দুইদিনের ঘটনাবহুল সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
৩৩ বছর পরে ফ্রান্সের কোনও প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করলেন। তবে ১৯৯০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ মিতেরার ঢাকা সফরের সঙ্গে ম্যাক্রোঁর সফরের তুলনা করা যায় না। ওই সময়ে বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সফরটি। কিন্তু এবারে দুইদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে কৌশলগত স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধনের সূচনা করেছিলেন তা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।’
শেখ হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘আজ ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক দিন যা পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিকশিত হচ্ছে।’
এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
দুই নেতার উপস্থিতিতে দুইটি চুক্তিও সই হয়।
ভারতের নয়া দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রোববার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছেন ম্যাখোঁ।
এটি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর প্রথম বাংলাদেশ সফর।এরআগে প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ ১৯৯০ সালের ২০-২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন।
এবারে ম্যাক্রোঁর সফরটি প্রটোকলের দিক থেকেও কিছুটা ভিন্ন ছিল। জাঁকজমকের পাশাপাশি এবার বাংলাদেশকে কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করেছেন। এজন্য ধানমন্ডি লেকে হেঁটেছেন, শিল্পী রাহুল আনন্দের বাসায় গিয়েছেন, গান শুনেছেন এবং একতারা বাজানোর চেষ্টা করেছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঢাকার ধানমন্ডিতে সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বাদ্যযন্ত্রী রাহুল আনন্দের বাসায় সময় কাটালেন। রাহুলের স্টুডিওতে বসে তিনি গান শুনেছেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রসঙ্গে জেনেছেন। সেই সঙ্গে উপহার দিয়েছেন ও পেয়েছেন।
গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে রাহুল আনন্দের বাসায় হাজির হন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বাংলার লোক-ঐতিহ্যের আবহে ডুবে ছিলেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে প্রথমে ফকির লালন সাঁইয়ের ‘আর কি বসবো এমন সাধুর সাধবাজারে/না জানি কোন সময় কোন দশা ঘটে আমারে’ গেয়ে শোনান রাহুল আনন্দ। এরপর তিনি পরিবেশন করেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলায় গান গাই’।
গান পরিবেশন শেষে রাহুল আনন্দ বলেন, ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আপনার এই আগমন আমাদের দেশের জন্য, আমার পরিবার ও বন্ধুদের জন্য বিরাট আনন্দের।’
রাহুল আনন্দ যে একতারা বাজিয়ে গান গেয়েছেন সেটি উপহার দেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে। তিনি সেটি হাতে পেয়ে বাজানোর চেষ্টা করেন। মরমী শিল্পী আব্দুল আলীমের ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা’ গানটি গাইতে গাইতে রাহুল তাকে দেখিয়ে দেন কীভাবে বাজাতে হবে। তারপর দুই জন একসঙ্গে একতারা বাজাতে থাকেন। রাহুল বলেন, ‘এই পরিবেশনাকে বলতে পারেন বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের দুই সংগীতশিল্পীর সম্মিলন! প্রেসিডেন্ট হলেও আপনি দারুণ সংগীতশিল্পী।’
আবার বাংলাদেশের চিরায়ত সৌন্দর্য দেখতে তুরাগ নদে নৌভ্রমণও করেছেন ।
দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পরে সন্ধ্যায় যৌথ বিবৃতিও প্রকাশ পেয়েছে যেখানে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন, বাসস