জীবনের প্রতিটি সকাল প্রতিটি দিনই মানবের জন্য কল্যাণকর
আলাপচারিতা
আল্লাহ তাআলা সর্বোৎকৃষ্ট সৃজনশীলতার অধিকারী এবং পাখি তাঁর এক আশ্চর্য সৃষ্টি। পরম করুণাময় আল্লহ পাকের দান প্রতিটি দিনের নতুন সকালেই কল্যাণের ফুল ফোটে, পাখিরা কল্যাণের খোঁজে ছোটে, তাদের ঠোঁটে মহামহীয়ান আল্লাহর তাসবিহ রব ওঠে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কি তাদের ওপরের দিকে পাখিগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে না, যারা ডানা মেলে ধরে আবার গুটিয়ে নেয় তথা ডানা ঝাপটিয়ে ওড়ে? দয়াময় ছাড়া অন্য কেউই তাদের স্থির রাখেন না। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছুর সম্যক দ্রষ্টা।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ১৯)
‘তারা কি আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিদের দিকে লক্ষ্য করে না? আল্লাহই ওদের স্থির রাখেন। অবশ্যই এতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে শিক্ষা।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৭৯)
জীবনের প্রতিটি সকাল প্রতিটি দিনই মানবের জন্য কল্যাণকর। মুমিনের প্রতিটি দিন তাকে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে অগ্রগামী হতে সাহায্য করে। সকল মুমিনগণ মহান আল্লাহপাক কে সালাতে সিজদা করার মাধ্যমে সেদিনের যাবতীয় কল্যাণের দ্বার উন্মোচিত করতে মসজিদের দিকে ছুটে যায়। মহান আল্লাহ রাত ও দিনের আবর্তন তাঁর বান্দাদের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি রাত ও দিনকে করেছি দুটি নিদর্শন।
আল্লাহপাক রব্বুল আলআমিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,
অতঃপর মুছে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকময়, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং যাতে তোমরা বর্ষসংখ্যা ও হিসাব জানতে পারো। আর আমি প্রত্যেক বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১২)
ঈমান ও আমল ভালো যার, তার জীবনের প্রতিটি দিন তার আমল ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে। প্রতিটি নতুন সকালে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে রিজিক বণ্টন করেন, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর। অবিশ্বাসীর জন্য প্রতিটি দিন তাকে পাপের পথ থেকে তাওবা করে মহান আল্লাহ কাছে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়।
নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে বলেছেন, মা মণি! ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মধ্যে রিজিক বণ্টন করে থাকেন। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ২৬১৬)
মুমিনের প্রতিটি দিন তাকে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে অগ্রগামী হতে সাহায্য করে।
অনেক মানুষ কল্যাণের পথে অগ্রগামী হওয়ার এ সুযোগ যারা হাতছাড়া করে ফেলে, যারা মহান আল্লাহর দেওয়া সোনালি জীবনকে নাফরমানিতে কাটিয়ে দেয়, তাদের জন্য প্রতিটি সকাল জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একেকটি অগ্নিদরজা মাত্র।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু বকর (রা.) বলেন, কোনো এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে।
সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে কে নিকৃষ্ট? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩০)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিন লোকের বয়স তার কল্যাণই বাড়িয়ে থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭১২)
‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় তুমি যাকে আগুনে প্রবেশ করাবে, অবশ্যই তাকে তুমি অপমান করবে। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই’। আল-বায়ান
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা এক আহবায়ককে ঈমানের দিকে আহবান করতে শুনেছি যে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনো।’ সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। অতএব হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা কর, আমাদের মন্দ কার্যসমূহ গোপন কর এবং মৃত্যুর পর আমাদেরকে পুণ্যবানদের সাথে মিলিত কর।
‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা শুনেছিলাম একজন আহবানকারীকে, যে ঈমানের দিকে আহবান করে যে, ‘তোমরা তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আন’। তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং বিদূরিত করুন আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, আর আমাদেরকে মৃত্যু দিন নেককারদের সাথে’। আল-বায়ান