি করে ডাকবে; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)। অর্থাৎ আল্লাহর হক আদায় করার মাধ্যমে আখিরাতের সম্পদ অর্জন করার পর আবার দুনিয়ার সম্পদ তথা স্বাভাবিক রুটিরুজির অন্বেষণে ছড়িয়ে পড়তে বলা হচ্ছে।
জুম্মার নামাজের সময়জুমার দিন যোহরের নামাযের পরিবর্তে দুই রাকাআত জুমআর নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানদের উপর ফরজ। এর ওয়াক্ত যোহরের ওয়াক্তের সময়। জুম্মার দিন দুপুরে গোসল করে পরিষ্কার পোষাক পরিধান করে আযানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে উপস্থিত হয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করা উত্তম।
আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন জানবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাত-এর জন্য প্রথমে আগমন করে সে যেন, একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন, একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হন তখন ফিরিশতাগণ জিকর শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন। (বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৮৩৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮৮১)
জুমার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা আবশ্যিক এবং তা একাকী আদায় করার নিয়ম নেই। কুরআনে জুমার নামাজের সময় হলে কাজ বন্ধ করে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে কোনো ব্যক্তি যদি যুক্তিসঙ্গত কারণবশত (যেমন খুব অসুস্থ ব্যক্তি) জুমা আদায় করতে না পারে তবে তার ক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করা নিয়ম। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তির উপর, যেমন ভ্রমণকারী (মুসাফির) অবস্থায় জুমার আবশ্যকতা থাকে না এবং সেক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করলে তা গ্রহণীয় হয়। তবে ভ্রমণকারী চাইলে জুমা আদায় করতে পারে।