জাতীয় চার নেতাকে যে ভাবে খুন করা হয় ।। ইতিহাসের পাতা থেকে
রুহুল কুদ্দুস টিটো
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারী সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা কারাগারে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে হত্যা ইতিহাসে নৃশংস হত্যকান্ড।পচাঁত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলংকজনক অধ্যায় এই দিনটি।
প্রখ্যাত সাংবাদিক অ্যান্থ’নী মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ এ লিগ্যাসি অব ব্লাড’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপরেই জেল খানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাটি এমনভাবে নেয়া হয়েছিল যাতে পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে আপনা আপনি এটি কার্যকর হয়। আর এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ঘাতক দলও গঠন করা হয়। এই ঘাতক দলের প্রতি নির্দেশ ছিল পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে কোন নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করবে। পচাঁত্তরের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুথান ঘটানোর পরেই কেন্দ্রীয় কারাগারে এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল শাফাত জামিল খোন্দকার মোশতাক আহমদ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য পাল্টা অভ্যুত্থান শুরু করেন।
আওয়ামী লিগের সিনিয়র চার নেতাসহ প্রায় ৫০ জন আওয়ামী লিগ কর্মীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখেছে সামরিক প্রশাসন।
চারজন হলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ।
১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর জেলের আমিনুর রহমান চারজনকে তাদের আলাদা কক্ষ থেকে তুলে নিয়ে একটি কক্ষে রাখেন। [আমিনুর তাদের জানান খন্দকার মোশতাক আহমদ সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে দেখা করবেন। কারাগারের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচজন সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে প্রবেশ করতে প্রত্যাখ্যান করলেও শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমদের নির্দেশে অনুমতি দেওয়া হয়।
চার নেতাকে যে ভাবে খুন করা হয়
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটি পিকআপ এসে থামে।
তখন রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে দুইটা।প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সে গাড়িতে কয়েকজন সেনা সদস্য ছিল।
ঢাকা তখন এখন অস্থিরতার নগরী। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে তখন।
সে সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিনুর রহমান।রাত দেড়টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক টেলিফোন করে জেলার মি. রহমানকে তাৎক্ষনিকভাবে আসতে বলেন।দ্রুত কারাগারের মূল ফটকে গিয়ে মি. রহমান দেখলেন, একটি পিকআপে কয়েকজন সেনা সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় আছে।মূল ফটকের সামনে সেনা সদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটি কাগজ দিলেন।সেখানে কী লেখা ছিল সেটি অবশ্য জানতে পারেননি মি. রহমান।
মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাম দিকেই ছিল জেলার আমিনুর রহমানের কক্ষ। তখন সেখানকার টেলিফোনটি বেজে উঠে।মি. রহমান যখন টেলিফোনের রিসিভারটি তুললেন, তখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন।
২০১০ সালে বিবিসি বাংলার কাছে সে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মি. রহমান বলেন, “টেলিফোনে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবে আইজি সাহেবের সাথে। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে আইজি সাহেবকে খবর দিলাম। কথা শেষে আইজি সাহেব বললেন যে প্রেসিডেন্ট সাহেব ফোনে বলছে আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা কর।”
মূল ফটকের সামনে কথাবার্তার চলতে থাকে। এক সময় রাত তিনটা বেজে যায়।আমিনুর রহমান বলেন, এক পর্যায়ে কারাগারে থাকা তৎকালীন আওয়ামী লীগের চার জন নেতাকে একত্রিত করার আদেশ আসে।কারা মহাপরিদর্শক একটি কাগজে চার ব্যক্তির নাম লিখে জেলার আমিনুর রহমানকে দিলেন।সে চারজন হলেন – সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান।
আমিনুর রহমানের বর্ণনা অনুযায়ী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের একটি কক্ষে ছিলেন।ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে অপর কক্ষ থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়।
সেখানে আসার আগে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী কাপড় পাল্টে নিলেন।মি. রহমানের বর্ণনা করেন, “তাজউদ্দীন সাহেব তখন কোরআন শরীফ পড়ছিলেন। ওনারা কেউ আমাদের জিজ্ঞেস করলেন না আমাদের কোথায় নেও (নেয়া হচ্ছে)? সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেব হাত-মুখ ধুলেন। আমি বললাম আর্মি আসছে।”
