সারা দেশের প্রায় প্রতিটি আসনেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।। আওয়ামী লীগ গণভবনে হাট বসিয়েছে -রুহুল কবির রিজভী
রুহুল কুদ্দুস টিটো
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ভোটে না আসার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ ধরে রাখতে নির্বাচনে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ।ইতোমধ্যে দলটি প্রতিটি আসনে ডামি প্রার্থী রাখার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। দলের হাইকমান্ডের এমন অবস্থানের কারণে এবার ভোটের মাঠ ছাড়তে নারাজ মনোনয়ন বঞ্চিতরা।
ইতোমধ্যে দলের মনোনয়নবঞ্চিত বেশ কয়েকজন বর্তমান এমপি স্বতন্ত্র লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা এমপিদের বিরুদ্ধে লড়ার কথা জানিয়েছেন অনেক প্রার্থী। সব মিলিয়ে সারা দেশের প্রায় প্রতিটি আসনেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইসি থেকে মনোনয়নপত্রও কিনতে শুরু করেছেন অনেকেই।ফলে প্রধান প্রতিপক্ষ মাঠে না থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এবার নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ঘরের প্রার্থীরাই। এ নিয়ে টেনশনে আছেন দলের অনেক প্রার্থী।
আওয়ামী লীগ বিভিন্ন আসনে তাদের নেতাদের মধ্যে থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে কেউ এই ধরনের মনোনয়ন দাখিল করতে চাইলে তাকে অবশ্যই দল থেকে ছাড়পত্র পেতে হবে।
মূলত নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে এবং ভোটকেন্দ্রে আরও বেশি ভোট টানার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ এমন কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে। এক্ষেত্রে তৃণমূল নেতা এবং বঞ্চিত নেতারা বেশ উচ্ছসিত।
রংপুর জেলার ৬টি আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ৩৬ জন নেতা। এ তালিকায় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয়-জেলাও মহানগরের নেতা রয়েছেন।
রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও আংশিক সিটি করপোরশনে) আসনে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য কামাল মোহাম্মদ নাসের রুবেল, আওয়ামী লীগের গঙ্গাচড়া উপজেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাইয়েদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম রেজভী, যুক্তরাজ্যের লাইম হাউস আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইউনিভার্সিটি ওয়েস্ট অফ ইংল্যান্ড শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুম আলী, গঙ্গাচড়া উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক সিএম সাদিক।
রংপুর-২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কালাম আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ সরকার বিটু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুমনা আকতার লিলি, তারাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিউর রহমান রাফি।
রংপুর-৩ (সদর ও সিটি কর্পোরেশন) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু, মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম রব্বানী বিপ্লব, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নবীউল্লাহ পান্না, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক রোজী রহমান।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমানের ছেলে মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেক রহমান, মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার এবং জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন মণ্ডল মওলা।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। কারণ এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শাহাদত হোসেন বকুল, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থী দুই সংসদ সদস্যই এবার মনোনয়ন পাননি। রংপুর-৩ (সদর) আসনে রওশন এরশাদের ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ ওরফে সাদ এরশাদকে মনোনয়ন না দিয়ে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের নিজেই লড়বেন। অন্যদিকে দলের বহিষ্কৃত নেতা ও সংসদ সদস্য মসিউর রহমান ওরফে রাঙ্গা মনোনয়ন পাননি। তাঁর আসনে জি এম কাদেরের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার মনোনয়ন পেয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হয়েছে। তবে, এখনো মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেনি জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এমনকি মনোনয়ন ফরম নেননি তার ছেলে সাদ এরশাদও।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম:১২–দলীয় জোট
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে ঢাকার দুটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। সোমবার প্রতিনিধির মাধ্যমে ঢাকা মহানগরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। ২২ নভেম্বর যুক্তফ্রন্ট নামে নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। এই জোট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে ওই দিন সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়। তার পাঁচ দিনের মাথায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন তিনি।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মনোনয়নপত্র তুললেন
বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া–১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এসএকে একরামুজ্জামান সুখন। দলে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে তাঁর এমন সিদ্ধান্ত দলের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় নেতারা। সোমবার দুপুরে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁর পক্ষে এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম
