ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় টানা ১১ দিনের মতো চলছে ইসরায়েলের বোমা হামলা। এতে বিধ্বস্ত এক এলাকায় পরিণত হয়েছে গাজা। বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটে চরম মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন গাজার ২২ লাখ বাসিন্দা।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, গাজাবাসীর দুর্দশা দিন দিন বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর জন্য মিসর–গাজা সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং খুলে দেওয়া হবে বলে আশার আলো দেখা গিয়েছিল। তবে এমন কিছু এখনো ঘটেনি।
গতকাল সোমবার রাতভর দক্ষিণ গাজার রাফাহ ও খান ইউনিসে আবাসিক ভবনে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের নির্দেশের পর উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে আসা অনেকে সেখানে অবস্থান করছিলেন।
উত্তর গাজা ছেড়েছেন ছয় লাখ মানুষ: ইসরায়েলের নির্দেশের পর উত্তর গাজা থেকে প্রায় ছয় লাখ মানুষ পালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস। সেখানে এখনো কয়েক লাখ মানুষ রয়ে গেছেন উল্লেখ করে তাঁদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন,যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার ইসরায়েল সফর করবেন।
হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের উদ্ধারে মি. বাইডেন ইসরায়েলিদের সাথে আলোচনা করবেন। একই সাথে বেসামরিক হতাহত সর্বনিম্ন রেখে ইসরায়েল কীভাবে স্থল অভিযান পরিচালনা করবে এবং হামাসকে সুবিধা না দিয়ে গাজায় কিভাবে ত্রাণ পৌঁছানো যাবে, সেসব বিষয়ও গুরুত্ব পাবে তার এই সফরে।
হামাস বলেছে, জেরুসালেম এবং তেল আবিব লক্ষ্য করে তারা রকেট হামলা চালিয়েছে। এ হামলার কারণে ইসরায়েল জুড়ে সাইরেন বাজার পর আইনপ্রণেতারা বোমা হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার বোম্ব শেল্টার সেন্টার বা বোমা হামলা থেকে সুরক্ষাস্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, হামাস পরিচালিত গাজা উপত্যকায় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে।
মিশর ও গাজা সীমান্তের রাফাহ সীমান্ত পারাপার খুলে দেয়ার বিষয়ে কূটনৈতিক আলোচনা চলছে। গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ এবং বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে এই সীমান্ত ব্যবহারের কথা রয়েছে।
নেতানিয়াহুকে পুতিনের ফোন
ইসরায়েল ও গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোতে থাকা প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন থেকে একথা জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন জানায়, হামাসের হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন পুতিন। একই সাথে তিনি “বেসামরিক নারী ও শিশুরা ভুক্তভোগী হয় এমন যেকোনো হামলার বিরোধিতা এবং নিন্দা জানিয়েছেন।”
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানার মধ্যে থাকা ভ্লাদিমির পুতিন এই ইস্যুতে রাশিয়ার পদক্ষেপ সম্পর্কে মি.নেতানিয়াহুকে অবহিত করেছেন। এই সংঘাত বন্ধ করে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের জন্য জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব এনেছিল রাশিয়া। যা নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে বাতিল হয়ে যায়।
সেই সম্পর্কে বলেছেন, “এর লক্ষ্য হচ্ছে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা, আরো বেশি উত্তেজনা বাড়তে না দেয়া এবং গাজা উপত্যকায় একটি মানবিক বিপর্যয় রোধ করা।”
ইসরায়েল–ফিলিস্তিন যুদ্ধ ইরানের হুঁশিয়ারি
ছবি:ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী
ইরানের হুঁশিয়ারি ইসরায়েল গাজায় ‘যুদ্ধাপরাধ’ চালানো বন্ধ না করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরান পদক্ষেপ নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান। একই সঙ্গে গাজায় যেকোনো কর্মকাণ্ডের পরিণতি ইসরায়েলকে ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আজ (মঙ্গলবার) বলেছেন, দখলদার ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত থাকলে প্রতিরোধ সংগ্রামী তথা মুসলমানদেরকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
তিনি বলেন, কিছু প্রতিরোধ সংগঠনকে থামাতে যারা ইরানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে এ বিষয়টি তাদের জেনে রাখা উচিত এবং তাদের এ ধরণের আশা করা উচিত নয়।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন: মুসলিম জাতি এমনকি অমুসলিম বিশ্বের জনগণও কুদস দখলদার ইহুদিবাদী সরকারের চলমান যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তাদের এই নৃশংস পাশবিকতা চলতে থাকলে বিশ্বের মুসলমান এবং প্রতিরোধ শক্তিগুলোর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবে। তখন কেউ তাদের থামাতে পারবে না বলে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী মন্তব্য করেন।
তিনি আজ (মঙ্গলবার) ইরানের শিক্ষাঙ্গনের একদল শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব, জ্ঞানী-গুণী ও বুদ্ধিজীবীদের দেওয়া সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। ইমাম খোমেনী (রহ) হুসাইনিয়াতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তিনি বলেন: অনতিবিলম্বে গাজায় ফিলিস্তিনী জনগণের ওপর নির্বিচার বংশ নিধনযজ্ঞ বন্ধের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ফিলিস্তিনে চলমান পরিস্থিতিকে বিশ্ববাসীর চোখের সামনে সুস্পষ্টভাবে ‘বংশ নিধন অভিযান’ বলে উল্লেখ করেন সর্বোচ্চ নেতা। ইহুদিবাদী ইসরাইলের ওই অভিযানের পেছনে মার্কিন ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন: ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদের আলাপ হয়। আলাপ হলেই তারা একটি বিষয়ে আপত্তি তোলে: কেন ফিলিস্তিনিরা বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করলো? আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী এই বক্তব্যকে সত্যের খেলাপ বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন: ইহুদি উপশহরবাসীরা কেউ নিরস্ত্র কিংবা বেসামরিক নয়। যদি ধরেও নিই যে তারা বেসামরিক, তবু তিনি প্রশ্ন রাখেন-তাদের কতজন নিহত হয়েছে? আর এ কয়দিনে কতজন ফিলিস্তিনী শহীদ হয়েছেন? তারা কয়েক হাজার নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ এবং নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে তারা। তারা বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ফিলিস্তিনীদের জনবহুল স্থাপনা ও আবাসিক ভবনগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ইহুদিবাদী ইসরাইলের এইসব অপরাধযজ্ঞের পেছনে আমেরিকার মদদের কথা উল্লেখ করেন।
সর্বোপরি তিনি বলেন: ইসরাইল যা-ই করুক না কেন আল-আকসা তুফান অভিযানে তাদের লজ্জাজনক ব্যর্থতা কিছুতেই ঢাকতে পারবে না।
তথ্য সূত্র: বিবিসি বাংলা,পার্সটুডে