দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী
আলাপচারিতা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন আজ সোমবার সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকেলে গণভবনে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তার মানে এই নয় যে গণতন্ত্র নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিন আজ সোমবার দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকেলে গণভবনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে বিবিসির সাংবাদিক সামিরা হুসেইন প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি প্রধান বিরোধী দলকে ২০১৮ সালের পর থেকে সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে গতকালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। যেখানে ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দেননি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সীমিত করা হয়েছে বলে মানবাধিকারকর্মীরা আপনার সরকারের সমালোচনা করছেন। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশে একটি গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে, যেখানে কোনো বিরোধী দল নেই?’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। সেখানে যদি কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেয়, তার মানে এই না যে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে মানুষ অংশ নিয়েছেন কি না। আপনি যে দলের (বিএনপি) কথা বলেছেন, তারা আগুন দেয়, মানুষ হত্যা করে। কিছুদিন আগে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছে। এটা কি গণতন্ত্র? এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। মানুষ এটা গ্রহণ করে না। এ ধরনের ঘটনা এ দেশে একাধিকবার ঘটেছে। আমরা ধৈর্য দেখিয়েছি। মানুষের অধিকারকে রক্ষা করতে হবে।’
বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন এবং অর্ধেকের কম ভোট পড়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যদি এখানে গণতন্ত্রের আর কোনো সংজ্ঞা থাকে, সেটা ভিন্ন। মানুষের অংশগ্রহণই বড় কথা। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি মানুষকে এ নির্বাচনে ভোট না দিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মানুষ তাদের কথা শোনেননি।
প্রধানমন্ত্রী বিবিসির সাংবাদিককে পাল্টা বলেন, বিএনপি কত মানুষ মেরেছে, সে প্রশ্ন তিনি করেননি। তারা ২০১৪-১৫ সালে যা করেছে, তাতে তাদের কীভাবে গণতান্ত্রিক দল বলা যায়? তারা সন্ত্রাসী দল এবং মানুষ তাদের সমর্থন করে না।
ভারতের টেলিগ্রাফের সাংবাদিক দেভাদ্বীপ পুরোহিতের প্রশ্ন ছিল, ‘নির্বাচন শেষ হয়েছে। আপনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তখন আপনার বিরোধী দলের প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন?’
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি কি চান আমি একটি বিরোধী দল গঠন করি? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দল গঠন করেছি। বিরোধীদেরও তা করতে হবে। আপনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিচালনাকারী ‘লৌহমানবীর’ সঙ্গে তাঁকে তুলনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ চালানো সময় পুরুষ না নারী, সে চিন্তা করা উচিত নয়। একজন নারী হিসেবে তিনি কখনোই মনে করেন না তাঁর কোনো বাধা আছে। তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। নারী একজন মা। যিনি পরিবার ও বাচ্চাদের দেখেন ও বড় করে থাকেন। মাতৃস্নেহ থেকেই তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন।
বিদেশি এক সাংবাদিক প্রধামন্ত্রীর কাছে জানতে চান, তাঁর এই বিজয় উদ্যাপনের সময় তিনি কি ড. ইউনূসকে ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন কি না? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইউনূসের বিষয়টা শ্রম আদালতের। তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বঞ্চিত এবং তাঁরা মামলা করেছেন। তিনি শ্রম আইন ভঙ্গ করেছেন, নিজের কর্মীদের বঞ্চিত করেছেন। এখানে আমার কিছু করার নেই। তাঁর ক্ষমার বিষয়ের প্রশ্ন আমার কাছে আসে না। বরং তাঁর উচিত নিজের কর্মীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি খুবই সাধারণ নারী। দেশের জনগণের জন্য দায়িত্ববোধ রয়েছে যে তাদের জন্য কাজ করতে হবে। তাদের উন্নত জীবন দিতে হবে। তিনি সেটা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ভারতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ির সুশাসন ও স্মার্ট বাংলাদেশবিষয়ক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশকে লক্ষ্য ধরে তরুণ জনগোষ্ঠীকে ভবিষ্যতের জন্য সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন।
এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) সাংবাদিক অশোকা রাজের প্রশ্ন ছিল, আগামী পাঁচ বছরের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য কী? নির্বাচনে জয়ের পরে ভারত থেকে বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে কী ধরনের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন?
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত বাংলাদেশের বড় বন্ধু। ১৯৭৫ এ তাঁর পরিবারকে হত্যার পর ভারত তাঁকে ও তাঁর বোনকে আশ্রয় দিয়েছিল। যদিও কিছু সমস্যা আছে কিন্তু সেটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করা হয়। এ ছাড়া সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের নীতি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে আসা একজন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন ভালো হয়েছে—এটা বলার জন্য ওই ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়ে পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কী বলবেন, এটা আপনার দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) চেয়ে ভালো নির্বাচন কি না?’
মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ চমৎকার। তারা তাঁর কথা শোনে। তবে কিছু বিরোধী আছে। সেটা খুব স্বাভাবিক। তিনি প্রতিশোধ পরায়ন নন। তিনি কখনো কারও ওপর প্রতিশোধ নেননি। তিনি খোলা মনের ও উদার। অনেক টিভি চ্যানেল আছে। কিন্তু সরকারের মাত্র টিভি একটি চ্যানেল। সেখানে মানুষ কথা বলছে। অনেক পত্রিকা, যারা লিখতে পারছে। সেখানে তিনি কখনোই হস্তক্ষেপ করেন না। বরং কেউ সমালোচনা করলে তা ভালো। সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এ ছাড়া বলেন, প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব সার্বভৌমত্ব থাকা উচিত।
মতবিনিময় সভায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।