মঙ্গলবার বা বুধবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন
রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন নীরব থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় এই ঘোষণা দেন তিনি। গত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও এবার দলীয় ফরম সংগ্রহ করেননি।
কোনো দলের ব্যানারে নির্বাচন না করলেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। আর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার বা বুধবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে জানান। মোহাম্মদ মনজুর আলম ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফছারুল আমীনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন তিনি। তবে ওই বছর আর নির্বাচন করেননি।
তবে এবার আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়া ঠেকাতে বিকল্প (ডামি) প্রার্থী রাখবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলে বড় পদে নেই এমন যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে ইঙ্গিত পেয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকেই। গত রবিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় দলের সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য থেকেও এমন বার্তা পেয়েছেন জানা গেছে।
প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় দলীয় প্রধান স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপ প্রয়োগ না করতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটে কারও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে। ফলে কোনো আসনে প্রার্থী শূন্য হয়ে পড়তে পারে বা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না। এ ক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তিনি তা চান না।
রাজশাহীতে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহীর ছয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তোলা ও জমা দেওয়ার কাজ চলছে জোরেসোরেই।
আর তাই নির্বাচনকে সমানে রেখে রাজশাহীতে তেমন রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন বেশিরভাগ নেতা।এখন পর্যন্ত আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন-বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ আওয়ামী লীগের এমপি পদ প্রত্যাশী অনেক নেতা।
সোমবার (২০ নভেম্বর) দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম৷ এ আসনে তার আগে মনোনয়নপত্র তুলেছেন, বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাবলু ও চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক রায়হান।
এদিকে, আসন অনুযায়ী রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আবারও মনোনয়ন তুলেছেন-বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী। একই আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র তুলেছেন, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী এবং অধ্যক্ষ তাজবুল ইসলাম। এর আগে একই আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আয়েশা আকতার জাহান ডালিয়া। তিনি রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের জন্য এবার মনোনয়ন তুলেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সহ-সভাপতি ডা. তবিবুর রহমান শেখ ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। এই আসনটি গত তিন মেয়াদেই দেওয়া হয়েছিল ওয়ার্কার্স পার্টিকে।
রাজশাহী-৩ আসনের জন্য মনোনয়ন তুলেছেন- বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দীন। একই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এছাড়া রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. তবিবুর রহমান শেখ এই আসন থেকেও দলীয় মনোনয়নপত্র তুলে জমা দিয়েছেন।
আর রাজশাহী-৪ (বাগমারা) থেকে মনোনয়ন কিনেছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। এছাড়া একই আসন থেকে নিয়ে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন তুলেছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু, তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন দলীয় মনোনয়ন তুলেছেন।
রাজশাহী-৫ আসন (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) থেকে মনোনয়ন কিনেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. মুনসুর রহমান ও রাজশাহী জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য প্রয়াত তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুকের মেয়ে তানজিমা শারমিন মুনিও এই আসনের জন্য মনোনয়ন তুলেছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন ৫৪ জন প্রার্থী
খুলনা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন ৫৪ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের তরুণ ও নবীন নেতাকর্মীই বেশি।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাত পর্যন্ত এসব প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় দপ্তরে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, খুলনা-১ ( দাকোপ -বটিয়াঘাটা) থেকে মনোনয় প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডল, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সংরক্ষিত নারী এমপি অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান, আওয়ামী লীগ নেতা বিনয় কৃষ্ণ রায়, নান্টু রায়, শ্রীমান্ত অধিকারী রাহুল, সনত কুমার বিশ্বাস, সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায় ও চালনা পৌর মেয়র অচিন্ত্য কুমার মন্ডল।
সিলেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সেই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
সিলেট-১ সদর আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সেই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের তিনবারের এই সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ) আসন থেকেও মনোনয়নপত্র তুলেছেন।
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ৯টিতে এসেছে পরিবর্তন। বাকি ১০ আসনেই পুরাতনদের ওপরেই ভরসা রেখেছে দলটি।
পুনরায় যারা নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন তারা হলেন- সিলেট-১ আসনে ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট-৩ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট-৪ আসনে ইমরান আহমদ, সিলেট-৬ আসনে নুরুল ইসলাম নাহিদ, মৌলভীবাজার-১ আসনে শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-৪ আসনে উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মুহিবুর রহমান মানিক, হবিগঞ্জ-৩ আসনে আবু জাহির ও হবিগঞ্জ-৪ আসনে মাহবুব আলী।
অন্যদিকে সিলেট বিভাগের ৯ আসনে প্রার্থীতে রদবদল হয়েছে। তাদের মধ্যে সিলেট-৫ আসনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার বার্ধক্যজনিত কারণে এবার দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। সিলেট-২ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। ২০০৮ সালে এ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে গত দুটি নির্বাচনে এ আসনে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের বিপরীতে প্রার্থী হতে ৫২ জন নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের জন্য ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার ৫৮টি আসনের বিপরীতে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৫৭৮টি।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের বিপরীতে প্রার্থী হতে ৫২ জন নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তাদের মধ্যে ১৫ জন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। ১৬ আসনের মধ্যে এবার ৯ আসনেই দলটির পুরনো নেতারা রয়ে গেছেন আর পাঁচটি আসনে দেখা গেছে নতুন মুখ। ২ আসনে পুরনো সংসদ সদস্যরা মনোনয়ন পাননি। চট্টগ্রামে পাঁচটি আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ৬ আওয়ামী লীগ নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন সাবেক সংসদ সদস্যও। ইতোমধ্যে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের মিরসরাই, বাঁশখালী, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, বন্দর-পতেঙ্গা ও পটিয়া আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে তারা প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের আরও দুটি আসনে বর্তমানে জাতীয় পার্টি (হাটহাজারী) ও তরিকত ফেডারেশনের (ফটিকছড়ি) সংসদ সদস্য রয়েছেন। এ দুটি আসনেও শেষ পর্যন্ত কারা আওয়ামী লীগ বা এ জোটের প্রার্থী হবেন, তা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হতে পারে।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের বিপরীতে প্রার্থী হতে ৫২ জন নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তাদের মধ্যে ১৫ জন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। ১৬ আসনের মধ্যে এবার ৯ আসনেই দলটির পুরনো নেতারা রয়ে গেছেন আর পাঁচটি আসনে দেখা গেছে নতুন মুখ। ২ আসনে পুরনো সংসদ সদস্যরা মনোনয়ন পাননি।
আওয়ামী লীগ গণভবনে হাট বসিয়েছে -বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
সংসদ সদস্য (এমপি) পদ বণ্টনের জন্য আওয়ামী লীগ গণভবনে হাট বসিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো কিছু সুবিধাবাদী রাজনীতিককে নির্বাচনে দাঁড় করাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
রুহুল কবির রিজভী আজ সোমবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি আগামী বুধবার অবরোধ ও বৃহস্পতিবার হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়া ঠেকাতে বিকল্প (ডামি) প্রার্থী রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। রিজভী বলেন, ‘এর মানে নৌকা বনাম আওয়ামী লীগ, নিজেরা নিজেরাই। ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে যেন এ রকম—আমি, আমরা আর মামুরা। নির্বাচন হবে আমি আর মামুদের মধ্যে। পাতানো ম্যাচ খেলব দুজনে—তুমি আর আমি। সাইড লাইনে থাকবে টাকার বিনিময়ে খরিদ করা ভুঁইফোড় পার্টির নেতারা। দেশি-বিদেশিদের আইওয়াশ করতে নিজেরা নিজেরা লোকদেখানো প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করা হচ্ছে।’
রিজভী অভিযোগ করেন, নির্বাচনী নাটকের নামে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে আওয়ামী লীগের তৈরি করা সংসদ সদস্যের তালিকায় বৈধতার সিলমোহর দেওয়ার অপতৎপরতায় লিপ্ত। আতঙ্কিত হয়ে তিনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) বলেছেন, বিদেশি শক্তির থাবা পড়েছে বাংলাদেশে। তাদের থাবা থেকে দেশের অর্থনীতি ও পোশাকশিল্পকে বাঁচাতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। গ্রহণযোগ্য ভোট করতে না পারলে বিপদ!
রিজভী বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরার জন্য বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের না পেলে বাবা, ভাই, আত্মীয়স্বজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, গতকাল বিকেল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৫ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে ১৩টি মামলায় ১ হাজার ৪৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী দলের পক্ষ থেকে আগামী বুধবার অবরোধ এবং বৃহস্পতিবার হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বুধবার ভোর ছয়টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত অবরোধ এবং বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালন করা হবে।
তথ্যসূত্র:প্রথমআলো,ইত্তেফাক, ঢাকাপোষ্ট, বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর, আজকের পত্রিকা