ভাল ভোগ আর খারাপ ভোগ এই দুই চেহারা সংস্কৃত নাটকে দেখানো হয়েছিল। বিবেকানন্দ ভাল ভোগের সূত্রে সংস্কৃত সাহিত্যের উদাহরণ দিয়েছিলেন। শূদ্রকের মৃচ্ছকটিক নাটকের কথা মনে পড়বে। সেখানে বসন্তোৎসবের দিন বারাঙ্গনা বসন্তসেনা বনের মধ্য দিয়ে ফিরছেন। আঁধার নেমেছে। একা পেয়ে তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করলেন। রাজার শ্যালক ও তাঁর সহচর। বসন্তসেনা তাদের বলেছেন, নারী বলের নয়, গুণের অধিকারী। এই নাটকে অভদ্র রাজ-শ্যালকের কথাই ছিল না, ভদ্র বণিক চারুদত্তের কথাও ছিল। চারুদত্তের গুণের অনুরাগী বসন্তসেনা। পুরনো ভারতে মনুর আচারের বাইরে ভোগের যে ভব্য-ভদ্র রূপকল্পনার নানা উপাদান ছিল, বিবেকানন্দ বোধহয় সেটাই তাঁর শিষ্যকে পাশ্চাত্য সভ্যতার সূত্রে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী। ভোগের দর্শন প্রচার তাঁর পরম-উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু দত্ত পরিবারের এই সুশিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান ছেলেটি জানতেন রাজ্যসুদ্ধ সবাই মোটেই সন্ন্যাসী হয়ে যাবে না। তবে গৃহী হলে আদর্শ ভদ্র গৃহী হওয়া চাই। উপার্জনে, উদ্যমে, ভোগে আপত্তি নেই, তবে যেন তা উৎকৃষ্ট হয়। ইদানীং বাসে-ট্রামে, রাস্তায়-ঘাটে অশিষ্ট, মেয়ে পেলেই খাবলাখাবলি করতে চাওয়া যুবা পুরুষদের দেখলে মনে হয়, মৃচ্ছকটিক নাটকের পরজীবী রাজ-শ্যালকের মতো ত্যাগ করতে না শিখুক, সম্মান ও আত্মমর্যাদা বজায় রেখে উৎকৃষ্ট ভাবে ভোগ করতেও যদি শিখত!
বিশ্বভারতীতে বাংলার শিক্ষক
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা