বিএনপি কার বিরুদ্ধে কাকে নিয়ে অসহযোগ করবে এ নিয়ে নানা কথা ইতহিাস কি বলে
বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তাতে জনগণ কতটা উদ্বুদ্ধ হবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপি অবশ্য বলছে, তাদের এই আন্দোলনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আন্দোলনে তারা ক্রমান্বয়ে জনগণের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছেন।
তবে আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপির এই আন্দোলনকে পাত্তা দিচ্ছেন না তারা। একই সাথে জনগণও বিএনপিকে ত্যাগ করেছে বলে আওয়ামী লীগের দাবি ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে এই আন্দোলন যাতে নামসর্বস্ব হয়ে না পড়ে। বাকিটা দেখা যাক।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ জনজীবন ও অফিস-আদালত এবং মানুষের কর্মজীবন স্বাভাবিক রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, “এখানে কোথায় তারা (বিএনপি) জনগণের সমর্থন পেলো? কোন জনগণের সমর্থন তারা পেয়েছে?”
অসহযোগ আন্দোলন মহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পরিচালিত ভারতব্যাপী
অসহযোগ আন্দোলন মহাত্মা গান্ধী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পরিচালিত ভারতব্যাপী অহিংস গণ-আইন অমান্য আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম। ১৯২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে “গান্ধী যুগ”-এর সূত্রপাত ঘটায়।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রাওলাট আইন পাস হলে, ভারতের ভাইসরয় ও ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ১৯১৯ সালের ৬ এপ্রিল সেই আইন বলবৎ করে। এই আইনবলে ভারতবাসীর উপর দমনমূলক নানা বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার লঙ্ঘিত হয়, ন্যূনতম প্রমাণ দাখিল ব্যতিরেকেই সেনা ও পুলিশকে সাধারণ ভারতীয়দের গ্রেফতার, কয়েদ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়।
অধিকন্তু, ভারতীয় জনসাধারণের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের একতরফা ভারতীয় সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত অনেক ভারতবাসীকেই ক্ষুব্ধ করেছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অ্যানি বেসান্ত, গোপালকৃষ্ণ গোখলে ও বাল গঙ্গাধর তিলকের মতো উদার মধ্যপন্থী নেতাদের আহ্বানে হোমরুল আন্দোলন শুধুমাত্র আবেদন-নিবেদন ও রাজনৈতিক সভাসমিতির মাধ্যমে চলছিল; তার এমন কোনও বিধ্বংসী চরিত্র ছিল না যা সরকারি কাজে বিপুল বাধার সৃষ্টি করতে পারে।
অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১ কেন শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে
অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ কর্তৃক পরিচালিত একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন। ১ মার্চে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণার পর জনগণের স্বতস্ফুর্ত আন্দোলন শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ২ মার্চে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে ২৫ মার্চ পর্যন্ত চলমান থাকে। মোট ২৫ দিন স্থায়ী হয় এই আন্দোলন।আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।এই সময়কালে ক্রমশ পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক প্রশাসনের উপর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। আন্দোলনের একপর্যায়ে সেনানিবাসের বাইরে পুরো পূর্ব পাকিস্তান কার্যত শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে চলছিল।
১৯৪০ সালে পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলনে আবুল কাশেম ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব তুলে ধরেন। লাহোর প্রস্তাবের তৃতীয় অনুচ্ছেদে ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে অঞ্চল হিসেবে স্থানসমূহের সীমানা সামঞ্জস্য করে নির্দিষ্টভাবে পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে একাধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র সৃষ্টি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। মুসলিম লীগ অনুচ্ছেদটি বাস্তবায়ন করেনি বরং ১৯৪৬ সালের দিল্লি প্রস্তাবে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করার মাধ্যমে । সকল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে একটি অদ্বিতীয় মুসলিম রাষ্ট্র তৈরি করে। ভারত বিভাজনের সময় বঙ্গ প্রদেশকে ধর্মের ভিত্তিতে দুই ভাগে ভাগ করে হিন্দু অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলকে ভারতে এবং মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গ অঞ্চলকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৫৫ সালে পূর্ববঙ্গ প্রদেশের নাম পরিবর্তিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান হয়।
পূর্ব পাকিস্তান এক ইউনিট ব্যবস্থার অধীনে পাকিস্তানের একটি অঞ্চল হিসেবে শাসিত হলেও রাজনৈতিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক দিক থেকে অঞ্চলটি বৈষম্যের শিকার হয়েছিল।পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পরে ছয় দফা আন্দোলনের অন্যতম দফা হিসেবে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রে ফেডারেশন ব্যবস্থা কার্যকরের দাবি করেছিল যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে প্রশাসনিক অঞ্চলগুলো স্বাধীন থাকতে পারবে।
