ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক ।।বাংলাদেশ এবং ভারতের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা
রুহুল কুদ্দুস টিটো
ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশেরই ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষাগত, ঐতিহ্যগত এবং শিল্পকলা এবং সংস্কৃতির প্রতি আবেগ প্রায় সমরুপ এবং উক্ত বিষয়গুলোতে মিল রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দুই দেশই একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্ররুপে কাজ করেছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বাঙ্গালীদের বসবাস যারা ১৯৪৬-৪৭এর দাঙ্গার পর পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) পরিত্যাগে বাধ্য হয় এবং বাংলাদেশ পাকিস্তানের অধীনস্থ হয়েছিল।
১৯৭১ পরবর্তী ফারাক্কা বাধ, সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা , চটগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চলের বিচ্ছনতাবাদিদের ভারতীয় সাহায্য সহ বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য দুরত্ব থাকলেও বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক সার্বিক দিক দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ। দুটি দেশই একই সাথে সার্ক, বিমসটেক, আইওরা এবং কমনওয়েলথের সাধারণ সদস্য।
উভয় দেশই পরস্পরের ভৌগোলিক সীমারেখা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে অর্থনৈতিক বিনিময় বিস্তৃতকরণের মাধ্যমে দৃই দেশের মধ্যেকার এই সম্পর্ক আরও ত্বরান্বিত হয়।
বাংলাদেশের ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের হাই কমিশন অফিস এবং রাজশাহী ও সিলেটে সেক্রেটারি কমিশন অফিস রয়েছে; পাশাপাশি ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশী দূতাবাসের হাই কমিশন অফিস এবং মুম্বাই ও কোলকাতায় ডেপুটি কমিশন অফিস রয়েছে। বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের সম্মাননাস্বরুপ ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নব্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথবাক্য পাঠের অনুষ্ঠানে অন্যতম আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ২০১৪ সালের জুনে বাংলাদেশে তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফর করেন। ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে স্হলসীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে৷ ২০১৪ সালের জরিপ অনুযায়ী ৭০ শতাংশ বাংলাদেশী জনগণ ভারতের পক্ষে ইতিবাচক মত দিয়েছেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে দুই দেশই একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্ররুপে কাজ করেছে। ১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে কারণ বাংলাদেশ ইসলামিক রাজ্যগুলোর সাথে সম্পর্ক বাড়াতে থাকে এবং ওআইসির সদস্য হয় এবং পুরো বিশ্বজুড়েই বাংলাদেশ তার ইসলামিক পরিচয়কে প্রকাশে উন্মুখ হয়ে উঠে। দুই দেশেই ১৯৮০ তে নিজেদের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলতে থাকে, যা পরবর্তীতে শীতল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে রূপ নেয়।
দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উদারয়নের প্রাক্কালে তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরো উন্নয়ন হতে থাকে। ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়। সন্ত্রাস বিরোধী কর্মে বাংলাদেশ এবং ভারত কৌশলী অংশীদার হয়ে উঠে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত- বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
উভয়ের মধ্যকার বিবাদসমূহ
- ফারাক্কা বাঁধ বিষয়ক বিরোধ
- তিনবিঘা করিডোর
- শিলিগুড়ি করিডোর
- অর্থনৈতিক ট্রানজিট বিষয়ক বিরোধ
- বাংলাদেশ এবং ভারতের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা। ২০২৪ এ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গত সোমবার (২১ জানুয়ারি) ভোরে এক বিজিবি সদস্যর নিহত হওয়ার ঘটনায় দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য সামনে এসেছে।
- ভারতের সাথে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের পূর্বে দুই দেশই একই এলাকা নিজেদের বলে দাবী করেছিল।
- তিস্তা চুক্তি অমীমাংসিত
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমানায় বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য একটি অস্বস্তিকর বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বিএসএফের তথাকথিত ‘হত্যার জন্যই গুলি’ নীতির জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ২০০১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত একহাজার বাংলাদেশী মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিএসএফ প্রধান অনেক শপথ গ্রহণ করে তারা প্রতিশ্রুতবদ্ধ হয় যে, ভবিষ্যতে বিএসএফের এভাবে হত্যা বন্ধ করা হবে। কিন্তু অবৈধ ভাবে বাংলাদেশ সীমানা পাড়ি দিয়ে ভারতে যাওয়ার সময় বা ভুলক্রমে সীমানা পার করে ফেলায় ভারতীয় সেনা কর্তৃক সাধারণ বাংলাদেশী নাগরিকের হত্যা চলতেই থাকে।
