হরতাল, অবরোধের কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তাভাবনা চলছে বিএনপিতে ।। আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে বাধা দিলে গ্রেপ্তার করা হলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি
রুহুল কুদ্দুস টিটো
১০ ডিসেম্বর আগামীকাল রোববার ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা সদরে গুম-খুন হওয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করবে বিএনপি।
সব বাধাবিপত্তি প্রতিহত করে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে এই মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে নির্যাতনের শিকার, গুম- খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধনে উপস্থিত থাকবেন। তিনি আরও বলেন, শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরা নন, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং প্রতিবাদমুখর লোকজনও সরকারের নির্যাতন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন।
বিএনপিতে হরতাল, অবরোধের কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তাভাবনা চলছে দলের মধ্যে। বিএনপির আলোচনায় রয়েছে ঘেরাও, অসহযোগের মতো কর্মসূচি ঘোষণার।তবে কী কর্মসূচির ঘোষণা আসবে তা নির্ভর করছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচির দিন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণের ওপর।
আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকা এবং সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। মানবাধিকার দিবসে বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। মানববন্ধন ও আলোচনা সভা করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীও।
রাজধানী ঢাকায় বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপি।
দলটির নেতারা বলেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন। কর্মসূচিতে ‘গুম, খুন, ক্রসফায়ার ও কারা নির্যাতনের শিকার’ দলের নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেবেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।
শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে বাধা দিলে কিংবা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।সরকার পতনের আন্দোলন আরও কঠোর করতে ‘দুর্গের দেয়াল’ হিসেবে পরিচিত ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে নজর দিয়েছে বিএনপি। পুরো দেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিভাগের ১০ সাংগঠনিক ইউনিট ছাড়াও কুমিল্লাকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চলমান আন্দোলন সফল করতে অন্য জেলাগুলোকেও টার্গেট করা হয়েছে। এসব ইউনিটে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে জোটের বাইরে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বৃহৎ ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম গড়ার সিদ্ধান্তও রয়েছে। তাতে জামায়াতে ইসলামীকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে শুরু হওয়া এক দফার আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে কাজ করছেন দলের হাইকমান্ড সংবদ সূত্রে জানাগেছে।
ওই উদ্যোগের ফলে এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে আগের তুলনায় নেতাকর্মীর উপস্থিতি বাড়ছে। তবে তা সন্তোষজনক নয়। তবে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে খুব শিগগিরই আন্দোলনে ভালো ফল আসবে।
এ ছাড়া বিএনপির নেতারা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১০ ডিসেম্বর এবারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে ৪৩ দিন পর আবার দলের নেতা-কর্মীদের মাঠের জমায়েতে ফিরিয়ে আনাই বিএনপির লক্ষ্য। এর মাধ্যমে সরকার ও পুলিশের আচরণ কী হয়, সেটিও দেখা। এর ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা।
তথ্যসূত্র: প্রথমআলো, দেশরুপান্তর, সমকাল