১৯৬৬ সাল থেকে চার বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে দেশটির জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ সংরক্ষিত নারী আসনসহ ৩১৩ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।আওয়ামী লীগের এই বিজয়ে ফলে ৬ দফা বাস্তবায়ন অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে পিপিপি সহ পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা ভীত হয়ে পড়ে। শাসকগোষ্ঠী মনে করেছিল যে ছয় দফা বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানের ঐক্য বিনষ্ট হবে।
১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন।তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দুই দফা আলোচনা করেন। এই আলোচনা সম্পর্কে শেখ মুজিবুর রহমান জানান:
“ | আলোচনা সন্তোষজনক হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট খুব শিগগিরই ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানে সম্মত হয়েছেন। | ” |

একইভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান সাংবাদিকদের বলেন,
“ | দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব তার সঙ্গে আলোচনা সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন, তা পুরোপুরি সঠিক।[১৫] | ” |
পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে তিনি লারকানায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর বাসভবনে গিয়ে জেনারেলদের সাথে গোপন বৈঠক করেন।[১৬]
তারপর জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখে দলের অন্যান্য নেতাদের সাথে ঢাকায় এসে ২৭, ২৮ ও ২৯ তারিখে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য শীর্ষনেতাদের সাথে জুলফিকার আলী ভুট্টো কয়েক দফা বৈঠক করেন।বৈঠকে ভুট্টো জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার প্রস্তাব দিলে শেখ মুজিবুর রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেন। বৈঠক শেষে শেখ মুজিবুর রহমান ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় পরিষদের বৈঠক আয়োজন করে ছয় দফার ওপর ভিত্তি করে শাসনতন্ত্র রচনা করার ইচ্ছা পোষণ করলেও জুলফিকার আলী ভুট্টো আরও আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
তিনি মার্চ মাসের শেষ দিকে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আয়োজন করার প্রস্তাব করেন। তবে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান মার্চের ৩ তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারিতে জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা করেন, আওয়ামী লীগ তাদের ৬ দফার ব্যাপারে আপস না করলে কিংবা এটি পরিবর্তন না করলে তিনি এবং তার দল কোনওভাবেই অধিবেশনে যোগদান করবে না।

৪ দিন পর ১৯ ফ্রেব্রুয়ারিতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে ইয়াহিয়া খানের আলোচনা হয়। বৈঠকের পর ভুট্টো পুনরায় একই দাবি করেন। আওয়ামী লীগ তার দেওয়া শর্ত না মানলে তিনি অধিবেশনে যোগদান না করার ব্যাপারে অনড় থাকেন।২৮ ফেব্রুয়ারিতে তিনি তার দলকে ছাড়া অধিবেশন শুরু করলে আন্দোলন শুরু করবেন বলে সতর্ক করেন। এছাড়াও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অধিবেশনে যোগ দিতে ঢাকায় যোগ দিতে চাওয়া গণপরিষদের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন।
শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারেন, পশ্চিম পাকিস্তানিরা নির্বাচনের ফলাফল বানচালের পরিকল্পনা করছে। তাই তিনি দিন দিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন। ভুট্টোর সাথে আলোচনা করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করেন। ফলে বাংলার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে; শুরু হয় আন্দোলন।
‘অসহযোগ আন্দোলনের’ ডাক বিএনপির
দলীয় নেতাকর্মীদের মামলায় হাজিরা না দেওয়া, সাধারণ মানুষকে সরকারি বিল পরিশোধ না করা এবং সরকারি কর্মীদেরকে ভোটে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী।
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে অবরোধ ও হরতালের মত কর্মসূচি দিয়ে আসা বিএনপি এবার সরকারের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে’র ডাক দিয়েছে।
দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্ধৃত করে দলের মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন।
এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। সরকারকে কর, খাজনা এবং বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বিল পরিশোধ বন্ধ করে দেওয়া এবং ব্যাংকে আমানত না রাখার আহ্বানও জানানো হয়েছে। মামলার আসামি দলীয় নেতাকর্মীদেরকে আদালতে হাজিরা না দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
বুধবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এসব আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আজ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার অবৈধ সরকারকে সব ধরনের অসহযোগিতা শুরু করার বিকল্প নেই। এই মুহূর্ত থেকে এই অবৈধ সরকারকে সহযোগিতা না করার জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিএনপি কী কী চাইছে তা তুলে ধরে রিজভী বলেন, “আপনারা ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচন’ বর্জন করুন। ‘ডামি নির্বাচনের’ নামে ৭ জানুয়ারির ‘বানর খেলার আসরে’ অংশ নেবেন না। আপনারা কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। এটি আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার।
“নির্বাচন কমিশন ৭ জানুয়ারি কাকে এমপি ঘোষণা করবে সেই তালিকা তৈরি হয়ে গেছে। সুতরাং ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচনের’ ভোট গ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনে বিরত থাকুন।
“বর্তমান ‘অবৈধ সরকারকে’ সব ধরনের ট্যাক্স-খাজনা-ইউনিটিলিটি বিলসহ অন্যান্য প্রদেয় স্থগিত রাখুন। ব্যাংকগুলো এই অবৈধ সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং ব্যাংককে টাকা জমা রাখা নিরাপদ কি না সেটি ভাবুন।
“মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আজ হতে আদালতে হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের প্রতি সুবিচার করার আদালতের স্বাধীনতা ফ্যাসিবাদী এই সরকার ‘কেড়ে নিয়েছে’।”
সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচন এবং তফসিল বাতিলের দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো চার দফায় পাঁচ দিন হরতাল এবং এগারো দফায় ২২ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।
আগামী ২১ থেকে ২৩ ডিসেম্বর লিফলেট বিতরণ শেষে ২৪ ডিসেম্বর রোববার আবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক এসেছে।
দফায় অবরোধ-হরতালে সারা দেশে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নানা ধরনের নাশকতায় প্রাণহানিও ঘটেছে। গত কয়েক দিন ধরে রেলে নাশকতা আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে। ট্রেন লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে, আগুন দেওয়া হয়েছে কোচে।
রিজভী বলেন, “আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা পেতে হলে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গণতন্ত্রকামী প্রতি মানুষকে ক্ষমতাসীনদের ‘অসহযোগিতা’ করা ছাড়া বিকল্প নেই।
‘‘এই আন্দোলনে বিজয় লাভ করেই এই ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রেখে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ। ঐক্যভাবে এই সরকারকে অসহযোগিতা অব্যাহত রাখলে গ্রেপ্তার-নির্যাতন-হয়রানি করার সাহস পাবে না।”
সরকারকে অসহযোহিতা করতে গিয়ে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষদের মধ্যে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘‘পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং লুণ্ঠিত ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষে যারাই হতাহত হয়েছে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক সরকার তাদের অবদান দলীয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে দেবে।”
বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ অংশ হিসেবে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মামলায় হাজিরা না দেয়ার আহ্বান জানানোর পর প্রথম দিনে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে দলটির বেশ কিছু কর্মীকে আদালতে হাজিরা দিতে দেখা গেছে। তবে কারাগারে থাকা দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা আদালতে হাজিরা দিতে আসেনি।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে নয়টায় ঢাকার সিএমএম আদালতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো এ দিন ও বিভিন্ন মামলায় যাদের হাজিরা রয়েছে সেসব আসামিদের কারাগার থেকে আদালতের হাজতখানায় এনে রাখা হয়। পরে যেসব কোর্টে হাজিরা রয়েছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের হাজির করেন।
ঢাকার সিএমএম আদালতের বেশ কয়েকটি এজলাস ঘুরে সকালে দেখা গেছে, ২০১২ সাল থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা বেশ কিছু নাশকতার মামলার শুনানি রয়েছে। কারাগারে থাকা এসব মামলার আসামিদের পুলিশ হাজির করেছে।
আর দলটির যারা জামিনে রয়েছেন তারা শর্ত অনুযায়ী শুনানির নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজির হয়েছেন।
জনগণ যাদের সঙ্গে নেই তাদের অসহযোগ আন্দোলন করার কোনো মানেই হয় না
জনগণ যাদের সঙ্গে নেই তাদের অসহযোগ আন্দোলন করার কোনো মানেই হয় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শুক্রবার দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কেঁতুয়া গ্রামের পাটওয়ারী বাড়িতে উঠান বৈঠক শেষে বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৮শে অক্টোবরে মহাসমাবেশ পণ্ডের পর ২৯শে অক্টোবর হরতাল পালন করে বিএনপি। এরপর মাঝে ১/২ দিন বিরতি দিয়ে দলটি ধারাবাহিকভাবে হরতাল অবরোধের কর্মসূচি পালন করে এসেছে দলটি। যদিও বাস্তবে সেসব কর্মসূচির খুব বেশি প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
যদিও দলের নেতারা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর দিন থেকেই আরও শক্ত কর্মসূচি যাবেন তারা এবং এর মূল উদ্দেশ্য হবে সাতই জানুয়ারির ভোট বর্জন করা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা গত কয়েকদিন ধরে নির্বাচন প্রতিরোধের কথাও বিভিন্ন ভাবে বলে আসছিলেন।
শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধের কথা না বললেও ‘প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মানুষের’ প্রতি ভোট বর্জনের আহবান জানালো দলটি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা, উইকিপিডিয়া, বিডি২৪