ডাক পায়নি বাংলাদেশ
সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, মিশর এবং ইথিওপিয়াকে নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিকস জোটে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ব্রিকস সম্মেলনের শেষ দিনে ছয়টি দেশকে ব্রিকসের পূর্ণ সদস্য হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় বলে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, নতুন দেশগুলোর সদস্যপদ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন এর প্রতিবেদনে মি. রামাফোসাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “আমরা আর্জেন্টিনা রিপাবলিক, আরব প্রজাতন্ত্র মিশর, গণপ্রজাতন্ত্রী ইথিওপিয়া, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ব্রিকসের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।”
এর আগে ২২শে অগাস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকসের সম্মেলন শুরু হয়।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী নালেডি প্যানডরের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিকস নেতারা নতুন সদস্য যুক্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত ৪০টিরও বেশি দেশ এই জোটে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ২২টি দেশ যুক্ত হওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে।
বাংলাদেশও এই জোটে যোগ দিতে পারে বলে এর আগে আভাস পাওয়া গেলেও নতুন ছয়টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২শে অগাস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা যান।
এ বছর জুনের মাঝামাঝি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, অগাস্টে বাংলাদেশ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট -ব্রিকসের সদস্য পদ লাভ করতে পারে।
সেসময় তিনি বলেছিলেন, “ব্রিকস ব্যাংক সম্প্রতি বাংলাদেশকে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ব্যাংকে আমাদের সদস্য করেছে৷ আগামীতে তারা ব্রিকসে বাংলাদেশকে সদস্য করবে, আগস্ট মাসে ওদের সম্মেলন আছে৷ প্রধানমন্ত্রী ইনশাল্লাহ সেখানে যাবেন৷”
তবে সর্বশেষ নতুন সদস্য দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্ত না হওয়া নিয়ে এখনো কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি বাংলাদেশ।
ব্রিকস হল উদীয়মান অর্থনীতির পাঁচটি দেশ– ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং সাউথ আফ্রিকার প্রথম অক্ষরের সমন্বয়ে নামকরণ করা একটি জোট।
সবশেষ ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত হবার পূর্বে এই সঙ্ঘটি “ব্রিক” নামে পরিচিত ছিল।
ভারতের গবেষণা প্রতিষ্ঠা অবজারভার ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যা, আয়তন এবং অর্থনৈতিক আকারের দিক থেকে ব্রিকস জোট বর্তমান বিশ্বের একটি বড় শক্তি।
২০১৪ সালের হিসেবে, ব্রিকসের পাঁচটি সদস্য দেশে প্রায় ৩২০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ।
এই পাঁচ দেশ পৃথিবীর ২৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং বৈশ্বিক জিডিপি’র প্রায় ২৫ শতাংশও এ দেশগুলোর।
এমনকি বর্তমানে ব্রিকস সম্মিলিতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৪৩ শতাংশ (আট ট্রিলিয়ন ডলার) নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের যত পণ্যসেবা উৎপাদন হয় তার ২১ শতাংশ আসে এই পাঁচটি দেশ থেকে।
ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো বেশ আগে থেকেই নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন, ব্রিকস মুদ্রা প্রবর্তন এবং নিজস্ব রিজার্ভের কথা বলে আসছে।
এটি কার্যকর হলে ব্রিকস দেশগুলো তাদের নিজেদের মুদ্রায় ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। এতে ডলারে নির্ভরতা কমবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা।
তবে এই জোটে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে জোটভুক্ত কিছু দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ততটা মসৃণ না।