অব্যাহতভাবে বিএসএফের হত্যার কারণে এবং পরবর্তী যত মৃত্যু হয় তার কারণে বাংলাদেশ রাগান্বিত হয়।ভারতীয় কর্মকর্তারা যুক্তি দেন উচ্চতর নিরাপত্তা ভারতে অবৈধ অভিবাসনের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রবাহের পাশাপাশি সীমান্তের ক্রমাগত চোরাচালান ক্রমবর্ধমান প্রবাহ অনুসরণ করেছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা সীমান্তে নিহতদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে অঙ্গীকার করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশি মৃত্যুর সংখ্যা স্থির হয়ে গেছে।
বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশের বেসামরিক নাগরিকের এভাবে হত্যার ফলে, দুই দেশের হ্যাকারদের মধ্যে তথাকথিত সাইবার যুদ্ধ শুরু হয়, যার ফলে ভারতের বিএসএফ ওয়েবসাইট, জাতীয় তথ্যকেন্দ্র এবং তৃণমূল কনগ্রেসের ওয়েবসাইটে প্রবেশ অযোগ্য ব্যবস্থা তৈরী করা হয়।এবং পুরো ভারতের সাইবার স্পেস ধ্বংস করে দেয় বাংলাদেশ।পরবর্তীতে ভারতীয় হ্যাকার রা পরাজয় মেনে নিলে সাইবার আক্রমণ বন্ধ করে বাংলাদেশ।
আগস্ট ২০২২, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ভারতকে আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান। এতে বাংলাদেশে ক্ষোভ সৃষ্টি হয় ও তাকে অপসারণের আইনি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
এর অনেক আগে ক্যাবলগেট ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ বিষয়ক তথ্য এর আগেও উঠে আসে, সেসময় ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (গোয়েন্দা সংস্থা) আওয়ামী লীগকে ও পাকিস্তানের আইএসআই (গোয়েন্দা সংস্থা) বিএনপিকে অর্থ যোগান দেয় বলে জানা যায়। ভারত ২০০১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়কে অর্থায়ন করে বলেও জানা যায়।
সাম্প্রতিক উন্নয়ন
সেপ্টেম্বর ২০১১ তে দুই দেশই ৪ দশকের পুরাতন সীমানা সমস্যা সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে। এই চুক্তির নাম তিন বিঘা করিডোর চুক্তি। ভারত বাংলাদেশী নাগরিকদের তিন বিঘা করিডোর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা যাতায়াতের পক্ষে সম্মত হয়। এছাড়াও দুই দেশ তাদের নিজ নিজ সীমানায় অবস্থিত ছিট্মহল বিনিময়ে সম্মত হয়।
২০১২ সালে বাংলাদেশ ভারতের ওয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন কর্তৃক ত্রিপুরায় নির্মানাধীন বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় ভারী মেশিন, টার্বাইন এবং কার্গো পারাপারের জন্য বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয়।[২৩]
২০১৩ সালের অক্টোবরে ভারত ৩৫ বছর মেয়াদী চুক্তি অনুযায়ী ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানী শুরু করে। ১২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বহরমপুর-ভেড়ামারা সঞ্চালন লাইন, যার ৪০ কিলোমিটার বাংলাদেশে অবস্থিত, দ্বারা দুই দেশের সাবস্টেশনকে সংযুক্ত করা হয়। দুই দেশ যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের রামপালে একটি ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ব্যপারে সম্মত হয়।
২০১৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে ভারত-পাকিস্তানের ওয়াগা সীমান্তের মত পেট্রাপোল (ভারত)-বেনাপোল (বাংলাদেশ) সীমান্ত পয়েন্টেও প্রতিদিন দিবাসমাপ্তি অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে রয়েছে প্যারেড, মার্চ-পাস্ট এবং দুই দেশের পতাকা অবনমন।
৭ মে ২০১৫ ভারতীয় সংসদ, বাংলাদেশী কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে, সর্বসম্মতভাবে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থলসীমানা চুক্তি অনুমোদন করে যা ভারতীয় সংবিধানের ১০০তম সংশোধনী। এর ফলে দুই দেশের সীমানা নিয়ে ৬৮ বছরের বিবাদ শেষ হয়।
২০১৪ সালের জুনে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরে, ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য নিম্নোক্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ঃ
- বাংলাদেশের ১৩ বছরের নিচের ও ৬৫ বছরের ওপরের বয়সের নাগরিকদের পাঁচ বছরের জন্য মাল্টিপল পর্যটক ভিসা দিতে রাজি হয় ভারত
- বাংলাদেশে ভারতের অর্থনৈতিক এলাকা স্থাপন
- খুনের অভিযোগপ্রাপ্ত কোনো আসামী ভারতে পালিয়ে থাকলে তাকে স্থানান্তর।
- ত্রিপুরা থেকে অতিরিক্ত ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনয়ন।
- মৈত্রী এক্সপ্রেস এর সময় বাড়ানো এবং ঢাকা, গুয়াহাটি ও শিলং এর মধ্যে বাস যাতায়াতের ব্যবস্থাকরণ
- বাংলাদেশ তার ভূমি ও অবকাঠামো ব্যবহার করে ভূমিবেষ্টিত উত্তর-পূর্ব ভারত এ খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুমতি দেয়।
