২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পৃথক কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে
রুহুল কুদ্দুস টিটো
আগামীকাল শনিবার ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পৃথক কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে কী হবে বা হতে পারে এ নিয়ে মফস্বল থেকে শহর পর্যায়ে সারা দেশের সচেতন মানুষেরা উৎকন্ঠায় আছে। পত্র পত্রিকা গুলি এ নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করছে।
দলগুলো ঘোষিত ভেন্যুতেই মহাসমাবেশ করতে অনড়। এদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ মোট ৩৭টি রাজনৈতিক দলও প্রায় একই সময়ে পৃথক মহাসমাবেশ করবে।
এ নিয়ে জনমনে বাড়ছে উত্তেজনা ও নানা উৎকণ্ঠা। সবার প্রশ্ন-কী হতে যাচ্ছে কাল। এদিকে সমাবেশ ঘিরে যে কোনো অনাহূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে প্রস্তুত থাকবে বিজিবি। পরিস্থিতি তৈরি হলেই তারা অ্যাকশনে যাবে। ডিএমপির পক্ষ থেকেই প্রায় ২৫ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে রাজধানীজুড়ে। এছাড়া পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরাও তৎপর থাকবে।
দৈনিক যুগান্তর বলছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পৃথক কর্মসূচি ঘিরে কাল মহাসমাবেশের নগরীতে পরিণত হবে রাজধানী ঢাকা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট, নয়াপল্টন ও মতিঝিলের শাপলা চত্বর-এ সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে দল তিনটি। যদিও তাদের কাউকেই এখন পর্যন্ত পুলিশ অনুমতি দেয়নি। এ নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা।
ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের শিরোনাম এটি। এতে বলা হয় পুলিশের বিকল্প ভেন্যুর প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজেদের পছন্দের ভেন্যুতেই সমাবেশ করতে অনড়। যাতে করে উত্তেজনা বাড়ছে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশের’ ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। পরে আওয়ামী লীগও একই দিনে ঢাকায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ ঘোষণা করেছে।
শনিবার ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে রাজধানীর প্রবেশমুখ আমিনবাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোতে তাদের নেতা-কর্মীদের আটক করা শুরু করেছে পুলিশ এবং এ পর্যন্ত মোট দেড়শ নেতাকর্মীকে আটকের তথ্য দিয়েছে দলটি।
বিএনপির নেতারা বলছেন ২৮ অক্টোবরও তাঁরা অহিংস থাকবেন। তবে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের দিক থেকে আঘাত এলে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে, সেটার দায় তাঁরা নেবেন না।
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের প্রধান শিরোনাম বলছে যদি বিএনপিকে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে না দেয়া হয় তাহলে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে। দলটির সূত্র জানাচ্ছে, অবস্থান কর্মসূচি, সড়ক ও জলপথ অবরোধের মতো বিষয় আছে আলোচনায়।
সমকালের শিরোনাম যে কোন পরিস্থিতিতে মাঠে থাকবে বিএনপি। নেতৃবৃন্দ বলছেন, যেখানে বাধা, সেখানেই প্রতিরোধ, রাখা হচ্ছে ঢাকাজুড়ে সমাবেশের বিকল্প প্রস্তুতি।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের আশঙ্কা, বিএনপি বিপুল লোকজন জমায়েত করে সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে বসে পড়তে পারে। এই আশঙ্কা থেকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে দুই দিন আগে থেকেই তাঁরা তৎপর হয়েছেন। বিএনপির জমায়েত যাতে বড় না হয়, সে জন্য গ্রেপ্তার, তল্লাশি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন তৎপরতা চলছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “বিএনপি আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করে যেন জনগণের জানমালের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য আওয়ামী লীগও অব্যাহত কর্মসূচি দেয়”।
এমতাবস্থায় ২৮ অক্টোবর ঘিরে সারা দেশে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা যেমন তৈরি হয়েছে; একই সঙ্গে এরপর কী হবে, কী হতে যাচ্ছে; সেটাও সর্বত্র আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, ২৮ অক্টোবর তাঁরা বসে পড়বেন না। তবে দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি এক-দুই দিন বিরতি দিয়ে নতুন কর্মসূচি দিতে পারে। সম্ভাব্য কর্মসূচির মধ্যে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা বা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি নিয়েও দলটিতে আলোচনা আছে। তবে মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘাত বা বড় হামলা হলে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবারের সমাবেশকে সামনে রেখে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ দফায় দফায় বৈঠক করেছে বুধ ও বৃহস্পতিবার।
হামলা হলে আমরাও পালটা হামলা করব: ওবায়দুল কাদের
এছাড়া ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীরা মিছিলসহ সমাবেশে যোগ দিতে আসবেন বলে জানা গেছে। ঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিটকে ব্যাপক প্রচারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যার মূল্য উদ্দেশ্য শুক্রবারই ঢাকার প্রতিটি এলাকায় মিছিল বের করা।দলীয় বৈঠকগুলোতে নেতাকর্মীদের বিএনপির সমাবেশের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে নগর ইউনিটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ শান্তি চায়। তবে শান্তি সমাবেশে আক্রমণ হলে নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না।
“আমরা কখনো বিএনপির কোন সভা সমাবেশের ওপর কোন প্রকার হামলা বা আক্রমণ করিনি। যদি তারা গায়ে পড়ে আক্রমণ করতে আসে তাহলে কর্মীরা বসে থাকবে না, পাল্টা হামলা অবশ্যই হবে,” ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার বলছিলেন ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে।
জানা গেছে, বিএনপির সমাবেশস্থলকে তিন দিক থেকে ঘিরে রাখার কৌশল নিয়ে কাজ করছে ক্ষমতাসীন দল। যাতে করে কোন সহিংসতা ঘটনা ঘটলেও বিএনপি কর্মীরা সবদিকে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
উল্লেখ্য গত কয়েক মাস ধরেই ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের দিন পাল্টা সমাবেশ করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দাবি বিএনপি যাতে কোন সহিংসতা করতে না পারে সেজন্যই তারা তাদের ‘শান্তি সমাবেশ’গুলো করছে।
বিএনপি ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করবে তারা।এজন্য শনিবারের সমাবেশ থেকে দলটির ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে আলোচনা চলছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলেছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের সংবিধানে থাকা নিয়ম অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা। আর দু’দলই চাইছে তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে বা রাখতে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে বিএনপি অবরোধ করলে তারা উল্টো বিএনপিকে অবরোধ করবেন এবং ঢাকায় দাঁড়াতেই দিবেন না ।
সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় চলতি মাসের শুরুতে ঢাকা সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে।
গত ১৬ অক্টোবর ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। ওই দিন তিনি পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেছেন, বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল যেসব সুপারিশ করেছে, তা যুক্তরাষ্ট্র সরকার জোরালোভাবে সমর্থন করে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বংলা, প্রথম আলো, যুগান্তর