রাম মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ ফেরালেন চারজন শঙ্করাচার্য,রাম মন্দির, কংগ্রেস ,ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী)
রাম মন্দির উদ্বোধনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান, কংগ্রেসের নিন্দায় সরব বিজেপি
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, কংগ্রেস দাবি করেছে, নির্বাচনে ফায়দা লুটতে রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) রাজনৈতিক প্রকল্প বানিয়ে ফেলা হয়েছে ।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের দেশের লাখ-লাখ মানুষ ভগবান রামের আরাধনা করেন। ধর্ম একেবারেই ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু, অযোধ্যায় মন্দিরের বিষয়টিকে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক প্রকল্পে পরিণত করে ফেলেছে আরএসএস এবং বিজেপি। নির্বাচনী ফায়দা লুটতে অসম্পূর্ণ রাম মন্দিরের উদ্বোধন করছেন বিজেপি এবং আরএসএস নেতারা।’
বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বলেন, ‘বেচারারা আর কোথায় যাবে? ওরা নিজেদের কথার জালে নিজেদের জালেই ফেঁসে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেন ওদের কথায় গুরুত্ব দিচ্ছেন? ওরা যদি না যায়, তাহলে নিজেরাই অনুশোচনা করবে।’
কংগ্রেস এমন একটা দিনে রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণপত্র প্রত্যাখ্যান করল, যার ঠিক আগের দিনই রাম মন্দির ইস্যুতে বিজেপিকে তোপ দেগেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার দাবি, রাম মন্দির নিয়ে রাজনৈতিক গিমিক করছে বিজেপি। তিনি বলেন, ‘কাল আমায় জিজ্ঞেস করছিল। রাম মন্দির নিয়ে আপনার কী বক্তব্য? যেন আমার আর কোনও কাজ নেই। একটাই কাজ।
ওই বিবৃতিতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ‘২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং ভগবান রামকে শ্রদ্ধা করা লাখ-লাখ মানুষের ভাবাবেগকে শ্রদ্ধা করে সম্মানজনকভাবে (রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার) আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া গান্ধী এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরী।’
১৯৯২ সালে হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা ধ্বংস হওয়া বাবরি মসজিদের জায়গায় তৈরি রাম মন্দিরের উদ্বোধনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেছেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট এই অনুষ্ঠানের জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। গত সপ্তাহে আমন্ত্রণ পত্র পাওয়ার পরে কংগ্রেস জানায়তারা প্রতিনিধি পাঠাবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিও তাদের নেতাদের পাঠাবে।
“সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি জানান, অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছি। সিপিআই(এম) এর নীতি হল ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করা এবং প্রত্যেক ব্যক্তির তাদের বিশ্বাস অনুসরণ করার অধিকার রক্ষা করা। আমরা বিশ্বাস করি রাজনৈতিক লাভের জন্য ধর্মকে একটি হাতিয়ারে রূপান্তরিত করা যাবে না। তাই, আমরা অনুষ্ঠানে যোগ দেব না।
এ ব্যাপারে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর পলিট ব্যুরো একটি বিবৃতিও দিয়েছে বলে জানান তিনি।
বিবৃতিতে বলা হয় “এটি দুর্ভাগ্যজনক যে বিজেপি এবং আরএসএস একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে একটি রাষ্ট্রীয় স্পনসরড ইভেন্টে রূপান্তরিত করেছে যাতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী, ইউপি মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তারা জড়িত। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে ভারতে শাসনের একটি মৌলিক নীতি হল যে সংবিধানের অধীনে ভারতে রাজ্যের কোনও ধর্মীয় অনুষঙ্গ থাকা উচিত নয়। অনুষ্ঠানের আয়োজনে শাসকগোষ্ঠী এটি লঙ্ঘন করছে।”
রাম মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ ফেরালেন চারজন শঙ্করাচার্য। এই তালিকায় রয়েছেন, উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষপীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী, গুজরাটের দ্বারকা, ওডিশার পুরীর গোবর্ধনপীঠ এবং কর্নাটকের শ্রীঙ্গেরির প্রধান। কিন্তু, এমন গ্র্যান্ড অনুষ্ঠানে কেন থাকবেন না হিন্দু ধর্মের প্রধান চার ধর্মগুরু?
পুরীর শঙ্করাচার্য উপস্থিত থাকবেন না রাম মন্দির উদ্বোধনে। তিনি এই অনুষ্ঠানে যোগদান করার আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেছেন।স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী জানিয়েছেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই রাম মন্দিরের উদ্বোধন করবেন, সেটাই এক্ষেত্রে একটা ফ্যাক্টর। সনাতন হিন্দুধর্মের শীর্ষ ধর্মগুরুরা মনে করছেন, মোদিই থাকবে অনুষ্ঠানের একেবারে প্রথম সারিতে। এর ফলে সনাতন শাস্ত্রের দিকটি অবহেলিত হবে। পাশাপাশি খুব তাড়াহুড়ো করে এই মন্দির উদ্বোধন হচ্ছে। মন্দির পুরোপুরি তৈরি না করেই রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা শাস্ত্রবিরুদ্ধ।
স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর আরও দাবি, মোদি সরকারের এই প্রচেষ্টা আসলে কোনও পবিত্র মন্দির নয়, এক সমাধিকে ঘিরে। এখানে রাজনীতির প্রবেশ ঘটেছে। তাই তিনি এর থেকে দূরে থাকবেন। প্রসঙ্গত, ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান। রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার সাক্ষী হিসেবে সারা দেশ থেকে উপস্থিত থাকবেন বহু সাধু-সন্ত। কিন্তু সেই উদ্বোধনে থাকবেন না চার শংকরাচার্য।
কংগ্রেস ইতিমধ্যেই এই অনুষ্ঠানে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা নিয়ে বিজেপি কংগ্রেসকে রাবনের সঙ্গে তুলনা করেছে।
এদিকে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা অলোক কুমার জানিয়েছেন, রাম মন্দিরের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন লালকৃষ্ণ আদবানি এবং মুরুলি মনোহর জোশি। তিনি আরও বলেছেন, সবার ভাগ্য রামলালার দর্শন হয় না। অলোক কুমার বলেন, “আমরা কোনও রাজনীতি করছি না। আমরা তো মামলাকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তবে যাঁরা যাচ্ছেন না, তাঁরাই রাজনীতি করছেন।” অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়া প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “সবার ভাগ্যে রামলালার দর্শন হয় না।”
তথ্য সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, এ সময়, আজকাল