২০১৫ সালের জুনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে সফর করেন এবং দুই দেশের মধ্যে ২২ টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০ কোটি ডলারের ঋণ বিষয়ক সমঝোতা হয়, ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশে একটি ৩ হাজার মেগাওয়াটের এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়। আদানি পাওয়ার ১৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগে একটি ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করবে।দুই দেশ মোট ২২টি চুক্তি স্বাক্ষর করে যার মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, মানব পাচার ও জাল মুদ্রা রোধ।
৩১ জুলাই ২০১৫ এর মধ্যরাতে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ৫০,০০০ বিচ্ছিন্ন নাগরিক, যাদের কোনো জাতীয়তার পরিচয়ই ছিল না, তারা ভারত অথবা বাংলাদেশের নাগরিক হন। এই বিনিময়ের মাধ্যমে দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই বিনিময় ছিটমহলের বাসিন্দাদের সুযোগ করে দেয়, যারা যে দেশের ভিতরে আছে, সেই দেশেই থাকতে পারবে অথবা চাইলে পাশের দেশের নাগরিক হয়ে যেতে পারবে। ভারতের ভিতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহলের বাসিন্দার সংখ্যা ছিল ১৪,২১৪ জন যাদের সবাই ভারতেই থেকে যায় ভারতীয় নাগরিক হিসেবে। আর বাংলাদেশের ভিতরে থাকা ভারতের ১১১ টি ছিটমহলের প্রায় ৪১ হাজার অধিবাসীর অধিকাংশ বাংলাদেশেই থেকে যায়, শুধুমাত্র ৯৭৯ জন ভারতে স্থানান্তরিত হয়। ফলে ভারতের নব্য নাগরিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫,১৯৩ তে আর বাংলাদেশের নতুন নাগরিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৪৪৯ জন। এই বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ পায় ১৭ হাজার ২৫৮ একর এবং ভারত পায় ৭ হাজার ১১০ একর ভূমি।
২০১৮ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৩০ কিমি দীর্ঘ “ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন” উদ্বোধন করেন। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ৪ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল বাংলাদেশে ভারত থেকে পাঠানো হবে। সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করে, যার ফলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে।
দুই দেশের মধ্যে ৭০০ কোটির বাণিজ্য হয়। এই বাণিজ্য বন্দরের মাধ্যমে ১০০০ কোটিতে গিয়ে পৌছে।[৪২] দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ২০১৩-১৪ সালে ভারত বাংলাদেশের ব্যবসা হয় ৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এবং যেখানে ভারত রপ্তানি খাত থেকে আয় করে ৬১০ কোটি মার্কিন ডলার আর বাংলাদেশ আয় করে ৪৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাঁচ বছর পুর্বে এই ব্যবসা ছিল ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের যা বর্তমানে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা ভারতের সাথে বাণিজ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত ব্যবস্থা নতুন করে তৈরী করে, যার ফলে উভয় দেশই দুই দেশের স্থল ও জলপথ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে দ্রব্য পাঠাতে পারবে। এর ফলে আঞ্চলিক সীমানা কোনো বাধা তৈরী করবে না। এই চুক্তির কারণে ভারত মায়ানমারে বাংলাদেশের মাধ্যমে দ্রব্য রপ্তানী করতে পারবে। এটি এমন এক বিধান তৈরী করেছে; যার ফলে যদি না কোনো দেশের আপত্তি থাকে তবে এই ব্যবস্থা ৫ বছর পরেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহাল থাকবে।
এপ্রিল ২০১৭ তে শেখ হাসিনার নয়াদিল্লীতে চারদিনের সফরে বাংলাদেশ ভারত দুইটি সামরিক চুক্তি সই করে। ভারতের সাথে ভিন্ন কোনো দেশের সামরিক চুক্তি এটিই প্রথম ছিল। এই চুক্তি অনুসারে দুই দেশ যুগ্মভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মহড়া আয়োজন করবে। ভারত বাংলাদেশকে উভয় দেশই ব্যবহার করে এমন প্রতিরক্ষা পণ্য নির্মাণ ও মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মানে সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও রসদ সরবরাহ করবে। ভারত প্রথমবারের মত সামরিক খাতে অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদান করতে সম্মত হয়।
রাষ্ট্রপতি এরশাদ ১৯৮২ সালে ভারতে সফর করেন। শেখ হাসিনা বিভিন্ন চুক্তি সই করার নিমিত্তে ২০১০ সালে ভারত সফর করেন।মনমোহন সিং ২০১১ সালে সফর করেন এবং একাধিক চুক্তি সই করেন।
নরেন্দ্র মোদী ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক সফর করেন, এই সফরের মাধ্যমেই সীমানা নির্ধারণ সমস্যার মীমাংসা হয়।বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সফর করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা হয়।
তথ্যসুত্র : উইকিপিডিয়া