চারজনকে যখন একটি কক্ষে একত্রিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগার কারণে সেনাসদস্যরা কারা কর্মকর্তাদের নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করছিল, বলছিলেন মি. রহমান।
“মনসুর আলি সাহেব বসা ছিল সর্ব দক্ষিণে। যতদূর আমার মনে পড়ে। আমি মনসুর আলীর ‘ম’ কথাটা উচ্চারণ করতে পারি নাই, সঙ্গে সঙ্গে গুলি,” বলেন মি. রহমান। কারাগারের ভেতর এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর চার নেতার পরিবার সেদিন জানতে পারেননি।
তাজউদ্দীন আহমদের পরিবার কারাগারের খোঁজ নেবার জন্য সারাদিন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।পরের দিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর পুরনো ঢাকার এক বাসিন্দা তাজউদ্দীন আহমদের বাসায় এসে জানান যে তিনি আগের দিন ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গুলির শব্দ শুনেছেন।
প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি ২০১০ সালে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ৪ নভেম্বর বিকেল চারটার দিকে খবর আসতে শুরু করলো তাজউদ্দীন আহমদসহ চারজন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানকে প্রায় সপরিবারে হত্যার ঘটনার সাথে জেল হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র আছে বলে মনে করা হয়।
তখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে লে. কর্নেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিন আহমেদ চৌধুরী, যিনি পরবর্তীতে মেজর জেনারেল হয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন মি. চৌধুরী।
২০১০ সালে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, তখন সেনাবাহিনীতে নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের পরিণতি ছিল জেলখানার হত্যাকাণ্ড। ১৫ই আগস্টের অভ্যুত্থানের বিপরীতে পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থান হয়েছিল তেসরা নভেম্বর।সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ।
আমিন আহমেদ চৌধুরীর মতে, তেসরা নভেম্বরের অভ্যুত্থানটি ছিল অনিবার্য।কারণ শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছয়জন জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা তখন বঙ্গভবনে বসে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাককে পরিচালনা করছিলেন।
শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছয়জন জুনিয়র সামরিক কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনীর চেইন অব কমাণ্ডের আওতায় আনার জন্য তেসরা নভেম্বর খালেদ মোশারফের নেতৃত্ব অভ্যুত্থান হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন জেনারেল চৌধুরী।
তাছাড়া শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডকেও তাঁরা মেনে নিতে পারছিলেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।কিন্তু খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সে অভ্যুত্থান সেনাবাহিনীর ভেতরে আবারো চেইন অব কমাণ্ড ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বলে মনে করেন জেনারেল চৌধুরী।
খালেদ মোশারফের অনুগত সৈন্যরা বন্দি করে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে।ঢাকা সেনানিবাসে যখন এ অবস্থা চলছিল সে সময় পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে জেলখানায় আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র নেতাকে হত্যা করা হয়।
পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকেই হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের আশংকায় ছিল।সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
একদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ।তখন ঢাকা সেনানিবাসে মেজর পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি এসব ঘটনাপ্রবাহ বেশ কাছ থেকে দেখেছেন। তার সে অভিজ্ঞতা নিয়ে মি. হোসেন একটি বই লিখেছেন ‘বাংলাদেশ রক্তাক্ত অধ্যায়: ১৯৭৫-৮১’ শিরোনামে।শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা তখন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদকে পরিচালনা করছিলেন।
ব্রিগেডিয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গভবনের থাকা সেনা কর্মকর্তাদের সাথে একটা সংঘাত চলছিল সেনানিবাসের উর্ধ্বতন কিছু সেনা কর্মকর্তাদের সাথে।
“খন্দকার মোশতাক যে বেশিদিন ওখানে টিকবেন না, এটাও ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছিল। তখন আবার সিনিয়র অফিসারদের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল,” বলছিলেন ব্রিগেডিয়ার হোসেন।
শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ধারনা করেছিলেন যে কোন পাল্টা অভ্যুত্থান হলে সেটি আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবে। সে ধরনের পরিস্থিতি হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে মুজিব হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা কিছুটা ভেবেও রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, “ঐ ধরনের ক্যু হলে তখনকার আওয়ামী লীগে যাতে কোন ধরনের লিডারশিপ না থাকে সেটাই তারা বোধ হয় নিশ্চিত করেছিল।”
হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিল যদি সে চারজন রাজনীতিবিদকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে পাল্টা অভ্যুত্থান হলেও সেটি রাজনৈতিক সমর্থন পাবে না।
জেল হত্যা মামলা
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যায় যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তা প্রমাণিত হয়েছে বলে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে। জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় (জেল হত্যা) পলাতক দুই আসামী এলডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধা ও দফাদার মারফত আলী শাহকে নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া ২৩৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়।
১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের আগ্রহের অভাবে তদন্ত এগোয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তদন্ত শুরু হয় ১৯৭৫ সালের পর প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও পুলিশের তদন্তের ফাইল উধাও। ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা হয়েছিল কিন্তু তাদের তদন্ত সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয় এবং তাদের ফাইলগুলি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ ১৯৭৫ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের সুরক্ষা প্রদান করেছিল। [৭] মামলার তদন্তকারী হিসেবে দায়িত্ব পান অপরাধ তদন্ত বিভাগ এর আবদুল কাহার আকন্দ । ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর জেল হত্যা মামলায় ২৩ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির হতে ব্যর্থ হলে মেট্রোপলিটন দায়রা জজ মতিউর রহমান ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখে উপ-পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সংসদ সদস্য কে এম ওবায়দুর রহমান এই বিচারকে হয়রানি বলে বর্ণনা করেছেন। দুই আসামি তাহেরউদ্দিন ঠাকুর ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জামিনে ছিলেন। মহানগর দায়রা আদালত মামলায় ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
মারফত আলী শাহ মোসলেমউদ্দিন ও আবদুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আবদুল মাজেদ, আহমেদ শরফুল হোসেন, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, খন্দকার আবদুর রশিদ, মোহাম্মদ বজলুল হুদা, মোহাম্মদ কিসমত হাসেম, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, র্যাব চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরী আসামি করা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে।
মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান, কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে সব অভিযোগে নির্দোষ প্রমাণ করা হয়। ২৯ আগস্ট ২০০৮ বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খান ২০০৪ সালের রায়ের আপিলের উপর একটি রায় দেন।
আদালত শুধু মোসলেমউদ্দিনের সাজা বহাল রেখেছেন। আদালত একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, আবুল হাসেম মৃধা, বজলুল হুদা, মারফত আলী শাহ, সৈয়দ ফারুক রহমান এবং সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে সব অভিযোগে নির্দোষ বলে প্রমাণ করেছেন।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ২০১৩ সালে প্রধান বিচারপতি মোঃ মুজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলীর সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় দেন। জেল হত্যা মামলার আপিল। বেঞ্চ মারফত আলী শাহ ও আবুল হাসেম মৃধার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে যা বাংলাদেশ হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রত্যাহার করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ সরকার জেল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মোহাম্মদ খায়রুজ্জামানকে ২০২২ সালে মালয়েশিয়া থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে যেখানে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। [১০] রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায়। আব্দুল মাজেদকে ২০২০ সালে আটক করা হয়।
তথ্যসুত্র: বিবিসি বাংলা , উইকিপিডিয়া