নৌকা নিয়ে যারা হেরেছেন
নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন কিন্তু জিততে পারেনি এমন পরিচিত নেতাদের মধ্যে আছেন বিগত সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।
এছাড়া আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া , টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী পরাজিত হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘পরিচিত মুখ’ সৈয়দ সায়েদুল হকের কাছে। যিনি সামাজিক মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমন হিসেবে বেশি পরিচিত।
হাসানুল হক ইনু। জাতীয়ভাবে হেভিওয়েট নেতা। তার দল জাসদ হলেও নির্বাচন করেছেন নৌকা প্রতীকে। কুষ্টিয়া-২ আসনের তিনবারেরর সংসদ সদস্য তিনি। তাকে ২৩ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন।
এবারের নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আলোচিত ছিলেন বরগুনা-১ আসনে (সদর-আমতলী-তালতলী) আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ (শম্ভু)। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য।এবার তাঁকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার।
ঢাকা-১৯ আসনে (সাভার ও আমিনবাজারের একাংশ) ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুর রহমান পরাজিত হয়েছেন।
মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোসা. তাহমিনা বেগম।
মুন্সিগঞ্জ-৩ (মুন্সিগঞ্জ সদর-গজারিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস হেরেছেন।
ফরিদপুর-৪ : এই আসনে টানা তৃতীয়বারের মতো হেরেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাফর উল্যাহ। তিনি এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো–চেয়ারম্যান ছিলেন।
তাকে টানা তৃতীয়বার হারালেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান, যিনি নিক্সন চৌধুরী নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত।
নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেলেও তিনি এর আগে দুইবার বিদ্রোহী এবং এবার স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হলেন।
তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার। শেখ মুজিবের পরিবারের আত্মীয়। শেখ মুজিবের বড় বোন ফাতেমা বেগমের নাতি তিনি। নিক্সনের বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী মাদারীপুরের শিবচরের সংসদ সদস্য ছিলেন।
আর তার ভাই নূরে আলম চৌধুরী জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ।
মানিকগঞ্জ-২ : এই আসনে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন তিনবারের সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।
এই আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু।
দেওয়ান জাহিদ আহমেদ একজন শিল্পপতি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। এলাকায় সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িত ছিলেন।
তবে এই প্রথমবারের মতো তিনি সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচিতও হলেন।
যশোর ৫ : যশোরে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যও এবার ভোটে জিততে পারেননি। তিনি হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলীর কাছে।
ইয়াকুব আলী জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়েই তিনি পরাজিত করেছেন টানা দুইবারের সংসদ সদস্যকে।
নেত্রকোনা-৩ : (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে পরাজিত হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। সেখানে দুই হাজারের কিছু বেশি ভোটে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার।
ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার সাবেক সংসদ সদস্য। পেশায় ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
গাজীপুর-৫ : এই আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ পরাজিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামানের কাছে। আখতারুজ্জামান ডাকসুর সাবেক ভিপি। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।
তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ১৯৯৬ সালের নির্বাচন তিনি এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। দুই যুগেরও বেশি সময় পর আবারো তিনি সংসদে ফিরলেন।
এর বাইরে আরো বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় প্রতীক নৌকায় নির্বাচন করেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা