ইজ়রায়েলের নিশানায় আল-নুখবা, হামাসের কমান্ডো বাহিনীই হামলা চালিয়েছিল গাজা থেকে
ছবি: রয়টার্স গাজায় ইজ়রায়েলি বিমানহানা
শনিবার ভোরে এই বাহিনীরই হাজারের বেশি যোদ্ধা গাজ়া সীমান্তে ‘দি গ্রেট স্মার্ট ফেন্স’ ভেঙে ঢুকে পড়েছিল ইজরায়েলি ভূখণ্ডে। নির্বিচারে হত্যালীলা চালানোর পাশাপাশি, পণবন্দি করেছিল দেড়শোর বেশি ইজ়রায়েলিকে। হামাসের সামরিক শাখা ইজ় আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেডের সেই ‘এলিট’ কমান্ডো ইউনিট আল-নুখবার সদর দফতরে এ বার হানা দিল ইজ়রায়েলি বায়ুসেনা।
শুক্রবার ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমান গাজ়ায় হামলা চালিয়ে আল-নুখবার ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার। যদিও এখনও হামাসের তরফে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। আল-কাসাম ব্রিগেডের ওই দফতরে ইজ়রায়েলি বিমানহানার কথা জানিয়েছে ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও।
তবে ইজ়রায়েলের এই বিমানহানায় হামাসের কমান্ডো বাহিনীর তেমন ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলেই সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। কারণ, গত কয়েক বছরে গাজ়া জুড়ে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ বানিয়ে ডেরা গড়ে তুলেছে তারা।
৭ অক্টোবরের হামলার মূল চক্রী আল-কাসাম ব্রিগেডের প্রধান মহম্মদ দেইফের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আল-নুখবা কমান্ডো বাহিনী। রকেট হামলা চলাকালীন এই বাহিনীর যোদ্ধারাই ইজ়রায়েলের তৈরি কংক্রিট এবং ইস্পাতের ‘দি গ্রেট স্মার্ট ফেন্স’ ভেঙে মোটরসাইকেলে চড়ে হামলা চালিয়েছিল। সেই সফল হামলার নেপথ্যে ছিল দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা। প্রাচীর ভাঙার জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্মীয়মাণ বাড়িগুলিতে গোপনে মজুত করা হয়েছিল বুলডোজার এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক।লড়াই
কঠিন হতে পারে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সেনার
ভ্রাতৃপ্রতিম প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের তুলনায় যোদ্ধার সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। অস্ত্রসম্ভারেও অনেক এগিয়ে লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা। নানা ক্যালিবার এবং পাল্লার রকেটের পাশাপাশি ইরানের মদতপুষ্ট এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে ‘গাইডেড’ ক্ষেপণাস্ত্রও! গত চার দিনের সঙ্ঘাতের ফল বলছে, উত্তর সীমান্তে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হলে গাজ়ার মতো নিরঙ্কুশ আধিপত্য দেখানো কঠিন হবে তেল আভিভের।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তার উত্তরসূরি রাশিয়ার তৈরি একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট রয়েছে হিজ়বুল্লার অস্ত্রাগারে। রয়েছে, চিনা ‘ভূমি থেকে ভূমি’ এবং ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও। এর পাশাপাশি ইরানে তৈরি ‘ভূমি থেকে ভূমি’ এবং বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে প্যালেস্তিনীয়দের পাশে দাঁড়ানো এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে। পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইরানের সামরিক প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েকটি পুরনো রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আধুনিকীকরণের কাজও সেরে ফেলেছে হিজ়বুল্লা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত রুশ রকেট কাতুসা এবং তার পরবর্তী সংস্করণ বিএম-২১ গ্রাদ হিজ়বুল্লার অন্যতম শক্তি। সামরিক ট্রাকে বহনযোগ্য ১০৭ এবং ১২২ মিলিমিটারের এই ‘মাল্টি ব্যারেল রকেট’-এর বেশ কয়েকটি সংস্করণ রয়েছে হাসান নাসারুল্লার বাহিনীর হাতে। ১১ থেকে ৫২ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রের কয়েকটি ইতিমধ্যেই ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছে তারা। সোভিয়েত জমানার ৩৫ কিলোমিটার পাল্লার বিএম-২১ উরগান এমনকি, ৫০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরকবাহী ৭০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘স্কাড’ রয়েছে হিজ়বুল্লার কাছে।
ষাটের দশকে তৈরি চিনা ‘টাইপ ৬৩’ মাল্টি ব্যারেল রকেটের পাশাপাশি হিজ়বুল্লার কাছে রয়েছে ইরানের সহযোগিতায় তৈরি উন্নততর সংস্করণ ফজ়র-১। ন’কিলোমিটার পাল্লার এই রকেট ইতিমধ্যেই ইজ়রায়েল ভূখণ্ডে আছড়ে পড়েছে বেশ কয়েক বার। এই পাশাপাশি ইরানে তৈরি ‘ফলঘ’, ‘খাইবার’, ‘শাহিন’, ‘নজ়েয়ত’-এর মতো বিভিন্ন পাল্লার রকেট এবং ২০০ কিলোমিটার পাল্লার ‘ফতে-১১০’ গাইডেড ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে হিজবুল্লার। ফলে লড়াই কঠিন হতে পারে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সেনার।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা