রাসুল (সা.) ইরশাদ করেনঃ যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন হচ্ছে সর্বোত্তম
রুহুল কুদ্দুস টিটো
আরবি শব্দ ‘জুমুআ’-এর অর্থ হলো একত্রিত হওয়া। আর তাহলো ইয়াওমুল জুমআ বা শুক্রবার। আল্লাহর দুনিয়ায় সপ্তাহের সেরা দিন ইয়াওমুল জুমআ। তিনি জগৎ সৃষ্টির পরিপূর্ণতা দান করেছেন এ দিনে। জুমআর দিনকে মুমিনের ঈদ ও গরিবের হজের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।হাদিসে শুক্রবার অর্থাৎ জুম্মার দিনের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
এ দিনে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর নির্দেশ পালনে ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্রিত হয় বলে দিনটিকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়। কুরআনেও সে কথাটি ওঠে এসেছে-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ‘হে মুমিনগণ! জুমআর দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দ্রুত মসজিদের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝতে পার।’ (সুরা জুমআ : আয়ত ৯)
শুক্রবারের দিন জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। সপ্তাহের এদিনে জুমার খতিব উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও সমাধানমূলক উপদেশ দেন তার খুতবায়।
প্রথম হিজরিতে জুমার নামাজ ফরজ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।
রাসুল (সা.) হাদিসে বলেছেনঃমুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।(ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেনঃ যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন হচ্ছে সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।(মুসলিম শরিফ , হাদিস নম্বর ৮৫৪)
হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি—এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরজ)। (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২ , আস্-সুনানুল কাবীর : ৫৫৮৭)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না। (তাফসিরে মাজহারি ,খণ্ড : ৯ , পৃষ্ঠা : ২৮৩) মালেক ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইবনে সাব্বাক থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোনো এক জুমার দিনে বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন।
সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে জুমার দিনের ফজিলত অনেক বেশি
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : জুমার দিনে ফেরেশতাগণ বিশেষ রেজিস্টার নিয়ে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে যান। তারা মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম পর্যায়ক্রমে লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। অতঃপর যখন ইমাম সাহেব এসে যান, তখন তারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন।
হজরত সালমান (রা.) হতে একটি হাদিস বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তার পর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (মুসনাদে আবু দাউদ : ৪৭৯)
এদিন যে সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করে, সে একটি উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা দান করার সওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সওয়াব পায়। (মুসনাদে শাফী : ৬২, জামে লি ইবনে ওহাব : ২২৯, মুসনাদে হুমাইদি : ৯৬৩ )
জুমাবারের ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সে মহামূল্যবান সময় কোনটা? এ সম্পর্কে ৪৫টা মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দোয়া কবুলের সময়। হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০ , তিরমিজি : ৪৮৯)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (স.) যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ থেকে দূরে থাকে তাদের সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার ইচ্ছা হয় যে আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামাজ পড়াক। অতঃপর যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই। (মুসলিম : ৬৫২, মুসনাদে আহমাদঃ ৩৮১৬, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৫৩৯, আসু-সুনানুল কুবরা : ৪৯৩৫)।
যে ব্যক্তি এদিনে অনর্থক কর্ম করল এবং লোকেদের কাতার চিরে সামনে অতিক্রম করল সে ব্যক্তির জুমুআহ যোহরে পরিণত হয়ে যাবে।” (সুনানু আবূ দাঊদ, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ তারগীব ৭২০নং) (মুসনাদ আহমাদ, তিরমিযী, সহীহুল জামে ৫৭৭।
রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেনঃতোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১০৪৭)।
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-“কেয়ামতের দিন আমরা সর্বশেষ উম্মত কিন্তু অগ্রগামী হবো। যদিও আমাদের আগে সব উম্মতকে (আসমানি) কিতাব দেওয়া হয়েছে, আর আমাদেরকে সব উম্মতের শেষে কিতাব দেওয়া হয়েছে।